খামার মালিকের চাপে দিনে দুটি করে ডিম পাড়ছে মুরগিরা

ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর এক খামারি মুরগির শেডে ঢুকলেন হাতে চাকু নিয়ে
ছবি: পেক্সেলস

ফেসবুকের বাজারে হাজার রকম কথা শোনা যায়। সেদিন দেখলাম, একজন লিখেছেন, ‘পানির দামে ডিম কিনতে পাওয়া যাচ্ছে!’

নিচে একজন কমেন্ট করলেন, ‘ফিল্টারের পানি নাকি কলের পানি?’

আরেকজনের মন্তব্য, ‘আরে ভাই, ২৫০ এমএল বোতলজাত পানির দামে।’

এবার এক চাচা মিয়া খেপে গিয়ে রাগের ইমোসহ কমেন্ট করলেন, ‘২৫০ এমএল পানির দাম তো ২০ টাকা!’

পোস্টদাতা পেলেন মোক্ষম জবাবের সুযোগ। ফটাফট কমেন্টের উত্তরে লিখলেন, ‘মাই গড! তার মানে পানির চেয়েও কম দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে!’

দুই.

অনলাইন নিউজ পোর্টালওয়ালাদের হয়েছে বিপদ। ক্ষণে ক্ষণে ডিমের খবর না দিয়ে উপায় নেই। বুম নিয়ে দুম করে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে যান কেউ কেউ, ‘দর্শক, আমরা এই মুহূর্তে আছি অমুক মুরগির খামারে। মুরগি ডিম পাড়তে বসেছে। ডিম পাড়া হলেই খামারমালিকের সাক্ষাৎকার নেব। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’

বাথরুম থেকে হো হো হাসির শব্দ আসছে। স্ত্রী বাইরে থেকে জানতে চাইলেন, ‘কী হয়েছে?’

স্বামী বললেন, ‘লাইভ দেখছি। তাঁরা বলছেন সঙ্গে থাকতে। তাঁরা কি জানেন, আমি এখন কোথায়! হা হা হা!’

‘হইছে! বাইর হইয়া খ্যাক খ্যাক কইরেন!’ বলেই স্ত্রী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান। ছেলেকে ডিম পোচ করে দিতে হবে। নাশতা করবে।

তিন.

নাশতার কথায় মনে পড়ল সামির মুখটা। ফ্রিল্যান্সিং করে পাশের বাসার সামি। রাত জেগে কাজ করতে হয় বিদেশি ক্লায়েন্টের সময় মিলিয়ে। ঘুম থেকে উঠে দেখে ১০টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বাসার কাছের এক রেস্তোরাঁয় ঢুকল সকালের নাশতা করতে। বেয়ারাকে ডেকে বলল, ‘ডিম আর পরোটা দাও।’

বেয়ারা: কিসের ডিম খাবেন, স্যার?

সামি: কিসের ডিম আছে?

বেয়ারা: মুরগি, হাঁস, কবুতর, কোয়েল...।

সামি: মুরগির ডিমই দাও।

বেয়ারা: কী মুরগি?

সামি: মানে?

বেয়ারা: মানে দেশি মুরগি, ফার্মের মুরগি, পাহাড়ি মুরগি...।

সামি: মাই গড! ঠিক আছে, দেশি মুরগির ডিমই দাও। তাড়াতাড়ি করো, খিদায় পেটের অবস্থা...।

বেয়ারা: কীভাবে খাবেন?

সামি: মানে? মুখ দিয়ে খাব রে মামা!

বেয়ারা: আরে মামা, আমি বলছি বয়েল খাবেন নাকি পোচ খাবেন? নাকি মামলেট খাবেন?

সামি: মামলেটই দাও।

বেয়ারা: ডিম ভাজাটা হালকা হবে না কড়া?

সামি: কড়াই করো। যাও যাও।

বেয়ারা: ঝাল কেমন হবে? কম না বেশি?

