অর্থমন্ত্রী চিরকুটে যা লিখে রেখেছিলেন

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

সড়ক রইল ছবিতেই

‘ক’ ও ‘খ’ দেশের দুই অসৎ মন্ত্রীর মধ্যে গোপন আলাপ চলছিল। ‘ক’ দেশের মন্ত্রী তার দেশের একটি ভবনের ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘এটার বাজেট ছিল ২০ কোটি টাকা। কিন্তু আমি ১৫ কোটি টাকায় বানিয়ে বাকিটা হজম করেছি!’

এরপর ‘খ’ দেশের মন্ত্রী একটি সড়কের ছবি দেখিয়ে বললেন, এই সড়ক বানানো বাবদ বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি টাকা।

‘ক’ দেশের মন্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, ‘কোথায় সড়ক? আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’

‘খ’ দেশের মন্ত্রী মুচকি হেসে বললেন, ‘সড়ক থেকে আমার আয় হয়েছে পুরো ২০ কোটি টাকা!’

না কাটা দিঘি

একবার এক প্রকৌশলী বদলি হয়ে গেলেন এক এলাকার দায়িত্বে। গিয়েই তিনি তার সহকারীকে আগের কয়েক বছরে কী কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার একটা রিপোর্ট করার নির্দেশ দিলেন।

নির্দেশমতো তদন্ত করে সহকারী তাকে যথাসময়ে প্রতিবেদন দিলেন। তিনি ঘেঁটে দেখলেন, এলাকায় পানির সমস্যা নিরসনে একটি দিঘি খনন করার বাজেট দেওয়া হয়েছিল এবং রিপোর্টে উল্লেখ আছে, সেই দিঘিটা যথাসময়ে খনন করা হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিনি রিপোর্টে উল্লিখিত জায়গায় কোনো দিঘি পেলেন না।

তার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী ঘটেছে। তিনিও এর সুযোগ নিলেন, ওপরের মহলে রিপোর্ট করলেন যে এই এলাকার মানুষ দিঘি থেকে পানি পান করে বলে এখানে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই অচিরেই যেন এই দিঘি ভরাট করে এখানে নলকূপ স্থাপনের বাজেট দেওয়া হয়।

যথাসময়ে বাজেট মিলল এবং ‘না কাটা’ দিঘি ভরাট হয়ে গেল; সেই সঙ্গে জনৈক প্রকৌশলী ও তার সহযোগীদের পকেটও ভরল।

বোনাসের বাজেট

হঠাৎ লোকসানের মুখে পড়া এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কর্মচারীদের বার্ষিক বোনাসের বাজেট বাঁচাতে একটা নোটিশ টাঙাল—

আপনি যদি দামি কাপড় পরে অফিসে আসেন, তাহলে আমরা বুঝব আপনি খুবই সচ্ছল, বোনাসের এই সামান্য কটা টাকা না হলেও আপনার চলবে।

আপনি যদি আজেবাজে কাপড় পরে অফিসে আসেন, তাহলে আমরা বুঝব, আপনি ফালতু খরচ করেন। তাই বার্ষিক বোনাসের টাকা আপনাকে দেওয়া হবে না। কেননা আপনি সেটাও উড়িয়ে দেবেন।

আপনি যদি একদম ঠিকঠাক কাপড় পরে অফিসে আসেন, সে ক্ষেত্রে আমরা বুঝব, আপনি বেশ ভালোই আছেন। তাহলে বোনাসের টাকা নিয়ে করবেনটা কী শুনি?

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

অর্থমন্ত্রীর চিরকুট

‘ক’ দেশে অর্থমন্ত্রীর পদে নিয়োগ পেলেন জননেতা জন উইলিয়াম। মন্ত্রণালয়ে প্রথম দিন এসে দেখলেন, তার টেবিলের ওপর আগের অর্থমন্ত্রী একটা চিরকুট আর তিনটি খাম রেখে গেছেন। চিরকুটে লেখা আছে, ‘যখনই কোনো সমস্যা হবে, একটা করে খাম খুলবেন এবং তাতে যা নির্দেশ দেওয়া আছে, তা পালন করবেন।’

প্রথম বছরেই প্রচণ্ড সংকটে পড়লেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট কিছুতেই মেলে না। তিনি একটা খাম খুললেন। তাতে একটা চিরকুট। আর ওতে লেখা আছে, ‘আগের সরকারকে ইচ্ছামতো গালি দিন।’

তিনি তা-ই করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার, সঙ্গে সঙ্গে ঝামেলা মিটে গেল।

পরের বছর বাজেট নিয়ে আবার তিনি বিপদে পড়লেন। এবার খুললেন দ্বিতীয় খাম, তাতে একটা চিরকুট। আর ওতে লেখা, ‘আগের সরকারের সব পরিকল্পনা বাতিল করে দিন।’

তিনি তা-ই করলেন। আশ্চর্য, এবারও তিনি সমস্যা থেকে দিব্যি উতরে গেলেন।

এবার এল তৃতীয় বছর। এ বছরও ঘাটতি বাজেট নিয়ে জটিল সমস্যায় পড়ে গেলেন জন উইলিয়াম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তিন নম্বর খামটা খুললেন।

তাতে একটা চিরকুট। আর ওতে লেখা, ‘এবার পদত্যাগ করুন এবং হুবহু তিনটা খাম তৈরি করে টেবিলের ওপর রেখে বিদায় হন।’

সমস্যা হলো, জন উইলিয়ামের পরে যিনি অর্থমন্ত্রী হবেন, তিনি তারই দলের। তিন চিরকুটের তিন সূত্রে তো এখন আর কাজ হবে না! তাহলে উপায়? জন একটা চিরকুটেই কাজ সারলেন। আর তাতে লিখলেন, ‘আমাকে টপকে অর্থমন্ত্রী হওয়ার মজা বুঝেছেন?’