অবরোধ-হরতাল দুটি ভাই
অবরোধ ও হরতাল আমরা দুই ভাই। আমাদের নাম শুনলেই সবাই ভয় পায় ও আতঙ্কিত হয়। সবার চোখের সামনে জ্বালাওপোড়াও দৃশ্য ভেসে ওঠে। এ জন্য আমাদেরও মনে ব্যথা অনুভূত হয়, বুক চিনচিন করে। কিন্তু কী করার? সবার জন্মের দায়বদ্ধতা থাকে। আমাদেরও আছে। দুই ভাইয়ের জন্মই যেন হয়েছে দুর্ভোগ বাড়ানো ও সহিংসতার জন্য।
সেফুদা যেমন বলেন, ‘আমি ঘুমজাগানিয়া পাখি। আমি তোমাদের ঘুম ভাঙাতে এসেছি।’ তেমনই আমরাও বলি, ‘আমরা ভয়-আতঙ্কজাগানিয়া পাখি। আমরা তোমাদের আবার ভয়-আতঙ্ক দিতে এসেছি।’
অথচ আমরা এসব চাই না। আবার কেউ কেউ বলে, এসব না করলে নাকি আমাদের অস্তিত্বই থাকে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ আমরাও তো পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাই না। কিন্তু দীর্ঘ সময় আমরা দুই ভাই আত্মগোপনে ছিলাম, কেউ খোঁজ করেনি।’
শেষ পর্যন্ত গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে আমাদের স্মরণ করা হচ্ছে। আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। ছোট ভাই হিসেবে আমি অবরোধ এখন নিয়মিত ডিউটি করছি। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার ছুটি পাই। দুই দিন ছুটি পেয়ে মাঝেমধ্যে নিজেকে সরকারি চাকরিজীবী মনে হয়। আমার বড় ভাই হরতাল নিয়মিত না হলেও প্রায়ই ডিউটি করছে।
পাঁচ বছর পরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের কদর বাড়ে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে কেউ আমাদের কথা মনেই করে না। এভাবে বেঁচে থাকা যায়? বিএনপির ডাকে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। বিরোধী অন্যান্য দলের খ্যাপও বেশ ভালোই মিলছে। গণমাধ্যমও আমাদের নিয়ে বেশ ভালো কাভারেজ দিচ্ছে।
আমাদের কোনো পক্ষ নেই। দল নেই। রাজনীতিও ভালো বুঝি না। যে ডাকে তার ডাকেই সাড়া দিতে হয়। সরকারি দলও মাঝেমধ্যে গোপনে ডাকে, তখন আমরা হাজির হই ছদ্মবেশে। এই যেমন কোথাও বিরোধী দল সমাবেশ করবে। দুই দিন আগে থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই আচমকা বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আমাদের নামে মানুষ যখন গাড়িতে ভাঙচুর চালায়, আগুন দেয়, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়, তখন বড় কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু তো করার নেই। কারণ, আমাদের ডাকার পর নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারি না। কত বীভৎস ঘটনা, হত্যাকাণ্ড ও মানুষ পুড়িয়ে মারার নীরব সাক্ষী আমরা। কিন্তু পৃথিবীর কেউ আমাদের সাক্ষ্য নেয় না, আমাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কারও বিচার হয় না। এটাই আমাদের চরম আত্মব্যথা।