গরুদের লেখা রচনায় আমরা যেমন

আমরা অর্থাৎ মানুষেরা পুরো ছাত্রজীবন ধরেই গরু নিয়ে রচনা লিখেছি। যেহেতু এখন দিন বদলেছে, অতএব এই দিন বদলের হাওয়া গরুদের গায়ে লাগতেই পারে। তাই গরুরাও উল্টো রচনা লিখতে পারে মানুষকে নিয়ে। লিখতে পারে মানে? আরে লিখেই তো ফেলেছে। গরুদের খাতা থেকে সেই সব রচনা সংগ্রহ করে তুলে ধরা হলো এখানে...

সদ্য জন্ম নেওয়া একটি বাছুরের লেখা রচনা

মানুষ একটি অত্যন্ত ভালো জাতের প্রাণী। তাদের আমার মতো একটা শিংবিহীন মাথা রয়েছে। হাত-পা তো রয়েছেই। তবে সেগুলো আমার মতো নয়। কারণ, মানুষ পায়ে জুতা পরে। কবজিতে থাকে ঘড়ি। হাতে থাকে মোবাইলফোন। মানুষের দুটি চোখ রয়েছে। এই চোখের ওপর কেউ কেউ ঢাকনা লাগায়। এই ঢাকনার নাম চশমা। মানুষ আমাকে খুবই খাতির-যত্ন করে। তবে যতই খাতির-যত্ন করুক না কেন, রাতেরবেলা আমাকে তাদের মতো বালিশে শুতে দেয় না। মানুষেরও আমাদের মতো একটা একটা করে বাচ্চা হয়। তবে তারা থাকে জম্মের অলস। আমরা হাঁটি এক ঘণ্টায়, আর তারা এক বছরেও হাঁটতে পারে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মানুষের বাচ্চাদের জন্মের সময়ও তো লেজ থাকেই না, এমনকি পরবর্তী সময়েও আর গজায় না বলে জানা যায়। মানুষ আমাদের নিয়ে মাঠে গেলেও আমাদের সঙ্গে ঘাস খায় না। তবে কিছু কিছু ঘাস বাড়িতে এনে রান্না করে খায়, যাকে তারা শাক বলে। তাদের গায়ে জামা থাকায় আমাদের মতো যেখানে-সেখানে হিসুটিসু করতে পারে না। এখন পর্যন্ত মানুষকে ভালো জীব বলেই ধারণা হচ্ছে। তবে মায়ের কাছ থেকে পুরো বৃত্তান্ত জেনে নিতে হবে।

বকনা বাছুরের লেখা রচনা

মানুষ একটি স্বার্থপর প্রজাতির জীব। কারণ, ওরা তক্কে তক্কে থাকে, কখন আমার মায়ের দুধ দুইয়ে খেয়ে ফেলতে পারবে। নিজেরা তো দুধ খায়ই, বাকিটা বিক্রি করে দেয় মোড়ের চায়ের দোকানদারের কাছে। মানুষের কান, নাক, গলা সবই আছে। শুধু গলায় আমার মতো দড়ি থাকে না। তবে কেউ কেউ যে গলায় দড়ি পরে না, তা কিন্তু নয়। এই দড়িকে অবশ্য চেইন বা মালা বলা হয়। তবে এই দড়ি দিয়ে তাদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় না। মানুষের মাথায় কালো কালো লোম থাকে। তারা সেই লোম ছোট করার জন্য মাসে একবার স্যালনে যায়। মানুষ কানে আমাদের চেয়ে অনেক খাটো। তবে সেই কানে তারটার লাগিয়ে তাদের গান শুনতে দেখা যায়। মানুষ এমনিতে কথা বলতে পারলেও ঘুমালে আর কথা বলতে পারে না। উপকারী প্রাণী হিসেবেও মানুষ মন্দ নয়। কারণ, তারা প্রতিদিন সকালে আমাদের থাকার ঘর পরিষ্কার করে দেয়। এর জন্য কোনো প্রকার চাঁদা দাবি করে না।

