জাকারবার্গের টাকার ফাঁদে পা দেওয়ার পর

একটু থামুন

রাকিব সাহেব কাউকে সালামি দেন না। ছোটবেলায় জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সালামি নেনওনি। চিরকালই তিনি সালামির ঘোর বিরোধী। তার মতে, রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাস শেষেও যদি অর্থলোভ না যায়, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালকের সঙ্গে বাচ্চাগুলোর পার্থক্য থাকল কই?

তবে এ বছর পোলাপানের বুদ্ধি দেখে তিনি তাজ্জব বনেছেন। ফেসবুকের নিউজফিডজুড়ে ঈদের চাঁদ আকাশে উঠিয়ে বিকাশে অর্থ চাওয়ার স্লোগান। কী বেহায়া! কী বেহায়া! ছোটবেলায় সালাম দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতেন বড়দের সামনে, আর এরা কিনা ঘোষণা দিয়ে সালামি চায়।

ফেসবুক স্ক্রল করতে করতেই রাকিব সাহেবের চোখ আটকে গেল একটা পোস্টে, ‘চাচা-মামু-খালা-খালু, যে চিপায় থাকেন, শোনেন, এই ঈদে নিজের বিকাশ নম্বর কমেন্টে দিন, বুঝে নিন উপহার। ফেসবুকের মাধ্যমে সবার কাছে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন মার্ক জাকারবার্গ।’

খটকা লাগল রাকিব সাহেবের। সালামি-টালামি না চেয়ে টাকা দেওয়ার পোস্ট? ছোট পোলাপানগুলার মশকরা না তো?

কমেন্ট করলেন, ‘এইসব তো ভুয়া।’

দুই মিনিট পরই ‘নগদ-বিকাশ মারামারি চাই’ পেজ থেকে রিপ্লাই এল, ‘ওই মিয়া, মশকরা করেন? কুটি কুটি টাকার মালিক জাকু আপনার সাথে ভন্ডামি করব? আমি এইমাত্র ৫ হাজার টাকা পাইলাম।’

রাকিব সাহেব একটু থতমত খেয়ে গেলেন। বিকাশে ব্যালান্স আছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। সঙ্গে আরও পাঁচ হাজার এলে মন্দ হয় না। রিপ্লাইয়ের রিপ্লাই দিলেন সঙ্গে সঙ্গে, ‘ভাই, মনে কষ্ট নিয়েন না। এই যে আমার নম্বর...।’

কমেন্ট করে ধৈর্য্য নিয়ে ফোন হাতে বসে রইলেন রাকিব সাহেব। সর্বশেষ এতটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন সেই ম্যাট্রিক পরীক্ষায় শাহেদের খাতা নকল করার সময়। টাকা তো আর সালামির মতো ঠাট্টা–মশকরার বিষয় না।

ক্রিং ক্রিং...

কাঁপা কাঁপা হাতে রাকিব সাহেব ফোন ধরলেন, ‘হ্যালো!’

জবাব এল, ‘আমি ফেসবুক অফিস থেকে নাহিদ বলছি। আপনার পিন নম্বরটা...।’

একদিন পর...

ঘরের সবাই অবাক হয়ে রাকিব সাহেবকে দেখছে। প্রতি ঈদে বাচ্চারা সালামি চাইলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন। আর আজ পোলাপানের কাঁধে হাত রেখে বিড়বিড় করছেন, ‘নসিব, নসিব...সবই নসিব!’