উল্টো শার্লক হোমস

আঁকা: রাকিব রাজ্জাক

ডা. আফজাল। এমবিবিএস, এফআরসিএস।

নামের শেষে আরও গুটিকয়েক ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষর। জোর ঘোষণা করছে ভদ্রলোক বিলেতফেরত। অবশ্য শুধু বিলেতফেরত হলে কথা ছিল না, ডা. আফজালকে নিয়ে রোগী-সমাজে নানা রকমের কথাবার্তা: অদ্ভুত হাতযশ, বেজায় রসিক, অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি। শুধু তা-ই নয়, তিনি নাকি দুর্জ্ঞেয় মনস্তত্ত্বেরও অধিকারী। রোগী দেখতে দেখতে ক্ষণে ক্ষণে রোগীর মনের কথাও বলে দিতে পারেন। রোগীরা চমকে ওঠে।

প্রচলিত কথাটা আমাকেও ভীষণ ভাবিয়ে তুলল। ডা. আফজাল আমার খুব নিকট সম্পর্কের আত্মীয়, অনেককালের চেনা। কী করে যে এত পরিচিত মানুষটি এতখানি নাম কিনলেন, প্রথমত আমারও তেমন বিশ্বেস হয়নি। পরে অবশ্য অন্য কথা। আচ্ছা, লোকের কথা বাদ, আপাতত নিজস্ব অভিজ্ঞতার কাহিনিটাই বলি না কেন, শুনুন।

আমি গিয়েছিলাম জরুরি কোনো কাজে নয়—শুধু একখানা মেডিকেল সার্টিফিকেট জোগাড় করতে। গিয়ে দেখি ভীষণ ভিড়। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ডা. আফজাল কিন্তু দূর থেকেই দেখে, ‘এই যে রফিক, এসো এসো’ বলে আমাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন। সামনে একখানা চেয়ার খালি। ওতেই বসে পড়লাম। একটু মুচকি হেসে ডাক্তার বললেন, ‘তারপর? কী মনে করে?’ বললুম, ‘না, ভাইজান, তেমন কিছু নয়। শুধু একটুখানি বিসিএস...।’

‘ওহ্, বুঝতে পেরেছি। বসো। এক্ষুনি লিখে দিচ্ছি। হাতের কাজটা আগে সেরে নিই।’ প্রথিতযশা চিকিৎসক। দেখুন না, আমি শুধু বললেম, ‘বিসিএস...।’ আর সঙ্গে সঙ্গে আঁচ করে ফেললেন, বলে বসলেন, ‘ছাড়পত্র লিখে দিচ্ছেন’। অথচ, কী যে লিখবেন, কী যে রোগ, বলতে গেলে আমাকে অনেক কথাই খুলে বলতে হয়।

হয়েছে কী, চাকরি তো করি ব্যাংকে, কেরানিগিরি। ওতে সংসার চলে না। তাই সাধ জেগেছে সামনের ডিসেম্বরে বিসিএস পরীক্ষাটা দেব, যাতে ভালো ফল করতে পারলে মোটা মাইনের ‘অফিসার’ হওয়া যায়। কিন্তু ভীষণ কঠিন পরীক্ষা, বিরাট প্রস্তুতির প্রয়োজন। অত সময় পাব কোথায়? ব্যাংকের অফিসাররা যে ছুটির কথা শুনতেই পারেন না; একমাত্র অসুখ-বিসুখের ভান করা ছাড়া। তাই ডা. আফজালের শরণাপন্ন হওয়া।

ডাক্তার হেসে বললেন, ‘এই! এ আর শক্ত কী? আমি লিখে দিচ্ছি তোমার Differential Calculus হয়েছে।’

‘Differential Calculus?’ আমি আঁতকে উঠি, ‘বলেন কী, ভাইজান! সে তো শুনেছি অঙ্কশাস্ত্রের একটা শাখার নাম!’

‘হয়েছে...রাখো। তোমার অফিসারদের যা মাথা, ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস যা, সেরেব্রাল হেমারেজ-ও তা। আসল কথা, সার্টিফিকেটে দাঁত ফুটাতে না পারলেই হলো। বুঝেছ? তা অসুখ-বিসুখের নাম ছাড়া বুঝি এ তল্লাটে আসতে নেই?’

