কেন খাই খাই করি

‘খিদে’ নামের একটি ছড়া লিখেছিলেন লুৎফর রহমান রিটন। ছড়াটি শুরু হয়েছে এভাবে—‘আবদুল হাই/ করে খাই খাই/ এক্ষুনি খেয়ে বলে/ কিছু খাই নাই।’ আশপাশে একটু খুঁজে দেখুন, ছড়ার ‘আবদুল হাই’য়ের মতো অনেককেই পাবেন। এমনকি ‘আবদুল হাই’ হতে পারেন আপনি নিজেও। কিছুক্ষণ আগে খেয়েও আবার খিদে লাগে কেন? আসুন, জানা যাক কারণগুলো, সঙ্গে সমাধানের সূত্র…

পানিশূন্যতা

খানিক আগে ভরপেট খাওয়ার পর খিদে পেলে যন্ত্রণা বটে। এমনটা নিয়মিত হলে খেয়াল করে দেখুন, আপনি ঠিকমতো পানি পান করছেন কি না। না করলে খাওয়ার খানিকক্ষণ পর দুই গ্লাস পানি পান করুন। ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করে দেখুন আবার খিদে পায় কি না। পেলে সমস্যা গুরুতর। শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে পারেন ফল ও সবজি খেয়েও। প্রতি বেলায় খাবারের তালিকায় কিছু ফল ও সবজি রাখলে এ সমস্যার সমাধান মিলতে পারে।

অতিনিয়ন্ত্রণ

খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ মানে ডায়েট করবেন ভালো কথা। তবে দ্রুত ক্যালরি কমাতে গেলে বিপদ অনেক। অতিনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে উল্টো খিদে বেশি পেতে পারে। হুট করে প্রিয় খাবার ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। ছাড়তে হলে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এবং খাবার যেন সুষম হয়, সেটি খেয়াল রাখুন। খাবারে যেকোনো একটি প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি থাকলেও এমনটা হতে পারে।

কম ঘুম

প্রতি রাতে গড়ে পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে এই সমস্যা হতে পারে। লেপটিন নামের একটি হরমোন আমাদের মস্তিষ্ককে পরিপূর্ণতা এবং তৃপ্তির বার্তা পাঠায়। ঘুম কম হলে এই লেপটিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। গ্রিলান নামের আরেক হরমোনের কাজ হলো মস্তিষ্ককে খিদের বার্তা পাঠানো। কম ঘুমে এর নিঃসরণ আবার বেড়ে যায়। আরও আছে, ঘুম কম হলে ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়ে। সুগার বা কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা বাড়তে থাকে সেই সঙ্গে। তাই প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা খুব জরুরি।

সকালের নাশতা

দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার যে সকালের নাশতা, এতে কারও সন্দেহ নেই। সকালে ভালোভাবে নাশতা করে ফেললে সব কিছু ঠিকঠাক। না করলে স্বাভাবিকভাবেই খিদে থেকে যায়। আবার সকালে নিয়মিত নাশতা করলেই চলবে না, নাশতায় যেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। প্রোটিনসমৃদ্ধ নাশতা দিয়ে দিন শুরু করলে মস্তিষ্কে খাবার খাওয়ার সংকেত যায় নিয়ম অনুযায়ী। ফলে সারা দিন ‘কী খাই কী খাই’ ভাবটা কাজ করে না।

মানসিক ধকল

সারা দিনের ধকল শেষে কী খান আপনি? চিপস বা ভাজাপোড়া? নিঃসন্দেহে বদভ্যাস। সারা দিন খিদে ভাব জাগিয়ে দেওয়ার হরমোন এতে আরও বেশি নিঃসরিত হয়। ধকল থাকবেই, তাই সেসব কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন। হালকা ব্যায়াম, বই পড়া বা সুবিধামতো যেকোনো কিছু করে সময় কাটালে ধকলের সঙ্গে খাই খাই ভাবও কমে যাবে।

মনোযোগের ঘাটতি

ফাটাফাটি একটা সিনেমা দেখতে দেখতে কিছু খেতে গেলে কী হয়? হঠাৎ করে দেখা যায়, হাতের খাবার শেষ। তখন মনে হয়, আরেকটু পেলে মন্দ হতো না। কিন্তু এটাও তো ঠিক, আস্ত এক প্যাকেট পপকর্ন নিয়েই হয়তো সিনেমাটি দেখতে বসেছিলেন আপনি। অমনোযোগের সঙ্গে কিছু খেলে এটাই হয়, কী খাচ্ছেন, কতটুকু খেলেন—কোনো হুঁশ থাকে না। ফলে চোখ মস্তিষ্ককে তৃপ্তির সংকেত পাঠায় না। তাই খাবার খাওয়ার সময় খাবারের ঘ্রাণ নেওয়া, অন্য কিছুর দিকে তাকিয়ে না থাকা, ধীরে ধীরে চিবোনো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং খাবার টেবিলে বসে খাওয়াও খুব জরুরি। এসব না মানলে খিদে খিদে ভাব থাকবেই।

ওপরের নিয়মগুলো মেনে চলার পরও সারা দিন খিদেভাব না কাটলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট