দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে শুরু হয় নতুন এক ‘যুদ্ধ’। স্নায়ুযুদ্ধ নামক রক্তপাতহীন নিরস্ত্র এ যুদ্ধের দুই পক্ষ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুই মিত্রশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্নায়ুযুদ্ধের রণক্ষেত্র বিস্তৃত হয়ে পৃথিবী ছাড়িয়ে চলে যায় মহাশূন্যে। পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পরাজিত করার চেষ্টা করে। ১৯৫৭ সালের আজকের এই দিনে মহাশূন্যে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুতনিক ১’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ ‘জয়’ পায় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
স্পুতনিক শব্দের মূল অর্থ ‘সহযাত্রী’, আধুনিক রুশ ভাষায় শব্দটি একসময় উপগ্রহের সমার্থক হয়ে ওঠে। কাজাখস্তানের টিউরাটাম উৎক্ষেপণস্থল থেকে রাত ১০টা ২৯ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা স্পুতনিকই প্রথম মানবসৃষ্ট কোনো যন্ত্র, যা অভিকর্ষ বলের বাইরে গিয়ে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। একটা ভলিবলের সমান এবং ৮৩ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের স্পুতনিক ৯৬ মিনিট ২ সেকেন্ডে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে থাকে।
নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমণকালে এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার। কৃত্রিম উপগ্রহটির কার্যকাল ছিল মাত্র ৩ সপ্তাহ। এই ৩ সপ্তাহে এটি পৃথিবীকে ১ হাজার ৪৪০ বার আবর্তন করে। আবর্তনের সময় পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহটি সর্বনিম্ন ২১৫ এবং সর্বোচ্চ ৯৩৯ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করত।
মূলত বায়ুমণ্ডলের তথ্য সংগ্রহের জন্য উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হয়। এর সঙ্গে লাগানো চারটি অ্যানটেনার সাহায্যে এটি বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের কাজটি করত। ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৬ অক্টোবর থেকে এটি তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তবে এরপরও এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রায় ৩ মাস অবস্থান করে। পরে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে ধ্বংস হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো, সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের পর পৃথিবী থেকে দূরবিনের সাহায্যে স্পুতনিককে দেখা যেত।
১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার উৎক্ষেপণ করে। এতে স্নায়ুযুদ্ধে সমতা এলেও প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী দেশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যায় স্বর্ণাক্ষরে। ১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে পদার্পণ করার মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধে অনেকটা এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।