এই বিজ্ঞাপনই যদি বাংলাদেশি কেউ বানাতেন

ছবির বিজ্ঞাপনটি ভালো করে খেয়াল করুন। চমৎকার একটি বিজ্ঞাপন। ব্যান্ড–এইড নামের এক পণ্যের জন্য তৈরি করা এই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। এটি তৈরি করেছিল বিখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেমস ওয়াল্টার থম্পসন (জেডব্লিউটি)। খেয়াল করে দেখেছেন নিশ্চয়ই, বিজ্ঞাপনটিতে কোনো কপি নেই, অর্থাৎ এতে কোনো লেখা নেই। কিন্তু যা বলতে চাওয়া হয়েছে, তা একদম পরিষ্কার। হাল্ক নামের চরিত্রটিকে আমরা সবাই চিনি—মহাপরাক্রমশালী কাল্পনিক চরিত্র। এই হাল্ক রেগে গেলে সাধারণ মানুষ থেকে অতিকায় মানবে পরিণত হয়। বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে, সেই হাল্কের আঙুলেই একটি ব্যান্ড–এইড মোড়ানো! আর ব্যান্ড–এইডে ব্যবহৃত উপাদান এতটাই নমনীয় যে হাল্কও তা ব্যবহার করতে পারে অনায়াসে। আচ্ছা, এই বিজ্ঞাপন যদি বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন নির্মাতারা বানাতেন, তাহলে ক্লায়েন্ট ফিডব্যাকগুলো (গ্রাহকের মতামত) কেমন হতো? চলুন, একবার দেখে আসি...

ফিডব্যাক ১

খুব সুন্দর আইডিয়া, ভাই! চেয়ারম্যান স্যারের খুব পছন্দ হইছে! উনি বলছেন, ‘ওয়াও!’ তবে উনি ছোট্ট একটা ফিডব্যাক দিছেন। সেটা হচ্ছে, প্রোডাক্ট পার্টটা আরেকটু বড় করতে বলছেন।

ফিডব্যাক ২

ভাই, আরেকটা ছোট্ট ফিডব্যাক আছে। চেয়ারম্যান স্যার বলছেন, হাতটা খুব বেশি মোটা আর বাজে লাগছে! হাতটা স্বাভাবিক কইরা দেন। আর সবুজ রঙটা না দিয়ে নরমাল একটা হাত দেন।

ফিডব্যাক ৩

আরেকটা খুব মাইনর ফিডব্যাক, ভাই! পুরুষের হাতটা ভালো লাগছে না! চেয়ারম্যান স্যার বলছিলেন, কোনো নারীর সুন্দর একটা হাত দিতে পারেন। তাহলে ব্যাপারটা বেশ অ্যাট্রাকটিভ হবে।

ফিডব্যাক ৪

ভাই, চেয়ারম্যান স্যার মারাত্মক একটা আইডিয়া দিছেন! স্যার বলছেন, শুধু মেয়ের হাত দিয়ে জমছে না! পুরো একটা মেয়েকে নিয়ে আসেন। হতে পারে একজন মা। মা তার সন্তানকে ব্যান্ড–এইড লাগিয়ে দিচ্ছে।

ফিডব্যাক ৫

ভাই, মায়ের চেহারাটা জমে নাই! আরেকটু অল্প বয়সী মা নেন। আর বাচ্চাটার চেহারা রোগা! একটু ভালো দেখে নেন। কি, ফটোশুট? না ভাই, ফটোশুট হবে না! নেট থেকে নামায় এদিক–সেদিক করে কইরা দেন। আপনে বস মানুষ, আপনে পারবেন।

ফিডব্যাক ৬

ভাই, সব ওকে! চেয়ারম্যান স্যার বলছেন, প্রোডাক্ট পার্টটা বড় করে দিতে। আর কোনায় আলাদা করে লোগোটা বসায় দেন। একটা ক্যাচি হেডলাইন দিতে হবে। আর টুইস্টওয়ালা একটা বডি কপি (আকর্ষণীয় লেখা বা স্লোগান) দেন।

ফিডব্যাক ৭

ভাই, চেয়ারম্যান স্যারের হেডলাইন পছন্দ হয় নাই। উনি বলেছেন, মেসেজ ক্লিয়ার হয়, এমন একটা লাইন দিতে। আপনারা একটু ইন্টারনেটে রিসার্চ করে দেখেন, ব্যান্ড-এইড আসলে কী কাজে লাগে। একটু পড়াশোনা না করলে তো ভালো লেআউট করতে পারবেন না!

ফিডব্যাক ৮

ভাই, চেয়ারম্যান স্যার আরেকটা আইডিয়া দিছেন! উনি বলছেন, কাটাছেঁড়া আসলে বেশি হয় স্পোর্টসম্যানদের। এখানে মা ও ছেলেকে সরিয়ে স্পোর্টসম্যান কাউকে দিয়ে দেন। কী, কপিরাইট ইস্যু? মামলা হতে পারে? এক কাজ করেন, দেশের বাইরের কোনো স্পোর্টসম্যান নেন। কী, এখানেও ঝামেলা হতে পারে? তাহলে ভেক্টর ইউজ করুন।

ফিডব্যাক ৯

ভাই, লোগোটা আরও ২৫ পারসেন্ট বড় করেন। চেয়ারম্যান স্যার বলছেন।

(এভাবে ৯৯টা ফিডব্যাক দেওয়ার পর)

ফিডব্যাক ১০০

ভাই, চেয়ারম্যান স্যার দেশের বাইরে। উনি এলেই লেআউটটা লক করে ফেলব। আপনি এক কাজ করেন, একটা লেআউট নিয়ে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে কীভাবে যাব? আরও দুইটা অপশন পাঠিয়ে দেন। এবার একটা প্রেস লক করাই-ই ফেলব!