ষাঁড়ের লেখা রচনা

মানুষ গৃহপালিত কঠিন দিলবিশিষ্ট প্রাণী। কারণ, এমন কঠিন কাজ নেই, যা তারা আমাকে দিয়ে করায় না। তারপর আবার যখন-তখন ফট করে বাড়ি বসিয়ে দেয় বেত দিয়ে। যা হোক, মানুষের নাক, কান, মুখ সবই আছে, শুধু আমাদের মতো ডাগর ডাগর চোখ নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র। তারা তাদের পা দিয়ে লাথি মেরে ফুটবলও খেলতে পারে আবার হাঁড়ি-পাতিলও ভাঙতে পারে। এ ছাড়া আমরা যখন লেজ উঁচিয়ে দৌড়ানি দিই, তখন ব্যাপক বেগে দৌড়ও দিতে পারে। মানুষ গান গাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে তাদের মধ্যকার কারও কারও গান এতটাই আপত্তিকর যে আমরা সেই গান শুনে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে যেতে উদ্যত হই। মানুষ তাদের কথাবার্তায় রেফারেন্স হিসেবে গরুর কথা টেনে আনে। যেমন: ‘এই, এমন ষাঁড়ের মতো চ্যাঁচাচ্ছিস কেন’, ‘বলদের মতো কথা বলবি না তো’ ইত্যাদি। মানুষের কাছে টিভি নামের একটা যন্ত্র আছে, যা দেখতে দেখতে তারা ঘুমায়। আর তারা ঘুমানোর সময় খুবই সাবধানে ঘুমায়। যে কারণে এক মশারিতেই তাদের চলে যায় ম্যালা দিন। অথচ আমাদের মশারি রাতে টানিয়ে দিলে সকালেই শেষ। তাই আমাদের উচিত মানুষের যত্ন নেওয়া। অন্তত শিঙের আগায় ঝোলানোর অপচেষ্টা না করা।

গাভির লেখা রচনা

মানুষ একটি দুগ্ধলোভী প্রাণী। আমার দুধ দোহানোর জন্য তাদের সে কী আগ্রহ। মানুষ আসলে খুবই ভোজনরসিক। বিশেষ করে যখন সস্তায় এবং ফ্রিতে কোনো কিছু পায়। ফ্রিতে পেলে নাকি তারা আলকাতরাও খেয়ে ফেলতে পারে। তবে আমাদের খইল-কুঁড়া খেতে পারে কি না, সেটা অবশ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তারা ভোজনরসিক হওয়ার কারণে তাদের কারও কারও পেট আকার-আকৃতিতে আমাদের পেটের প্রায় কাছাকাছি চলে যায়। সেই পেটের যন্ত্রণায় তারা তখন ভালো করে প্যান্ট পরতে পারে না। মানুষের মাথায় বেশ চমৎকার টাক পড়ে। এই টাক দেখতে অনেকটাই গাছপাকা বেলের মতো। মানুষ পানি খাওয়ার জন্য আমাদের মতো গামলা ব্যবহার না করে গ্লাস বা বোতল ব্যবহার করে। পা থাকা সত্ত্বেও তারা গাড়ি ব্যবহার করে। তারা এমনিতে সব সময় দোপেয়ে সেজে থাকলেও হামাগুড়ি দিয়ে খাটের নিচে যাওয়ার সময় চারপেয়ে সাজে। মানুষকে নিয়ে আরও লেখার ছিল। কিন্তু বাচ্চাটা বড্ড ডিস্টার্ব করছে।

গাড়ি টানা গরুর লেখা রচনা

মানুষ অত্যন্ত বিবাহপ্রবণ প্রাণী। যে কারণে অতীতে আমাদের দিয়ে গাড়ি বানিয়ে সেই গাড়িতে করে শুধু নতুন বউ আনত। এখন অবশ্য ব্যাপক হারে কমেছে। না না, বিবাহ কমেনি। কমেছে আমাদের ব্যবহার। দেখতে-শুনতে মানুষকে ভালোই মনে হয়। তবে সমস্যা হলো, তারা আমাদের ভাষা বোঝে না। ভাষা শেখার জন্য তারা এত এত কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়, কিন্তু আমাদের মানে গরুদের ভাষাটা কেন যে শিখে নেয় না! মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা বাঁশের ফুটায় ঠোঁট লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে পারে। এই জিনিসটাকে অবশ্য বাঁশি বলা হয়। আর যারা ফুঁ দেয়, তাদেরকে নাকি বলা হয় রাখাল। রাখাল শব্দটা শুনে খালের মতো মনে হলেও এটা কোনো খাল নয়। বরং তাদের মধ্য থেকে যারা আমাদের জন্য খানাপিনার ব্যবস্থা করে থাকে তারাই রাখাল। সব মিলিয়ে মানুষ জাতটা বেশ ভালো একটা জাত। তবে খুশিমনে তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করা যায় না। কারণ, আমাদের বুক আর মানুষের বুক কেমন যেন খাপ খেতে চায় না। গঠনটাই কেমন যেন। বেখাপ্পা।