খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। বিশেষ করে জলদস্যুদের উৎপাত ভীষণভাবে বেড়ে যায়। উপদ্বীপ আনাতোলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল তখন ‘সিলিসিয়া ট্র্যাকিয়া’ নামে পরিচিত ছিল। এখানে জলদস্যুদের কর্তৃত্ব চরম আকার ধারণ করে। এই সমস্যা রোমান সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। জলদস্যুদের কবলে পড়েন স্বয়ং জুলিয়াস সিজার!
৭৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এজিয়ান সাগরে একদল জলদস্যু তাঁকে বন্দী করে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। তরুণ সিজার গ্রিসের রোডস দ্বীপে যাচ্ছিলেন। গ্রিক লেখক ও জীবনীকার প্লুটার্ক তাঁর প্যারালাল লাইভস গ্রন্থে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বলা হয়ে থাকে, এ ঘটনা সিজারকে কিছুটা বিড়ম্বনায় ফেলে ঠিকই, তবে এ জন্য জলদস্যুদের দিতে হয়েছিল চড়া মূল্য।
ঘটনাটি খুবই চমকপ্রদ। দস্যুদের হাতে বন্দী হওয়ার পর জুলিয়াস সিজার একটুও বিচলিত হননি। তিনি যে বন্দী, তা–ও তিনি মেনে নেননি। দস্যুরা বলেছিল, মুক্তি পেতে হলে তাঁকে ৬২০ কেজি রৌপ্যমুদ্রা (বর্তমান ক্রয়মূল্য প্রায় ৬ লাখ মার্কিন ডলার) মুক্তিপণ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে; না হলে তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হবে। এ কথা শুনে সিজার হাসতে থাকেন। দস্যুরা জানে না, তারা কাকে বন্দী করেছে, এই ভেবে সিজার বেশ মজা পাচ্ছিলেন। তিনি দস্যুদের বলেন, ‘আমার জন্য ১ হাজার ৫৫০ কেজি রৌপ্যমুদ্রা মুক্তিপণ হিসেবে উপযুক্ত হবে।’ দস্যুদের তখনই বোঝা উচিত ছিল। না বুঝে উল্টো টাকা আনতে সিজারের এক সহচরকে মুক্তি দেয় তারা।
৩৮ দিন পর সেই সহচর টাকা নিয়ে ফেরত আসে! এই ৩৮ দিন দস্যুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন জুলিয়াস সিজার। তিনি এই দিনগুলোতে বক্তৃতা তৈরি করেছেন এবং কবিতা লিখেছেন। এসব বক্তৃতা ও কবিতা তিনি দস্যুদের পড়েও শুনিয়েছেন। দস্যুদের কাছ থেকে প্রশংসা না পেয়ে তিনি তাদের মূর্খতা নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। শুধু তা–ই নয়, সিজার দস্যুদের বিভিন্ন খেলা ও কসরতেও অংশ নেন। তবে তিনি একবারের জন্যও নিজেকে বন্দী হিসেবে মেনে নেননি। এমন ব্যবহার করেছেন, যেন তিনি রাজা আর দস্যুরা প্রজা। মাঝেমধ্যে তিনি দস্যুদের মৃত্যুদণ্ডের হুমকিও দিয়েছেন। তবে সে হুমকি তারা কানে তোলেনি। সিজারের হুমকিকে দস্যুরা কৌতুক হিসেবে ধরে নিয়েছিল।
টাকা দিয়ে জুলিয়াস সিজারকে মুক্ত করা হয়। পরে সিজার গ্রিসের মিলিতাসে নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করতে উঠেপড়ে লাগেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অল্প সময়ে তিনি তা করতে সফলও হন। জলদস্যুদের নির্মূলে একের পর এক অভিযানে নামেন সিজার। জানতে পারেন, যে দ্বীপ থেকে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন, সে দ্বীপে তখনো বহাল তবিয়তে আছে দস্যুরা। সিজার ওখানকার সব দস্যুকে আটক করে বিচারের আওতায় আনেন।
কিন্তু যখন তিনি দেখেন, এশিয়ার গভর্নর জলদস্যুদের বিচারের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত, তখন তিনি নিজেই বন্দিশালা থেকে দস্যুদের বের করে ক্রুশে ঝুলিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করেন। আর যারা প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল, তাদের গলা কেটে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সিজার সেদিনই নিয়েছিলেন, যেদিন দস্যুরা তাঁকে উপহাস করেছিল।
সূত্র: ব্রিটানিকা ডটকম, হিস্ট্রি ডটকম ও ওয়ার হিস্ট্রি অনলাইন