চাইলেই কি অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে পারবে গুগল?

সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে গুগলের সম্পর্ক কেমন হবে, তা ঠিক করে দিতে চায় অস্ট্রেলীয় সরকার। সে সম্পর্ক তত্ত্বাবধানে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, সংবাদ প্রকাশকদের অর্থ পরিশোধ গুগল-ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘অনিবার্য’ও বলা হয়েছে। এদিকে গুগল বলছে, সরকার যদি সে আইন থেকে সরে না আসে, তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে তারা। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে চলুন কয়েকটি প্রশ্নে দেখে নেওয়া যাক দুপক্ষের অবস্থান।

অস্ট্রেলিয়া বলছে ‘অনিবার্য’, গুগল বলছে ‘অসম্ভব’
রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে চায় কেন গুগল?

গুগলের সার্চ রেজাল্টে সংবাদের যে অংশ দেখানো হয়, কিংবা গুগলের প্ল্যাটফর্মে কোনো খবর শেয়ার করা হলে তার জন্য সংবাদ প্রকাশকদের অর্থ পরিশোধ করতে হবে কি না, তা নির্ধারণ করতে নতুন আইন করার প্রস্তাব করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। প্রস্তাবিত আইনে প্রতিটি সংবাদ প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুগলের বাণিজ্যিক চুক্তি থাকার কথা বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় চুক্তি না হলে জোরপূর্বক নিষ্পত্তি করে দেবেন আদালত।

গুগল বলছে, এমনটা হতে পারে না। গুগলের আঞ্চলিক পরিচালক মেল সিলভা বলেছেন, ‘যদি এটা আইনে পরিণত হয়, তবে অস্ট্রেলিয়ায় গুগল সার্চ বন্ধ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’ গুগলের সে হুমকির পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গুগলকে বলেছেন, ‘আমরা হুমকিতে সাড়া দিই না।’

অস্ট্রেলীয়দের গুগলের বিকল্প কী?

অস্ট্রেলিয়ার সার্চইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গুগল ব্যবহার করে। বৈশ্বিক চিত্রও এমনই। তবে বিকল্প যে নেই, তা না। বিং আছে, ইয়াহু আছে। আবার ডাকডাকগোর মতো সেবাও আছে, যেখানে ব্যবহারকারীর প্রাইভেসিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে অ্যালেক্সার সবচেয়ে বেশি দেখা ওয়েবসাইটের তালিকায় গুগল ১ নম্বরে থাকলেও ইয়াহু আছে ১১ নম্বরে। বিং আরও পিছিয়ে, ৩৩তম স্থানে।

গুগল বন্ধ হলে ব্যবহারকারীদের কী হবে?

২০১৮ সালে ‘ওয়্যার্ড’ সাময়িকীর এক লেখক ওয়েবে তথ্য খোঁজার জন্য টানা তিন মাস কেবল বিং ব্যবহার করে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন পুরোনো নিবন্ধ খোঁজার বেলায় তাঁকে কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ গুগলে তথ্য খোঁজার যেসব কৌশল তিনি এত দিন ধরে শিখেছেন, তা বিংয়ের বেলায় সব সময় ভালো ফল দেয়নি।

তা ছাড়া, গুগল কেবল সার্চইঞ্জিন নয়। এর ওয়েব সার্চ প্রযুক্তি জিমেইল, গুগল ম্যাপস, ইউটিউবসহ অনেক সেবায় ব্যবহার করা হয়। তবে গুগলের হুমকি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে অন্যান্য অ্যাপেও প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার না। অবশ্য এসব অ্যাপেরও বিকল্প আছে। তবে সেগুলো খুব বেশি ব্যবহার হয় না। অনেকের কাছে গুগলের অ্যাপগুলো অত্যন্ত জরুরি।

হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে যখন গুগলের সেবা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল, পশ্চিমা দেশগুলোতে স্মার্টফোন বিক্রি কঠিন হয়ে গিয়েছিল হুয়াওয়ের জন্য।

গুগলের সেবা না থাকায় পশ্চিমা দেশগুলোতে স্মার্টফোন বিক্রি কঠিন হয়ে গিয়েছিল হুয়াওয়ের জন্য
রয়টার্স

গুগলের কাছে অস্ট্রেলিয়ার মূল্য কত?

চীনা সরকারের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় অতীতে দেশটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল গুগল। চীনের সঙ্গে তুলনা করলে গুগলের কাছে অস্ট্রেলিয়া বেশ ছোট বাজার। ২০১৯ সালে গুগল অস্ট্রেলিয়ার মোট আয় ছিল ৪৮০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা প্রায় ৩১ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা, যার সিংহভাগ বিজ্ঞাপনী আয়। আর ব্যয় বাদ দিলে দেশটি থেকে নিট লাভ ৮৭৭ কোটি টাকার কিছু বেশি।

সে তুলনায় গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের হাতে সাময়িক ক্ষতি পোষানোর জন্য অন্তত ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ নগদ অর্থ আছে। অবশ্য ব্যাপারটি কেবল নগদ অর্থের নয়।

অস্ট্রেলীয়রা চাইলে গুগলের মার্কিন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে না?

গুগল চাইলে এটা সম্ভব হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া থেকে কেউ গুগলে প্রবেশ করলে সে ব্যবহারকারীকে মার্কিন বা অন্য কোনো দেশীয় সংস্করণে নিয়ে যাওয়া একটা সম্ভাব্য সমাধান। এতে সার্চ রেজাল্টে স্থানীয় ফলাফল দেখাবে না ঠিক, তবে গুগলের সেবা ব্যবহারযোগ্য থাকবে। আর গুগল যদি অস্ট্রেলিয়া থেকে কাউকে ঢুকতে না দেয়, তো ব্যবহারকারী চাইলে ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। তবে এত ঝামেলা পোহাতে চাইবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

গুগলকে কত অর্থ পরিশোধ করতে বলছে অস্ট্রেলিয়া?

অর্থের পরিমাণ কত, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। প্রস্তাবিত আইনে দর-কষাকষির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে গুগল যদি কোনো সংবাদ প্রকাশকের সঙ্গে রফা না করতে পারে, তবে একজন বিচারক পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবেন।

তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছে, তারা সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ‘ন্যায্য’ মূল্য চায়। কারণ পত্রিকার ছাপা সংস্করণে বিজ্ঞাপনী আয় ক্রমেই কমছে। গত ১৫ বছরে কমেছে তিন-চতুর্থাংশ। অন্যদিকে গুগল ও ফেসবুকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন আয় বেড়েছে।

সূত্র: বিবিসি