ইভ্যালির লকারে আরও যা ছিল

রাজধানীর ধানমন্ডিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কার্যালয়ে গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে দুটি লকার ভাঙা হয়। সেখানে পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেক বই, ফাইলপত্র ও মাত্র আড়াই হাজার টাকা। ইভ্যালির লকারগুলো ভাঙতে নষ্ট হয় পাঁচটি ব্লেড। বলা হচ্ছে, লকার ভেঙে ওই ব্লেডগুলোর দামও উঠল না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আদতেই কি ইভ্যালির লকারে সামান্য আড়াই হাজার টাকা ছিল? দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখলে হয়তো আরও অনেক কিছুই পাওয়া যেত লকারগুলোতে। কী পাওয়া যেত? আসুন, আমরা মিলিয়ে দেখি...

মিথ্যা আশ্বাসের ঝুড়ি

ইভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘সাপোর্ট’ নামে একটা অপশন ছিল। এই ‘সাপোর্ট’ যে কার জন্য ছিল, তা বলা মুশকিল! মেসির জন্য, নাকি রোনালদোর জন্য? টমের জন্য, নাকি পুঁচকে জেরির জন্য? নাকি জায়েদ খান কিংবা নিপুণের জন্য? দ্ব্যর্থবোধক এ প্রশ্ন করার কারণ একটাই, ইভ্যালির ওই ‘সাপোর্ট’ অপশনে ভুক্তভোগীরা খুব কমই সাপোর্ট পেয়েছেন।

ছবি: ইভ্যালির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

তার বদলে বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন মিথ্যা আশ্বাসের ঝুড়ি। কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জবাব আসত, ‘আপনার বিষয়টি আমাদের টিম দেখছে। একটু ধৈর্য ধরুন। খুব শিগগির আপনার পণ্যটি পেয়ে যাবেন।’ ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে দিতে মানুষ গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তারপরও ইভ্যালির পরীক্ষা নেওয়া শেষ হয়নি। একই ঘটনা ঘটত ইভ্যালির ফেসবুক পেজেও।

ফলে ইভ্যালির লকারে হয়তো এমন হাজারো মিথ্যা আশ্বাসও ছিল, যা আদতে অদৃশ্য!

ধন্যবাদের ডালা

ছবি: ইভ্যালির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

ইভ্যালির ফেসবুক পেজের প্রসঙ্গ যখন এল, তখন মনে পড়ছে কমেন্ট বক্সের কথা। ইভ্যালির যেকোনো পোস্টের নিচে গেলেই দেখা যাবে, লোকজন এক বা একাধিক অর্ডারের ইনভয়েস নম্বর দিয়ে প্রশ্ন করছে, ‘কোনো আপডেট আছে?’ কিংবা ‘কবে পাব?’ ইভ্যালি একেবারে তুরন্ত বেগে রিপ্লাই দিত। কী থাকত রিপ্লাইয়ে? ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন—হ্যাঁ, গালভরা ধন্যবাদ।

ছবি: ইভ্যালির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

ভাষাটা হতো এ রকম, ‘প্রিয় গ্রাহক, আপনাদের অর্ডারের ডেলিভারি বিলম্বের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা আপনাদের ইনভয়েস নম্বরটি চেক করে দেখতে পাচ্ছি, আপনাদের ক্রয়কৃত প্রোডাক্টের পারচেজ অর্ডারটি সেলারের নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে...ইভ্যালির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

বুঝতেই পারছেন, ইভ্যালির লকারে খুঁজলে এমন অদৃশ্য ধন্যবাদ পাওয়া যেত লাখে লাখে!

ভুয়া অফারের বস্তা

ইভ্যালি আর অফার মানে ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’। অফারগুলো এতটাই অসম্ভব ছিল যে ইভ্যালি নিজেই বলত, ‘এমন অফার কেবল স্বপ্নেই পাবেন।’ স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফারাক বুঝতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। তবে কেউ অফার দিলে মানুষ বসে থাকে কী করে! তাই অফারের সাইক্লোনে গা ভাসিয়েছিলেন অনেকে। গুটিকয় মানুষের ভাগ্যের শিকে হয়তো ছিঁড়েছে, বেশির ভাগ কপাল চাপড়ে করেছেন হাপিত্যেশ।

ছবি: ইভ্যালির ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

অভিযোগ করলেই ইভ্যালির এক কথা, ‘সম্মানিত গ্রাহক, আজকের অফারে আপনাদের রেসপন্সে আমরা অভিভূত। আমাদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ...এ জন্য আমাদের স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তাই আপনাদের করা আজকের সকল অর্ডার আপাতত রিকোয়েস্ট হিসেবে জমা থাকবে। ইভ্যালির ওপর আস্থা রাখুন, পাশে থাকুন। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।’

কাজেই ইভ্যালির লকারে এমন আরও লাখো অফার, ভুল পাত্রে দেওয়া মানুষের ভালোবাসা এবং শেষমেশ দীর্ঘশ্বাসও নিশ্চয়ই পাওয়া যেত।