লজ্জিত হয়ে বললুম, ‘না ভাইজান। সে কথা নয়। ব্যাংকের কাজ, সময় পাইনে।’ ডাক্তার আমার কথায় কান না দিয়ে খস খস করে সুপারিশপত্র লিখে চললেন। ইতিমধ্যে একজন রোগীর প্রবেশ। বেঁটেখাটো ক্লিনশেভড মানুষটা। মুখমণ্ডলে ঘা। ডাক্তার ছোটখাটো প্রেসক্রিপশনে আবার তেমন গা করেন না। লেখাটা থেকে মুখ না তুলেই কয়েকটা ট্যাবলেট আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘রফিক, এগুলো পেশেন্টকে দিয়ে দাও। তারপর জেনে নাও, ও দিনে কবার করে শেভ করে?’ লোকটার সঙ্গে সঙ্গে জবাব, ‘প্রায় ৩০-৪০ বার।’

‘৩০-৪০ বার!’ আমার তো আক্কেলগুড়ুম! ৪০ বার শেভ করলে মানুষের কিছু থাকে কি?’

ডাক্তার হেসে বললেন, ‘তাই তো বলি হে, রফিক, ব্যাংকারদের মাথায় ঘিলুর অভাব। আরে, বুঝতে পারছ না? পেশেন্ট পেশায় ক্ষৌরকার, ব্যাংকার নয়। দিনে ৩০-৪০ বার লোকের দাড়ি শেভ করে বেড়ায় আরকি। জিজ্ঞেস করো, জানবে।’

ডাক্তারের কথায় এবার লোকটাসহ আমি হো হো করে হেসে উঠি। লোকটাও অম্লানবদনে স্বীকার গেল, হ্যাঁ, সত্যিই সে একজন সেলুনম্যান। মুখে ক্ষুরঘটিত ঘা হয়েছে।

ততক্ষণে মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেছে। ডাক্তার কাগজখানা আমার হাতে ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও তোমার “পরীক্ষা” রোগের নোসখা। আচ্ছা যা যা দেখলে, তাতে তোমার কী মনে হয়? আমার চিকিৎসা সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?’

খানিক ভেবে বললুম, ‘তবে কি ভাইজান, বলতে চান, ডাক্তারির সঙ্গে “ডিটেকটিভি” মিশিয়ে আপনার চিকিৎসা এবং এই আপনার পদ্ধতি?’

‘ছাই বুঝেছ!’ বলে ডাক্তার কী যেন ফের ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছিলেন।

বাধা দিয়ে বললুম, ‘না, ভাইজান, উঠি। বড্ড বেলা হয়ে গেল। অফিসার আবার রাগ করবেন!’

মাথা নেড়ে ডাক্তার বললেন, ‘যাবে কোথায়, শ্রীমান? বাইরে যে বৃষ্টি!’

এমন সময় ভেতর থেকে ডাক এল, ভাবি নাশতা তৈরি করে বসে আছেন। আমাকে ভেতরে যেতে হবে। অগত্যা কী আর করি। লোকটিকে সেখানে সে অবস্থায় বসিয়ে রেখে ডাক্তারসহ আমি ভেতরে চলে গেলাম।

খানিকটে অবাক হলেম বৈকি! ডাক্তার তো চেয়ারেই ঠায় বসা! টেবিল থেকে একটুও মুখ তোলেননি, অনবরত লিখেই যাচ্ছিলেন। তবে কেমন করে জানলেন, বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি?

এতক্ষণ পরে মনে মনে লোকটার প্রতি আমারও শ্রদ্ধার ভাব জাগ্রত হলো, হ্যাঁ, লোকে যে তাঁকে অদ্ভুত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দুর্জ্ঞেয় শক্তির অধিকারী বিরাট মহাপুরুষ মনে করে, কথাটা দেখছি নেহাত ফেলে দেবার নয়। তারপর পাশ ফিরতেই দেখি, নতুন এক পেশেন্টের আবির্ভাব, হাতে ছাতা, পায়ে পাম্প শু, পরনে চেক লুঙ্গি।

ডাক্তার আগন্তুককে সামনের আসন দেখিয়ে বললেন, ‘বসুন, ওই চেয়ারটায়। আচ্ছা, রোগের কথা পরে। আপাতত বলুন তো, কদিন হলো আপনার বার্মা থেকে ফেরা হয়েছে?’

