দলে মেসি-রামোসের মতো মুরব্বি থাকার পরও এমবাপ্পে-নেইমারের বেয়াদবি দেখে সুদূর বাংলাদেশে বসেও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বড় ভাইদের। পরদেশি খেলোয়াড়েরা বেয়াদবি করছেন, রক্তক্ষরণটা ঠিক এ কারণে হচ্ছে না। বরং তাঁদের ‘ম্যানার’ শেখাতে না পারার কষ্ট থেকেই হৃদয়ের এই অহেতুক রক্তক্ষরণের সূত্রপাত।
‘এসব বেয়াদবকে সঠিক পথে নিয়ে আসাই আমাদের মতো বড় ভাইদের কাজ। আজ যদি পিএসজিতে আমাদের মতো কোনো বড় ভাই থাকত, তাহলে এই পিচ্চি দুইটা সাধারণ একটা পেনাল্টি নিয়ে এত ধাক্কাধাক্কি করার সাহস পেত না। নাসের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ওখানে পিএসজিতে আমাদের একটা কমিটি দেব ভাবছি।’ আদুভাই হলের বড় ভাই স্টারবয় সেন্টু এভাবেই নিজের অভিমত জানালেন এমবাপ্পে-নেইমারের মধ্যে চলমান রেষারেষি নিয়ে।
এক গোপন ও ভিত্তিহীন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র মানুষদের মধ্যে ৯০ ভাগই বাংলাদেশে বাস করে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষক দল রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যায়। তারা জানতে পারে, এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা ‘সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রদের ম্যানার শেখানো’র সংস্কৃতিই নাকি ভদ্র মানুষ উৎপাদনে পৃথিবীতে বাংলাদেশকে প্রথম স্থানে নিয়ে এসেছে।
জাপানের মানুষদের বলা হতো পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র জাতি। কিন্তু এই ভদ্র জাপানি জাতি গঠনের পেছনেও নাকি পুরোটাই বাংলাদেশের ভার্সিটির বড় ভাইদের অবদান! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানিদের ভদ্রতা শেখাতে সেখানে চলে যান এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শত শত বড় ভাই। গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে ম্যানার শিখিয়ে ভদ্র বানিয়ে তবেই জাপান ছেড়েছেন তাঁরা। গবেষণায় এমন অজানা তথ্যই জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গবেষক দলের প্রধান লায়ার লাল্লু বলেন, এ দেশের ম্যানার শেখানো ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা পৃথিবীর জন্য এক অমূল্য সম্পদ। যুদ্ধবাজ আমেরিকা এবং ইউরোপকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য দ্রুতই সেখানে কয়েকজন বড় ভাইকে পাঠাতে পারলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়ে উঠত।
এদিকে ম্যানারলেস নেইমার ও এমবাপ্পেকে দ্রুতই ম্যানার শেখানোর জন্য ফ্রান্সে যেতে প্রস্তুত ‘নাম বললে চাকরি থাকবে না বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ‘বৃদ্ধাশ্রম’ হলের ২০ জন বড় ভাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ বছর ধরে হলে গেস্টরুমে ছাত্রদের ম্যানার শেখাতে শেখাতে তীব্র অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। নিজেদের পড়ালেখার চেয়ে অন্য ছাত্রদের ম্যানার শেখানোতেই তাঁদের মনোযোগ বেশি। মনোযোগ এতটাই বেশি যে এক দশক আগে নিজেদের ছাত্রত্ব গত হয়েছে, সেটা এখনো টের পাননি কেউই।
পলাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুমবিষয়ক সম্পাদক জেন্টল জনি নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ব্যবহার দিন দিন খারাপ তো হচ্ছেই, এখন দেখি সুপরিচিত খেলোয়াড়দেরও ব্যবহার খারাপ হচ্ছে দিন দিন। ফরাসি লিগ আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলব আমরা। প্রতিটি দলের খেলোয়াড়দের যাতে রাত ১০টার পর আমাদের কাছে গেস্টরুমে পাঠায়, সে ব্যাপারে অনুরোধ করব তাদের। এভাবে এক দিন প্রিমিয়ার লিগ, লালিগা, বুন্দেসলিগা, সিরি-আসহ অন্যান্য লিগেও আমাদের দেশের ভার্সিটির ম্যানার শেখানো বড় ভাইদের কমিটি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
‘একটু থামুন’–এর গোপন সাংবাদিক এমবাপ্পে-নেইমারের সব শেষ অবস্থা জানতে চেয়ে মেসিকে ফেসবুকে মেসেজ দিলে রিপ্লাইয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ম্যানার শেখাতে বড় ভাইয়েরা ফ্রান্সে আসছেন শুনেই অনেকটা ভদ্র হয়ে গেছে এমবাপ্পে-নেইমার। আমিসহ অন্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের এখন দেখামাত্রই সালাম দেওয়াসহ হ্যান্ডশেকও করছে নিয়মিত। স্যালুট, বাংলাদেশের ভার্সিটির এসব বড় ভাইদের। মন চাইছে নিজের সব ব্যালন ডি’অর এসব মানবতার ফেরিওয়ালাদের মুখে ছুড়ে মারি।’