টাইটানিক ডুবে যাওয়ার আগ দিয়ে যাত্রীরা যা খেয়েছিলেন

টাইটানিক—নামটি শুনলে অনেকেরই হয়তো প্রথমে চোখে ভাসে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট অভিনীত সিনেমাটির কথা। জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় সিনেমাটি ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে আগেই। বিশেষ করে টাইটানিকের গল্প নতুন করে আমদর্শকের কাছে তুলে ধরার কৃতিত্বটা ক্যামেরনেরই। এবার আসুন এই টাইটানিকের বিলাসবহুল রসুইঘরের কথা শোনা যাক...

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল যাত্রা শুরুর সময় টাইটানিক
ছবি: উইকিপিডিয়া

বিশাল জাহাজটির পুরো নাম আরএমএস টাইটানিক। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল টাইটানিক সাগরে ভেসেছিল। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে রওনা দিয়েছিল নিউইয়র্ক সিটির উদ্দেশে। চার দিন চলার পর ১৪ এপ্রিল স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরে টাইটানিক ধাক্কা খায় একটি হিমশৈলতে। এরপর ধীরে ধীরে সলিলসমাধি ঘটে টাইটানিক ও এর অনেক যাত্রীর।

টাইটানিকের এই খাবারের তালিকা ২০১৫ সালে বিক্রি হয় প্রায় ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায়
ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিকে যাত্রীদের ছিল তিনটি শ্রেণি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। টাইটানিক ছিল মূলত সে সময়ের বিলাসিতার অন্যতম প্রতীক। প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের টাইটানিক যাত্রায় তার প্রতিফলনও ছিল বেশ। হিমশৈলে ধাক্কা খাওয়ার পরও তাতে ব্যত্যয় হয়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট খাবারের তালিকায়।

‘টাইটানিক’ সিনেমায় ডিনারের দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের দুপুর ও রাতের খাবারের যে তালিকা নির্ধারিত ছিল, তাতে বেশ কয়েকটি পদ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। খাবারের সেই পদগুলোর বিস্তারিত এখন জেনে নেওয়া যাক।

১. পোচড স্যামন উইথ মুসেলিন সস অ্যান্ড কিউকাম্বারস

ছবি: সংগৃহীত

১৪ এপ্রিলের রাতের খাবারে কিছু যাত্রী খেয়েছিলেন এই পদ। মুসেলিন সস নামের একটি বিশেষ সস দিয়ে স্যামন মাছ রান্না করা হয়েছিল। মাছের পাশে সুন্দর করে কাটা ছিল শসার টুকরো।

২. চিকেন আ লা মেরিল্যান্ড

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যের নামে এই পদের নামকরণ করা হয়েছিল। এতে ছিল ভাজা মুরগি ও কষানো ঝোল। কখনো কখনো এতে মুরগির সঙ্গে কলার টুকরাও থাকত।

৩. কক আ লিকি

ছবি: সংগৃহীত

এটি একধরনের স্কটিশ স্যুপ। এটি মূলত দুপুরে দেওয়া হয়েছিল। এতে থাকে পেঁয়াজ, মুরগি ও ভাত।

৪. রোস্টেড স্কোয়াব অ্যান্ড ক্রেস

ছবি: সংগৃহীত

একটি কচি কবুতরের মাংস রোস্ট করে দেওয়া হতো এই পদে। টাইটানিকের শেষ রাতের খাবারের সপ্তম পদ ছিল এটি।

৫. এগ আ লাশোনতাইয়ু

ছবি: সংগৃহীত

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিলের দুপুরের খাবারের তালিকায় ছিল এই পদ। ডিম ও অ্যাসপারাগাস দিয়ে তৈরি করা হয় এই খাবার।

৬. কনসোমি ওলগা

ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিকের ডিনারের মেনুতে ছিল এটি। গরুর মাংসের সঙ্গে স্টার্জন মাছ মিশিয়ে তৈরি করা হতো কনসোমি ওলগা।

৭. কর্নড অক্স টাং

ছবি: সংগৃহীত

গরুর জিভ দিয়ে তৈরি করা হয় এই বিশেষ খাবার। টাইটানিকের লাঞ্চের মেনুতে এর স্থান হয়েছিল।

৮. পাতে দি ফোয়ঁ ঘ্যাঁ

ছবি: সংগৃহীত

হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি হতো এই পদ। টাইটানিকে ১৪ এপ্রিলের ডিনারে এই পদ পরিবেশন করা হয়েছিল।

৯. ম্যাশড, ফ্রায়েড অ্যান্ড বেকড জ্যাকেট পটেটোস

ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিক যেদিন হিমশৈলে ধাক্কা খেল, সেদিন দুপুরের খাবারের তালিকায় ছিল ম্যাশড, ফ্রায়েড অ্যান্ড বেকড জ্যাকেট পটেটোস। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি আলু দিয়ে তৈরি পদ। এটি বেশ সুস্বাদু ছিল বলেই জানা যায়।

১০. পিচেস ইন শারট্রেজ জেলি

ছবি: সংগৃহীত

খাবারের এই পদটি বেশ রংচঙা। ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিলের ডিনারে এই পদ পরিবেশন করা হয়েছিল। রাতের খাবারের ১০টি পদের একটি ছিল পিচেস ইন শারট্রেজ জেলি। এটি একটি ডেজার্ট আইটেম। সাধারণত মূল খাবারের পর এটি পরিবেশন করা হয়।

১১. ওলডর্ফ পুডিং

ছবি: সংগৃহীত

এটিও ডেজার্ট। ডিনারের শেষ পর্বে এটি পরিবেশন করা হয়েছিল টাইটানিকে। আপেল ও ওয়ালনাট দিয়ে তৈরি করা হতো ওলডর্ফ পুডিং।

তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডটকম, ডাউনটন অ্যাবি কুকস, ডেলিশ ডটকম, মেন্টাল ফ্লস, দ্য ফিস্ট পডকাস্ট ডটঅরগ, ম্যাশেবল ডটকম ও এনপিআর ডটঅরগ