লোকটা তো অবাক, ‘আপনি জানলেন কী করে?’ সত্যিই মাসখানেক হলো সে রেঙ্গুন থেকে ফিরেছে। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত না করে ডাক্তারের ফের আর একখানা প্রশ্ন, ‘নিশ্চয়ই আপনি বিদ্যুৎ-ঘটিত কারখানায় কাজ করেন?’ লোকটা অবাকের ওপর অবাক।

‘আচ্ছা, আপনার নাম মুন্সী করমউল্লাহ। আপনার বাড়ি নোয়াখালী। সাং মাইজদি। নয় কি?’

লোকটার অবাকের পরিসীমা নেই। আমিও হতভম্ব, ‘এ যে দেখছি ভাইজান, আপনি সাক্ষাৎ শার্লক হোমস!’

‘আরে, থামো বৎস।’ ডাক্তার বললেন চারিয়ে, ‘সবে তো শুরু, সবুর করো। মজা আরেও দেখার বাকি রয়েছে যে!’

এমন সময় ভেতর থেকে ডাক এল, ভাবি নাশতা তৈরি করে বসে আছেন। আমাকে ভেতরে যেতে হবে। অগত্যা কী আর করি। লোকটিকে সেখানে সে অবস্থায় বসিয়ে রেখে ডাক্তারসহ আমি ভেতরে চলে গেলাম। (এখানে একটি কথা বলিনি বুঝি? ডাক্তার সপরিবার থাকার বন্দোবস্তসহ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে চেম্বার নিয়েছেন।)

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এবার ভাইজানের ব্যাখ্যা, ‘আচ্ছা, ভালো কথা, রফিক। নিশ্চয়ই তুমি মনে মনে বসে ভাবছ, অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তোমাদের এ মহাপুরুষ ভাইটি সেদিনকার ডা. আফজাল আজকে হয়ে বসেছেন বিরাট মনস্তত্ত্ববিশারদ, নয় কি?’

আমিও প্রায় সায় দিতে যাচ্ছিলাম। ডাক্তার হো হো করে হেসে উঠলেন।

‘ও কী, হাসছেন কেন?’

‘হাসব না? তুমি একটা আস্ত গবেট।’

হেঁয়ালিটা আমি তবু বুঝে উঠতে পারিনে। আমার অসুবিধে দেখে ডাক্তার এবার ফের নিজেই ব্যাখ্যা করা শুরু করে দিলেন, ‘আচ্ছা, গোটা দুই উদাহরণ দিয়েই বলি। প্রথমত ওই যে লোকটাকে চেম্বারে বসিয়ে রেখে এলাম, ওর কথাই ভাবো না কেন? লোকটার কোমরে জড়ানো লুঙ্গির ওপর চওড়া করে পরা বেল্ট নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ?’

‘হ্যাঁ, তা তো দেখেছি।’

‘কিন্তু ও রকম করে লুঙ্গি পরে কারা জানো?’

‘না তো!’

‘একমাত্র বার্মা মুলুকের লোকেরাই। অথচ লোকটা চেহারায় বার্মিজ নয়, বাঙালি। এ থেকে অনুমান করা কি খুব কঠিন, লোকটা হালে বার্মা থেকে ফিরেছে? তারপর সে যে বিদ্যুৎ-ঘটিত কারখানায় কাজ করে, সে তো আরও সহজ।’

‘কেমন করে?’

