জীবিতকে ‘মৃত’ বানানো শিখতে বাংলাদেশে এলিয়েনরা

পেক্সেলস

জীবিত ব্যক্তিকে ‘মৃত’ বানানো শিখতে বাংলাদেশে অবতরণ করেছে একঝাঁক এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী। তবে তাদের দেখতে পারছে না এ দেশের মানুষ। এসব প্রাণী সত্যিকারের নাকি ভূতশ্রেণির, তা নিয়ে এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভিনগ্রহের এই প্রাণীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের বাংলাদেশে অবতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে সেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিসংবলিত কাগজটি থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই সব হরফ অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফলে নথি হিসেবে কাগজটি উপস্থাপন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এখন শুধু সাদা কাগজ দেখা যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জীবিত মানুষকে ‘মৃত’ বানানো শিখতে গিয়ে হয়তো এলিয়েনরা কাগজের ওপর সর্বপ্রথম সেই পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগের পাইলট প্রজেক্ট চালু করেছে। ফলে জীবিত ব্যক্তিদের কাগজে-কলমে মৃত থাকার বিষয়টির মতোই উবে গেছে কাগজের লেখা।

এর আগে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুদূর এক ছায়াপথ থেকে অনেক দূর পথ মাড়িয়ে পৃথিবীতে এসেছে এই এলিয়েনরা। পৃথিবীতে অবতরণের আগে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীসংক্রান্ত বিভিন্ন চলচ্চিত্র তাঁরা অবলোকন করে। বেশির ভাগ হলিউডের সিনেমায় যুক্তরাষ্ট্রে এলিয়েনদের আক্রমণসংক্রান্ত কল্পকাহিনি সম্পর্কে তারা অবগত হয়। এলিয়েন সম্পর্কে মার্কিন মুলুকে এত চর্চা থাকায় শুরুতে সেখানেই নতুন জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করেছিল এই ভিনগ্রহের প্রাণীরা। তবে সেখানে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে নানা কথাবার্তা শুনে তারা হতাশ হয়ে যায়, ভগ্নহৃদয়ে ফিরে আসে মহাকাশযানে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাঁ-হুতাশে ভারাক্রান্ত এলিয়েনদের মনে বিষাদ ভর করেছিল। পৃথিবীতে আসতে যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয়েছে, তা এখানকার পেট্রল-ডিজেল চুরি করে পুষিয়ে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আন্তছায়াপথীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা স্থির করা যায়নি। শেষে অমীমাংসিত পরিস্থিতিতেই আরও কিছুদিন এই সৌরজগতে কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় এই এলিয়েনরা।

এক ঘণ্টার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সেই বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একদিন হুট করেই রাডারে বাংলাদেশের খবর পায় ভিনগ্রহের এই প্রাণীরা। তারা জানতে পারে, এখানে শারীরিকভাবে জীবিত মানুষ কাগজে-কলমে ‘মৃত’ হওয়ার মৌলিক গৌরব অর্জন করতে পারে। এমনকি ‘মৃত’ অবস্থাতে তারা ভোটেও দাঁড়াতে পারে। এমন খবর জানার পরই সদ্য শেখা পৃথিবীর ভাষায় এলিয়েনদের দলনেতা ‘ইউরেকা, ইউরেকা’ বলে চিৎকার করে ওঠে। তবে দলনেতা সে সময় দিগম্বর হয়ে মহাকাশযানের বাইরে ঝাঁপ দিয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

একটু থামুন

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভিনগ্রহের এই প্রাণীরা বাংলাদেশে চলতি বছরের শুরুতে প্রাথমিকভাবে অবতরণ করে। শুরুর কিছুদিন তারা মাস্ক-গ্লাভস পরে করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে চারপাশের ‘ছ্যাপাক্রান্ত’ মানুষের ‘ছ্যাপতান্ত্রিক’ আচরণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ১০ স্তরের দুটি স্পেসস্যুট পরে বাংলাদেশে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে ভিনগ্রহের প্রাণীরা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় একটি প্রবাদবাক্য তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। প্রবাদটি ছিল, ‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা।’

ভিনগ্রহের এই প্রাণীদের বাংলাদেশ অভিযানের নেতা ‘ৎৎৎৎদদদদ’ (বিজ্ঞপ্তিতে এভাবেই উল্লেখ করা ছিল) বলেছে, শারীরিকভাবে জীবিতদের কাগজে-কলমে ‘মৃত’ বানানো এবং ‘মৃত’ অবস্থাতেই ভোটে দাঁড়ানোর কৌশল শিখতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাঁরা যোগাযোগ করেছে। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে। তবে মাসাধিককাল পার হলেও এখনো ‘যথাযথ’ প্রক্রিয়ার যথাযথ খোঁজ কোনো কার্যালয়ই পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত তারা ১৫টি কার্যালয়ের সবগুলো তলা এবং সব কক্ষে ঘুরেছে (শৌচাগারসহ)। কাউকে কাউকে ‘কিছু কিছু’ দিয়ে খুশিও করেছে। তবে কেউ এখন পর্যন্ত ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ বলে হাসিমুখে যথাযথ প্রক্রিয়াটি হাতে-কলমে দেখিয়ে দেয়নি।

এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে এলিয়েনদের একটি প্রতিনিধিদল। এ ব্যাপারে একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় একজন মাস্কবিহীন মানুষের কাছ থেকে তাঁরা পরামর্শ পেয়েছিল। ওই ব্যক্তিই কয়েক খিলি পানের বিনিময়ে উচ্চপর্যায়ের ‘লিংক’ দেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই ‘লিংকে’ ক্লিক করেই মই বেয়ে ওপরের দিকে উঠে যায় ভিনগ্রহের প্রাণীদের এই প্রতিনিধিদল। তবে সেখানে গিয়ে বেশ কিছু ‘বহুনির্বাচনী প্রশ্নের’ মুখোমুখি হতে হয় তাদের। কোন ধরনের প্রশিক্ষণ তারা চায়, সে বিষয়েই মূলত জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল শারীরিকভাবে জীবিত থেকে কাগজে-কলমে মৃত, কাগজে-কলমে জীবিত কিন্তু শারীরিকভাবে মৃত, শারীরিকভাবে জীবিত থেকে শারীরিকভাবে মৃত ইত্যাদি ইত্যাদি।

ভিনগ্রহের প্রাণীদের বাংলাদেশ অভিযানের নেতা ‘ৎৎৎৎদদদদ’ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আপাতত এ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসবে তারা। কৌশল শেখার ক্ষেত্রে বাছবিচার করা হবে কি না, নাকি সব কৌশলই শেখা হবে, এ নিয়ে গোল বা বর্গাকার টেবিলে আলোচনা হবে। বর্তমানে টেবিলের আকার কি হবে, তা-ই নিয়ে এ দেশের আদলে ভিনগ্রহটির কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। তা শেষ হলেই প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগপর্যন্ত ভিনগ্রহের প্রাণীরা এই সৌরজগতেই অবস্থান করবে এবং এ দেশে আর কী কী বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা নিয়ে জরিপ চালাবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছে তারা। এই সহযোগিতার বিনিময়ে ‘কিছু একটা’ উপহার হিসেবে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে ভিনগ্রহের প্রাণীদের বাংলাদেশ অভিযানের নেতা ‘ৎৎৎৎদদদদ’। তার কণ্ঠে ছিল প্রত্যয়ী সুর, ‘জীবন্মৃতদের নিয়ে খেলা হবে…।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন