চিনাবাদাম আসলে বাদাম নয়

পৃথিবীতে কত প্রকারের বাদাম পাওয়া আর সেগুলো কী কী? চিনাবাদামই–বা কেন বাদাম নয়? বাদামের দলে না পড়লেও চিনাবাদাম খেলে কেমন উপকার মেলে? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন...

বাদাম কত রকমের

বাদাম অনেক প্রকার হতে পারে। অতি পরিচিত কিংবা জনপ্রিয় বাদামগুলো হলো: আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, চেস্টনাট, হ্যাজলনাট। এগুলো ছাড়াও ব্রাজিল নাট, পিক্যানস, পাইন বাদামসহ আছে নানা রকমের বাদাম।

চিনাবাদাম কেন বাদাম নয়

বাদামের বৈশিষ্ট্য না থাকলেও চিনাবাদামে পুষ্টিগুণ আছে ঠিকই
পেক্সেলস ডটকম

মজার ব্যাপার হলো, আমরা যে চিনাবাদাম খাই, উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় এটি কিন্তু বাদাম নয়, বরং শস্য। তার কারণ, এটি মাটির নিচে হয়। তাই এর আরেক নাম গ্রাউন্ড নাট বা মাটির বাদাম। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় বাদাম হতে গেলে সেটিকে বড় কোনো গাছে ফল বা বীজ আকারে হতে হবে। যেমনটা আখরোট, কাজু বা কাঠবাদাম হয়ে থাকে। তবে বাদামের স্বাদের সঙ্গে এবং পুষ্টিগুণে মিল থাকায় একে চিনাবাদাম বলে ডাকা হয়।

কোন বাদাম কোথায় থাকে

গাছের ডালে ফলের সঙ্গে ঝুলে আছে কাজুবাদাম
সংগৃহীত

চিনাবাদাম, কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম—এগুলোই আমাদের দেশে বেশি পাওয়া যায়। চিনাবাদাম সবচেয়ে সহজলভ্য। এ কারণেই হয়তো একে দেশি বাদাম বলেও চিনি আমরা। তবে পেস্তাবাদাম, চেস্টনাট, হ্যাজলনাটও পাওয়া যায় বাজারে। মজার ব্যাপার হলো, চিনাবাদাম ছাড়া বাকি সব বাদামই গাছে হয়। গাছের তো শ্রেণিবিভাগ আছে—বৃক্ষ, গুল্ম ও বীরুৎ। বেশির ভাগ বাদামগাছই বৃক্ষের অন্তর্ভুক্ত। তাই বাদাম পাওয়া যায় বিশাল গাছের ফল বা বীজ হিসেবে।

চিনাবাদাম ডালেই ধরে তবে পরে তা মাটির নিচে চলে যায়
সংগৃহীত

আর চিনাবাদামের গাছ বীরুৎ প্রজাতির উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। তাই চিনাবাদাম পাওয়া যায় বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদের মূলের সঙ্গে—মাটির নিচে। প্রথমে কিন্তু এই বাদাম গাছের ডালেই ধরে, পরে তা মাটির নিচে চলে যায়। তবে সব বাদামই খাদ্য হিসেবে আমাদের জন্য উপকারী। বিশেষ করে শিশু–কিশোরদের জন্য নিয়মিত বাদাম খাওয়া খুবই ভালো অভ্যাস। তবু কারও খালি বাদাম খেতে ইচ্ছে না করলে বাদামের গুঁড়া অথবা মাখন (যেমন: পিনাট বাটার) বানিয়ে খাওয়া যায়। কাঠবাদাম, হ্যাজলনাট ও চেস্টনাটের জুসের স্বাদও বেশ মজার।

আখরোট ফলের ভেতরে বাদাম
সংগৃহীত

বাদামের পুষ্টিগুণ

বাদাম খেলে অপুষ্টি দূর হয়
পেক্সেলস ডটকম

পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো আমাদের জানিয়েছেন, বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে। ফলে এটি শিশুদের বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী। সঙ্গে থাকে প্রচুর ক্যালরিও। ১০০ গ্রাম চিনাবাদামে প্রায় ৫৬৯ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি থাকে স্নেহ, ম্যাগনেশিয়াম, জিংকসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান। যারা অপুষ্টিতে ভোগে, তারা নিয়মিত বাদাম খেলে অপুষ্টি দূর হবে। তবে একসঙ্গে অনেক বাদাম খাওয়াও ঠিক নয়, তখন হজমের সমস্যার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। তাই প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি বাদাম না খাওয়া উত্তম।

আরেকটি ব্যাপার হলো, বাদাম শিশুদের জন্যও যেমন উপকারী, বড়দের জন্যও তা–ই। এতে কোনো শারীরিক ঝুঁকি না থাকায় যেকোনো মানুষই চাইলে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। আর আমাদের দেশে চিনাবাদাম সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ায় এটিকেই আমরা খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।