‘ওর জুতোজোড়াই সাক্ষী। ওর পায়ে রয়েছে রাবারের পাম্প শু। আর সবাই জানে, ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরাই বিদ্যুতের শক এড়াতে গিয়ে রবার শু পরে কাজ করে থাকে। ফের তৃতীয় বুদ্ধিটা—যেটা একসঙ্গে তোমাদের উভয়কেই চমকে দিয়েছিল, সে তো আসলে সবচেয়ে সহজ। ওর ছাতাটাই প্রমাণ। তুমি খেয়াল করোনি, কিন্তু আমি লক্ষ করেছি, ওর ছাতার গায়ে বড় বড় সাদা হরফে লেখা: মুন্সী করমউল্লাহ মিস্ত্রি। সাং মাইজদি। জিং নোয়াখালী। ফের ও যখন ছাতা বন্ধ করে চেম্বারের প্রবেশপথে এসে দাঁড়াল, দেখলাম ছাতাটা থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। এ থেকে আন্দাজ করা কি খুবই শক্ত যে বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে? সুতরাং দেখলে তো, ডিটেকটিভ বুদ্ধিটুদ্ধি কিছু নয়, স্রেফ কমনসেন্স। পার্থক্য শুধু একদল লোক চোখ মেলে দেখেন আর একদল দেখেন না। আর যাঁরা দেখেন তাঁদের পকেটে রুপচাঁদার ঝাঁক এমনি এসে ধরা দেবে, এ আর বিচিত্র কী? আর দেখো, খেলাটা জমে ভালো যদি এর সঙ্গে “টেলিফোন” এসে যোগ দেয়, ঘরে যদি একখানা টেলিফোন থাকে।’

‘টেলিফোন?’

কথাটা ফের আমাকে বিভ্রান্ত করে তুলল।

‘জি হ্যাঁ, টেলিফোন। টেলিফোনই লাখ টাকা, বিংশ শতাব্দীর সোনার কাঠি রুপার কাঠি। সৌভাগ্যের রাজকন্যের ঘুম ভাঙাতে টেলিফোনই যথেষ্ট। উহ্, বিশ্বেস হচ্ছে না বুঝি? এসো তাহলে আমার সঙ্গে, আমি এক্ষুনি প্রমাণ করে ছাড়ছি।’ বলেই ডাক্তার আমাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চললেন।

ভাইজানের চোটপাট দেখে ভাবি আর স্থির থাকতে পারেন না, ‘ইশ্, হয়েছে। খুব তো জাঁক দেখাচ্ছ? কিন্তু বলি, ফোনখানা যে সকাল থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে পড়ে আছে, সে খবর রাখো কি?’

ভাবির কথায় ডাক্তার বড় একটা কান দেন না, ‘স্টাইল। বুঝেছ হে রফিক, স্টাইল! স্টাইলই হচ্ছে হাল দুনিয়ার জিয়নকাঠি, মরণকাঠি। স্টাইল জানা থাকলে মরা ফোনও যে মরা হাতির দামে বিকোয়। আর না জানা থাকলে এক পয়সাও দাম নেই।’ বলেই ডাক্তার ফের আমাকে টেনে নিয়ে চললেন।

চেম্বারে ফিরে এসে দেখি লোকটা যেই-কে-সেই ঠায় বসে আছে। ডাক্তার সেদিকে কিন্তু ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা রিসিভারটা হাতে তুলে নিলেন। তারপর ডায়াল করে চললেন। ডাক্তারের ‘ডায়ালিং’ দেখে আমার হাসি পায়, আমি তো জানি ফোনটা ডিসকানেক্ট। কিন্তু ততক্ষণে ভাইয়ার মনস্তত্ত্ব আমার পুরোদমে রপ্ত হয়ে গেছে, হোক না যন্ত্রটা খারাপ, মূর্খ রোগীকে ঘাবড়ে দিতে ও-ই যথেষ্ট। হতভম্ব পেশেন্ট অবাক চোখে দেখুক—কী সব হোমরাচোমরা তাঁর কনেকশনস! আর কত বিশাল তাঁর পসার-প্রতিপত্তি! সুতরাং ডাক্তার ফোন করে চললেন, ‘থ্রি-ওয়ান-ফাইভ-সিক্স-টু ফোর। হ্যালো! কে বলছেন? ও ড. ব্যানার্জি? গুডমর্নিং, কেমন আছেন? তারপর কী খবর? ...অ্যাঁ? কী বললেন, অক্কা পেয়েছে? তা পাবেই তো, নরেশ ডাক্তারের পাল্লায় যখন পড়েছে। কত বললাম, আমার এখানে রেখে যান। তা রাখবেন কেন? অথচ সঙ্গেরটি দেখুন, আমারই ক্লিনিকে দিব্যি হেসেখেলে বেড়াচ্ছে। ...ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। ওঁরা তো বলছেন, সাবকন্টিনেন্টে এ-ই প্রথম। তবে বান্দা যখন আপনাদের খেদমতে বেঁচে আছি, অপারেশন কাকে বলে আরেও দেখবেন। নো, থ্যাংকস। ...আমার মাথা খান। আমার কী ভাই অত ঝামেলার সময় আছে? সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডিরেক্টর! ...না, না, অপেক্ষাকৃত ইয়াংম্যান অন্য কাউকে দিয়ে দিন। ...আচ্ছা, আচ্ছা, সে দেখা যাবেখন।’

