ট্রাম্পের ফেসবুক ও টুইটার আইডি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক আইডি ফিরিয়া আনতে বদ্ধপরিকর তাঁর ভক্তরা
ছবি সম্পাদনা: একটু থামুন

গণতন্ত্রের লীলাভূমিতে জননেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে ফেসবুক, টুইটারসহ আরও বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাপোর্টার্স ক্লাব বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে বিশৃঙ্খলাকারীদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবেও চিহ্নিত করেছে এই সমর্থক গোষ্ঠী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সাপোর্টার্স ক্লাব বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে জানায়, যেভাবে মার্কিন মুলুকে জননেতার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি এবং এটি ভবিষ্যতে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার নিকৃষ্ট এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘স্যার’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বা বিরোধী দল—যেকোনো দলেরই কথা বলা বা মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা শুভ লক্ষণ নয়। এর ফলে বিরোধী বা বিদ্রোহী মতকে দমনের একটি জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো।

বিবৃতিতে জাকারবার্গকে জিকু নামে অভিহিত করে বলা হয়, ‘এই ইতিহাস অনেকেই জানেন না। এই জিকু সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে নাম নিয়েছে জাকারবার্গ। অতীত ভুলে বসেছে এই আইটি গুন্ডাটা!’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কি ফিরিয়ে দেবেন মার্ক জাকারবার্গ?
এএফপি

বিবৃতিতে বলা হয়, জো বাইডেন যে ক্ষমতার ঝান্ডা হাতে নিতে যাচ্ছেন, তা রক্তে রঞ্জিত। সেখানে হায়েনার ছায়া রয়েছে। জনমত এবং জনবিক্ষোভের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেভাবে কংগ্রেসকে অবরুদ্ধ করে জো বাইডেন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছেন, সেটি বিশ্ব গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো অধ্যায় রচনা করল।

বিবৃতিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের উদ্দেশে বলা হয়, ‘জাকারবার্গ সাহেব, আপনার যদি মনে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক বার্তা জনবিরোধী বা সহিংসতা সৃষ্টি করছে, তাহলে যখন গত দশকের গোড়ায় আপনার এই ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আরব বসন্ত নামক বিপ্লবের অভ্যুত্থান হয়েছিল, সে সময় কেন আপনি সেসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেননি! কারণ, ওই বিদ্রোহগুলো সে সব দেশের ক্ষমতাসীনদের ভাষায় “অস্থিরতা” সৃষ্টি করেছিল। আর আজ তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সিরিয়ার মতো দেশগুলোর দুরবস্থা আমাদের জানা আছে! আপনার এই দ্বিচারিতার নিন্দা জানাই আমরা।’

বিবৃতিতে জাকারবার্গকে জিকু নামে অভিহিত করে বলা হয়, ‘এই ইতিহাস অনেকেই জানেন না। এই জিকু সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে নাম নিয়েছে জাকারবার্গ। অতীত ভুলে বসেছে এই আইটি গুন্ডাটা!’ বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলা হয়, ‘জিকু সাহেব, আপনার ভুলে গেলে চলবে না, যেখানে ফ্রিডম অব স্পিচের ক্যাম্পেইন চালাবেন, সেখানে জননেতাকে ব্লক মারবেন, সেটা আর যে–ই মেনে নিক, অন্তত এই সমর্থক গোষ্ঠী মেনে নেবে না! এরেই বলে হাতি খাদে পড়লে চামচিকাও লাথি মারে। কিন্তু জিকু, আপনাকে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, হাতি মরলেও লাখ টাকা...!’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে আছে গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী একটি চৌকস দল
রয়টার্স

একই সঙ্গে টুইটার কর্তৃপক্ষকেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়াকে ঔদ্ধত্য বলে উল্লেখ করে সমর্থক গোষ্ঠী। এবং তীব্র নিন্দাও প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, গত ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প সাপোর্টার্স ক্লাবের একটি চৌকস ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী দল রাজধানীর শাহবাগ থেকে হোয়াইট হাউস অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ দুই মাস তিন দিন হেঁটে, সাগর পাড়ি দিয়ে, জঙ্গলে রাত কাটিয়ে, মরুভূমিতে বারবার মরীচিকায় বিভ্রান্ত হয়ে ও খেয়ে না খেয়ে দলটি ওয়াশিংটনে পৌঁছায়। ঠিক যে সকালে পৌঁছায়, সেদিনই জো বাইডেনের জয় সত্যায়নে কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন চলছিল। আর সেখানেই ঘটে গেল ইতিহাসের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি।

সাপোর্টার্স ক্লাবের মতে, ক্যাপিটল ভবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল বহিরাগত এবং অনুপ্রবেশকারীরা
এএফপি

কংগ্রেস ভবনের বাইরে অবস্থানকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প সাপোর্টার্স ক্লাব বাংলাদেশের এক কর্মী বলেন, ‘ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে লুটপাট, হামলা আর সেলফি নেওয়া লোকেরা জননেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝান্ডা এবং নাম ব্যবহার করলেও এরা সবাই বহিরাগত এবং অনুপ্রবেশকারী। এর মধ্যে দেশটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, যে ব্যক্তি হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির চেয়ারে বসে বেয়াদব স্টাইলে সেলফি তুলছিলেন, তিনি আগে ওয়াশিংটন কাঁচাবাজার ডেমোক্র্যাট দলের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপুল ভোটে ক্ষমতায় এলে নিজের চরিত্র বদলে রিপাবলিকান মহলে পাড়ি জমান। এ ছাড়া ট্রফি হাতে নিয়ে দৌড়ানো ছেলেটি ওয়াশিংটন কলেজ ডেমোক্র্যাট শাখার স্টুডেন্ট উইংয়ের সাবেক সভাপতি। এবং এই ছেলের বাবা ফ্লোরিডা ডেমোক্র্যাট দলের ফাইসা উপজেলার সাবেক কোষাধ্যক্ষ। এরাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বিশৃঙ্খলায় রূপান্তরিত করেছে। এরা খুব কৌশলে নিজেদের রিপাবলিকান দলের ছাতার নিচে প্রতিষ্ঠিত করে এবং এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলে গত ৪ বছর ধরে।’

সবশেষে সিলিকন ভ্যালিতে ফেসবুক কার্যালয় এবং সান ফ্রান্সিসকোতে টুইটারের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাপোর্টার্স ক্লাব বাংলাদেশের বিবৃতিতে। এবং জননেতার ফেসবুক ও টুইটার আইডি খুলে না দেওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ডাকও দেওয়া হয়েছে।