‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’

ধ্যানমগ্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প
এএফপি

অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বিশেষ টুইটটি করলেন। তাতে জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি লিখলেন ইতিবাচক মন্তব্য। জানালেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাজ শুরু করা উচিত।

তবে ট্রাম্প যেভাবে কথাগুলো বলেছেন, তাতে এটি স্পষ্ট যে নিতান্ত অনিচ্ছায় তাঁর এই মতপ্রদান। ঠিক যেভাবে নিজের জন্য কেনা কাঠিলজেন্স মা-বাবার কথায় ছোট ভাইবোনের হাতে তুলে দিতে হয়। তুলে দেওয়ার পর কিছুটা অভিমানও থাকে মনে। অনুবাদের অনেক ধরন হয়। বাংলায় ট্রাম্পের সেই টুইটের ভাবানুবাদ অনেকটা এমন, ‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো...।’

তালগাছের তাল বিলানোর (পড়ুন ক্ষমতা হস্তান্তর) অনুমতি দিলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু তালগাছের গুঁড়ি বেচে দেননি। তিনি বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বললেও, নির্বাচনে পরাজয় মানবেন না।

এ কথা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অকুতোভয়’ ও ‘অপরাজেয়’ মনের পরিচয় মেলে। পরাজয় মেনে নেওয়ার শিক্ষা মনে হয় ট্রাম্প পাননি। আর পেলেও নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন। ভুলে যেতেই পারেন। প্রেসিডেন্টের এত এত কাজ! এসব সামলে অন্য কোনো শিক্ষালাভের স্মৃতি মনে রাখা কি এতই সহজ?

তবে কিউরিয়াস মন ওয়ান্টস টু নো, ট্রাম্পের মনোভাব যদি করোনার মতো অন্যান্যদের (মার্কিন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কর্মী) মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তখন কী হবে? আসলে আমার যেখানে জন্ম-কর্ম, সেই অনুপাতেই তো বিন্দু বিন্দু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। তাই মনে নানা ধরনের প্রশ্ন আসে।

ট্রাম্পের এই পরাজয় মেনে না নেওয়ার বক্তব্যে মনে পড়ে যায় নিজেদের মনঃকষ্ট। স্কুল-কলেজের কালে কোনো বিষয়ে খারাপ ফল করলে, আমরাই কি সহজে মেনে নিতে পারতাম? বাড়িতে পাওয়া তিরস্কারের সৌজন্যেই হয়তো সেই মনোযাতনা আরও তীব্র হয়ে উঠত। হয়তো রোল নম্বর পিছিয়ে যেত। নতুন ক্লাসে ওঠার পর সেই নতুন রোলে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াও কঠিন হতো। কখনো হয়তো ভুল রোলেই বলে উঠতাম, ‘উপস্থিত’। হতে পারে, ট্রাম্পও সেই একই সমস্যায় ভুগছেন। ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাইলেও তাই পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না।

এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে হয়তো এই প্রথমবারের মতো এমন একটি প্রশ্ন উঠেছে, যা আগে কখনো কল্পনাও করা হয়নি। প্রশ্নটি হলো, ‘যদি প্রেসিডেন্ট পরাজয় না মানতে চান এবং ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকার করেন, তবে কী হবে?’ অন্তর্জালে খুঁজতে গিয়ে এমন অনেক নিবন্ধ পাওয়া গেল। মার্কিনরাও পড়েছে দারুণ গ্যাঁড়াকলে। প্রেসিডেন্ট এমন কম্ম করে বসলে, প্রেসিডেন্টকে সরাতে কী করা যাবে—তার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা যে নেই দেশটির সংবিধানে। বুঝুন এবার!

দেশটির সচেতন ও অসচেতন নাগরিকেরা তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিবেচনা’র ওপর নির্ভর করছেন। তা ‘সু’ হবে, নাকি ‘কু’ হবে—তার ওপরই নির্ভর করছে ‘গ্যাঞ্জাম’ হওয়া না-হওয়ার আশঙ্কা।

ট্রাম্প আবার গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষিত হলে তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়তে প্রস্তুত। কিন্তু ট্রাম্প এতবার নিজের এক বক্তব্য ভুলে ঠিক তার বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন যে তাঁর এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা সেতুর পিলার স্থাপনের চেয়ে কঠিন হয়ে গেছে।

আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার নির্ধারিত দিন। এর মধ্যেই ট্রাম্পের হাত থেকে ক্ষমতার ব্যাটন ধীরে ধীরে বাইডেনের হাতে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরাজয় মেনে ট্রাম্প যদি হোয়াইট হাউস ছাড়তে না চান? আবার যদি ট্রাম্প বেঁকে বসেন, তখন? একবার ভেবে দেখুন, নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতা চলে গেল অন্যের হাতে, কিন্তু মুকুট ছাড়তে রাজি নন ট্রাম্প। শুধু বলতে থাকলেন, ‘আমি যাব না, আমি যাব না!’

এই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া গেল রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দ্য ইনডিপেনডেন্ট, কোয়ার্টজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধে। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কর্মীরা সব সময়ই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষা করার শপথ নেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরাই হয়তো ট্রাম্পকে বাধ্য করতে পারেন। আর হোয়াইট হাউস নিজে থেকে ছাড়তে না চাইলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের ফটক দেখিয়ে দিতে পারেন।

তবে কিউরিয়াস মন ওয়ান্টস টু নো, ট্রাম্পের মনোভাব যদি করোনার মতো অন্যান্যদের (মার্কিন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কর্মী) মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তখন কী হবে? আসলে আমার যেখানে জন্ম-কর্ম, সেই অনুপাতেই তো বিন্দু বিন্দু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। তাই মনে নানা ধরনের প্রশ্ন আসে। এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে কোথাও পাত্তা না পেয়ে প্রশ্নগুলো মনেই এসে জমা হয়ে থাকে। কী করব, বলুন?

আচ্ছা, আক্ষরিক অর্থে হোয়াইট হাউসের ফটক দেখিয়ে দেওয়ার পরও যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প সেদিকে না হাঁটেন, তবে তাঁকে চ্যাংদোলা করে বহন করে নেওয়া হবে কি? বিষয়টির উল্লেখ কোথাও এখনো পাওয়া যায়নি।

বোধ হচ্ছে, মার্কিনরা এতটা ‘গভীরে’ এখনো যেতে পারেননি। আমি বা আমরা অবশ্য পারি। কারণ আছে হাজারটা। তবে বলতে চাচ্ছি না। বোঝেনই তো...!