এতক্ষণে ডাক্তার ফোনটা রাখলেন।

তারপর রহস্যমাখা দৃষ্টিতে অপেক্ষমাণ রোগীটির দিকে একবার মাত্র দৃকপাত করলেন। জাদুমন্ত্রের মতো কাজ হয়েছে। গ্র্যান্ড সাকসেস। সম্মোহিত রোগী ফোন-মাহাত্ম্যে আরও অভিভূত হয়ে পড়ল। উহ্, খুদে একখানি যন্ত্রের যে এতখানি প্রতাপ, এত উত্তাপ, আমি কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো প্রত্যক্ষ করিনি।

যাক, উদ্দেশ্য যখন সিদ্ধ হয়েছে ডাক্তার আফজাল এবার ধীরে ধীরে তাঁর জাল পাতলেন। বিনয়নম্র দৃষ্টিতে ভাঙা গলায় উচ্চারণ করলেন, ‘ওয়েল মিস্টার, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ? বলুন, আপনার আমি কী খেদমত করতে পারি? জানেন তো, আমার ভিজিট ৬৪ টাকা।’

ফিসের অঙ্ক শুনে লোকটা ঘাবড়ে গেল।

‘না হুজুর, আমি একজন গরিব...’

‘গরিব। আচ্ছা, গরিবের জন্যে কনসেশন রয়েছে—১৬ টাকা। হলো তো?’

‘না হুজুর, আমি একটি অফিসের চাকুরে...’

‘ও বুঝেছি। ছুটির দরখাস্ত? বেশ, তবে তো আরেও সস্তা। মাত্র সাড়ে চার টাকা। টাকাটা ফেলুন, আমি এখুনি সুপারিশপত্র লিখে দিচ্ছি।’ বলেই ডাক্তার কাগজ-কলম নিয়ে প্রস্তুত হলেন।

কিন্তু হঠাৎ ডাক্তারের সমস্ত ক্যালকুলেশন ভেস্তে দিয়ে লোকটির সবিনয় নিবেদন, ‘হুজুর, রোগ আমার নয়।’

‘ও খোদা, তাই নাকি? রোগিণী বুঝি বাড়িতে? তবে তো মস্ত বড় ভুল হয়ে গেল!’

‘না স্যার, তা-ও নয়। রোগ আপনার টেলিফোনের। আপনার স্ত্রী ভিন্ন বাসা থেকে একটু আগে ফোন করেছেন। তাই আমি এসেছি ছেঁড়া তারে জোড়া লাগাতে। আমি রোগী নই স্যার, টেলিফোন কোম্পানির মেকানিক।’

(ঈষৎ সম্পাদিত)

সূত্র: সাজেদুল করিমের বারোটি হাসির গল্প (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র)

সাজেদুল করিম: বাংলাদেশি শিশুসাহিত্যিক। জন্ম ১৯১৭ সালে, মারা গেছেন ১৯৯৫ সালে। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: চিংড়ি-ফড়িং-এর জন্মদিনে, চেরাপুঞ্জি পলিটিক্স, এপ্রিলস্য প্রথম দিবসে