টাকা সাদা করার মেশিন কোথা পাই

কার্টুন: তুলি

টাকা ভালো লাগে না বা টাকা দেখলে বিরক্তি বোধ হয়—এমন মানুষ বোধ হয় এই সৌরজগতে সার্চলাইট জ্বালিয়ে বা টেলিস্কোপ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনে সন্দেহ থাকলে একবার সার্চলাইট জ্বালিয়ে দেখে নিতে পারেন। হাবল টেলিস্কোপে চোখ রাখার জন্যও আবেদন করা যায়। তবে তাতে কি ফল বদলাবে?

বদলানোর আশা করা বৃথা। যেহেতু ‘বৃথা’, তাই চেষ্টা করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। বরং এক পা বাড়িয়ে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যাওয়া ভালো। সেটি হলো, কোন টাকা ভালো লাগে? আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, এ দেশে দুই ধরনের টাকা আপাতত আছে। সেগুলো হলো সাদাটাকা ও কালোটাকা। কিন্তু কোনটা বর্তমানে বেশি আদরণীয়, সেটি বুঝে নিতে হবে। না বুঝলে পস্তাতেও হতে পারে। কারণ, স্রোতের সঙ্গে থাকাই লাভজনক, নইলে বিরুদ্ধ স্রোতে নৌকা বাইতে গেলে হাতের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

বর্তমানের ট্রেন্ড কেমন, সেটি বোঝার জন্য সংবাদমাধ্যমে চোখ বোলানো যেতে পারে। খবরে প্রকাশ, এ বছর কালোটাকা সাদা করেছেন প্রায় ১০ হাজার করদাতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাকি নগদ টাকাই রং বদলেছে, কালো থেকে সাদা হয়েছে। আর কালো থেকে সাদা হওয়া টাকার মোট পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি।

সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, করোনার মধ্যে কালোটাকা সাদা করার ‘মহোৎসব’ শুরু হয়েছে। মানে বিষয়টা অনেকটা ‘টাকা যার যার, উৎসব সবার’। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে বিদেশ সংযোগ অনেক কমে গেছে। অর্থ পাচারের সুযোগ সংকুচিত হয়ে এসেছে। আর এ কারণে দেশের মধ্যে কালোটাকা সাদা হচ্ছে বেশি।

তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এভাবে পাচার বললে কারও কারও ‘দিলে’ চোট লাগতে পারে। পাচারকারীরা আপত্তি জানাতেই পারেন। এটি বিশ্বায়নের যুগ। তত্ত্ব অনুযায়ী, পুরো পৃথিবীই একটি গ্রাম। সেই গ্রামের এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় তাঁরা হয়তো টাকা পাঠাচ্ছেন। অথচ করোনা নামক ভাইরাসের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ‘পাচার’ শব্দের সম্মানসূচক প্রতিশব্দ খোঁজা যেতে পারে। এভাবে ‘পাচার’ বলে উত্ত্যক্ত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, কালোটাকা সাদা করাটা একটা ‘উৎসব উৎসব’ পরিবেশ নিয়ে এসেছে ‘করোনার চেয়েও শক্তিশালী মানুষের’ এ জনপদে। তবে জানার বিষয় হলো, টাকার রং বদলের বিষয়টি হর্তাকর্তারা কীভাবে দেখছেন? রং বদলাতে গেলে ভর্তা বানাচ্ছেন, নাকি হাসি হাসি মুখে সাদা রং সরবরাহ করছেন?

এ ক্ষেত্রে কি সাদা টাকায় আলকাতরা বা কালো রং মাখালে তা সত্যিকারের কালো হবে? এর উত্তর জানা জরুরি। এভাবেই সাদাকে কালো বানানো সবচেয়ে সহজ হবে কি না!

সংবাদমাধ্যমের খবরে যতটুকু জানা গেছে, তাতে নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়, টাকার রং বদল এখন আদরণীয় বিষয়। বদলাতে চাইলে ঠান্ডা ও গরম পানীয়—দুই-ই পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট, ব্যাংক-সঞ্চয়পত্রে রাখা টাকা ও নগদ টাকা—সব ধরনের অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। বলা হচ্ছে, কালোটাকা সাদা করার এমন অবারিত সুযোগ সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া হয়নি। আবার কালোটাকা সাদা করলে অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহিও করতে হচ্ছে না।

অর্থাৎ, কালোটাকার প্রতি কর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর থানোসের প্রতি ক্যাপ্টেন আমেরিকার চিরাচরিত আচরণের মতো নয়। বরং থানোস এখন ক্যাপ্টেন আমেরিকার ‘দোস্ত’ হয়ে গেছে! সুতরাং আপনিও যদি দোস্ত হতে চান, ভেবে দেখতে পারেন। আপনি সুযোগের অভাবে সৎ কি না—মুফতে সেটিরও পরীক্ষা হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হলো, যাঁরা ‘দোস্ত’ হওয়ার যোগ্যতা ও সম্মান অর্জন করতে পারবেন না, তাঁরা কী করবেন? দেখা যাচ্ছে, সম্মানিত হতে হলে আগে কালোটাকার মালিক হতে হবে। এরপর সেগুলো সাদা বানানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কি সাদা টাকায় আলকাতরা বা কালো রং মাখালে তা সত্যিকারের কালো হবে? এর উত্তর জানা জরুরি। এভাবেই সাদাকে কালো বানানো সবচেয়ে সহজ হবে কি না!

সমস্যা হলো, কালোটাকা সাদা বানানোর মেশিন তো অন্যের হাতে। আচ্ছা ঘরে ঘরে টাকা সাদা বানানোর মেশিন বসানো যায় না? এতে কিন্তু দেশের কুটিরশিল্প এগিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। হয়তো একদিন কালোটাকা সাদা বানানোর খাতে আমরা বিদেশি মুদ্রাও অর্জন করতে পারব। সেই মুদ্রা কালো হলেও সমস্যা নেই। সাদা রং তো আমাদের আছেই, তাই না!