আপনিই হয়ে উঠুন গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

গেম অব থ্রোনস সিরিজের আরিয়া স্টার্কের ভক্তের সংখ্যা হাতে গুণে শেষ করা কঠিন। কাজেই আরিয়ার চরিত্রে অভিনয় করা ব্রিটিশ অভিনেত্রী মেইসি উইলিয়ামসের জনপ্রিয়তার কথা না বললেও চলে। ২০১৫ সালে মেইসির বয়স ছিল ১৮, তখনই #লাইকআগার্ল ক্যাম্পেইনে কিশোরীদের উদ্দেশে দারুণ কিছু অনুপ্রেরণাদায়ী কথা বলেছিলেন তিনি। এখানে পড়ুন কিছু চুম্বক অংশ...

মেইসি উইলিয়ামস
ইনস্টাগ্রাম

১.

একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে নিজেকে অন্য একটা চরিত্রে বদলে ফেলা। নিশ্চয়ই আমার মেধা আর অভিজ্ঞতা সেই চরিত্রের ওপর ভর করে। কিন্তু চরিত্রগুলোকে বাস্তবসম্মত করতে আমাকে ওই চরিত্রের মতো হতে হয়। তখন আর নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। চরিত্রটা কেমন, তার কীভাবে কী করা উচিত, একটা পরিকল্পনা নিয়ে আমি তার জুতায় পা গলিয়েছি—এমন করে আমি ভাবি না। বরং আমি ভেতরে ভেতরে ওই চরিত্রটাই হয়ে উঠি।
লেখক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, বন্ধু, ইন্টারনেটে অনুসরণকারী—অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে আমার সম্পর্কে একটা শক্ত ধারণা নিয়ে বসে আছে—আমি কী এবং আমার কী করা উচিত।
এমন অসংখ্য ‘উচিত’ পরামর্শ নিয়ে চারপাশের মানুষ আমাকে ঘিরে রেখেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দিন শেষে আমি সুখী হতে চাই। আর সুখী হওয়ার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে নিজের কাছে সৎ থাকা। এটা একটা বহুল প্রচলিত কথা। তুমি নিশ্চয়ই জীবনে অজস্রবার কথাটি শুনেছ। কিন্তু নিজেকে জানা যে কতখানি জরুরি, সেটা বুঝিয়ে বলার জন্য এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু আমার মাথায় আসছে না।

২.

বেড়ে ওঠার সময়টাই স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া মনোভাব আর প্রত্যাশা নয়, বরং অবারিত হৃদয়ই মানুষকে এগিয়ে নিতে পারে। সীমাবদ্ধ প্রত্যাশা আর অনুশাসন আমাদের সৃজনশীলতার পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। ভেবে দেখুন, আমরা যদি ফুঁ দিয়ে সব দেয়াল উড়িয়ে দিতে পারতাম, চুরমার করে ফেলতে পারতাম সব আজব সীমাবদ্ধতা—বয়ঃসন্ধিকাল আমাদের আত্মবিশ্বাস হারানোর নয়, বরং অর্জনের সময় হতো। বয়ঃসন্ধিকাল হতো সেই সময়, যখন সত্যিকার অর্থে তুমি ‘তুমি’ হয়ে উঠতে পারো। প্রস্তুত হতে পারো পৃথিবীর সব বাধা মোকাবিলা করার জন্য।

মেইসি উইলিয়ামস
ইনস্টাগ্রাম

৩.

আমি কে, আমি কী—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আসলে পুরো জীবন কেটে যায়।
নিজের ভুবনে আমরা প্রত্যেকেই তারকা। নিজেকে জানার মাধ্যমে এবং নিজেকে আবিষ্কার করার মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু করে ছড়িয়ে দিতে পারি। তুমি প্রতিদিন যা-ই করো, সবকিছুর ফলাফল নির্ভর করে একটা জিনিসের ওপর—আত্মবিশ্বাস। আমরা আসলে কী চাই তা জানান দেয় আমাদের আত্মবিশ্বাস। সুতরাং নিজেকে তৈরি করো, নিজেকে রক্ষা করো, নিজের জন্য যুদ্ধ করো। জীবনটাকে নিজের দুহাতের দখলে রাখো। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে তোমার ভবিষ্যৎ।

৪.

মেয়েরা, আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে, পরস্পরকে সমর্থন করতে হবে। যখন তোমার নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হবে, মনে হবে সবকিছু হারিয়ে ফেলেছ, তখনো তোমার নিজস্ব পথ থেকে সরে দাঁড়িয়ো না। আপন পথে চলো। তোমার কাছে মানুষের কী প্রত্যাশা ছিল, তুমি কী করছ আর তারা কী করছে—এসব ভেবো না। মাথা তুলে দাঁড়াও। নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকো। এমনভাবে নিজের গল্পটা গড়ে তোলো, যেন গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটা তুমিই হও। নিজেকে ভাঙো, উদ্যম আরও বাড়াও, নিজের পায়েই দ্রুত এগোতে শেখো।

সূত্র: টেলিগ্রাফ