এবার ঝালটা বেয়ারার ওপরই ঝাড়তে শুরু করল সামি, ‘এত বকর বকর শুরু করলা কেন? একটা ডিম ভাজি আর পরোটা আনবা। আর তুমি আইছো সোনারগাঁ হোটেলের মেন্যু নিয়া। আরে মামা, সোনারগাঁ হোটেলের পেছনে লেক পাড়ে তোমার হোটেল, তাই বলে সোনারগাঁ তো আর না। খামুই না আজকে। মেজাজটাই খারাপ করে দিলা। গেলাম।’ বলেই হনহন করে বেরিয়ে পড়ল সামি।

চার.

দিলু রোডের মুদিদোকানে দাঁড়িয়ে আছেন লোপা খালা। আমাদের ল্যান্ড লর্ড। দোকানদারের ওপর কিছুটা বিরক্ত। জিনিসপত্র নেওয়া শেষ। কিন্তু দোকানদার ডিম দিতে দেরি করছেন। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘আর কতক্ষণ লাগবে?’

দোকানদার: এই তো আর পাঁচ মিনিট।

লোপা খালা: আপনি কাস্টমার দাঁড় করাইয়া মোবাইল দেখতেছেন কেন? আমার তো সময়ের দাম আছে, নাকি?

দোকানদার: তা তো আছেই। তবে আমি মোবাইলও সেই দামের জন্য দেখতাছি।

লোপা খালা: মানে?

দোকানদার: মানে অনলাইন পোর্টালের নিউজ দেখি। এই মুহূর্তের দাম কত। আর মোবাইলে এসএমএস আসছে কি না, সেটাও চেক করলাম।

লোপা খালা: ওহ্, ডিমের সর্বশেষ দাম রাখার পাঁয়তারা করতেছেন?

দোকানদার: কী যে কন, আপা! এটা পাঁয়তারা হবে কেন? ব্যবসা বলেন, ব্যবসা!

লোপা খালা: হইছে, এবার ব্যবসার হিসাবটা শেষ করেন, আমি যাব।

দোকানদার: এই যে দেখলাম। এর মধ্যেই ১০ ট্যাকা বাড়ছে।

পাঁচ.

ডিমের দাম কমানো নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই। অবশ্য মাথাব্যথা না থাকাই ভালো। মাথাব্যথা খুবই খারাপ জিনিস। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর এক খামারি মুরগির শেডে ঢুকলেন হাতে চাকু নিয়ে। শুনিয়ে দিলেন কিছু কড়া কথা, ‘বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। এই যে তোমরা বেলায় কুটকুট কইরা ফিড খাইতাছ, এর দামও কিন্তু চড়া। তাই ঠিক করছি, কাইলকা থেকে প্রতিটি মুরগিকে দুইটা করে ডিম পাড়তে হবে। কথাটা যে মানবে না, তাকে রোস্ট করে খাওয়া হবে। সুতরাং বি কেয়ারফুল...!’

মালিক বের হয়ে যাওয়ার পর মুরগিগুলোর মধ্যে শোরগোল পড়ে গেল। একটা মুরগি বলল, ‘ক্যামনে কী! প্রতিদিন দুইটা ডিম ক্যামনে পাড়মু?’

আরেকটি মুরগি বলল, ‘এটা মগের মুল্লুক নি?’

আরেক মুরগি পাশ থেকে বলে উঠল, ‘য্যামনেই হোক চেষ্টা তো করতেই হবে। না হইলে জানটা যাইব!’

দুশ্চিন্তায় অনেক মুরগির ঘুমও হলো না ঠিকমতো। পরদিন সকালে খামারের মালিক এসে দেখেন, সব মুরগি দুইটা করে ডিম পেড়েছে। দারুণ খুশিতে হাঁটতে হাঁটতে একটা খোপে চোখ আটকে গেল খামার মালিকের। মাত্র একটা ডিম! হোয়াই? মুরগিটা কাঁচুমাচু মুখে বলল, ‘স্যার, বহু কষ্টে ডিমটা পাড়ছি! আমারে মাইরেন না! আমি আসলে মোরগ...!’

আরও পড়ুন