দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখেন তাঁরা

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মূলত নভোযান। কিংবা বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। মহাকাশ পর্যবেক্ষণের অবজারভেটরি বলতে পারেন। আবার গবেষণাগারও। সবচেয়ে বড় কথা, অজানা মহাশূন্যে এটি পৃথিবীবাসীর ঘর। নানা দেশ, নানা জাতির মানুষ একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে। ২০০০ সালের ৩১ অক্টোবর পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম শেফার্ড, রাশিয়ার ইউরি গিদজেঙ্কো এবং সের্গেই ক্রিকালেভ। ২ নভেম্বর মহাকাশ স্টেশনে ভেড়ে তাঁদের বহনকারী রাশান সয়ুজ নভোযান। সেই যে শুরু হলো, আজ পর্যন্ত মহাকাশ স্টেশন কখনো মানবশূন্য থাকেনি। সে দিনটির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলুন আজ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক চমকপ্রদ ১০টি তথ্য।

নানা দেশের নভোচারীরা কাজ করেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। এখানে অবশ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নভোচারীদের দেখা যাচ্ছে
নাসা

খালি চোখেই দেখা যায়

রাতের আকাশে তৃতীয় উজ্জ্বলতম বস্তু হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। দেখা যায় খালি চোখেই। তবে সব অঞ্চল থেকে একসঙ্গে নয়। কবে কখন দেখা যাবে, তা জানা যাবে নাসার ওয়েবসাইটে। ঢাকার আকাশে এরপর ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা ৪২ মিনিট থেকে তিন মিনিটের জন্য দেখা যাওয়ার কথা রয়েছে।

শরীরচর্চা না করলেই নয়

এখন পর্যন্ত ১৯টি দেশের ২৪১ জন নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন। ২০০০ সালের নভেম্বর থেকে স্টেশনটি কখনোই মানবশূন্য ছিল না। বিভিন্ন দেশের ছয় নভোচারী সেখানে থেকে কাজ করেন। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় পেশী ও হাড়ের ক্ষয় রোধে দিনে অন্তত দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয় তাঁদের।

মাধ্যাকর্ষণ না থাকলে সুপারম্যান হওয়ার চেষ্টা তো করাই যায়। এক্সপেডিশন ৬২-এর তিন সদস্য (ওপর থেকে নিচে) যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্ড্রু মরগ্যান ও জেসিকা মাইর এবং রাশিয়ার ওলেগ স্ক্রিপোস্কা। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
নাসা

ছোট নয় মোটেও

মহাকাশ স্টেশনে অন্তত ছয়জনের ঘুমানোর জায়গা আছে। সঙ্গে দুটি বাথরুম, একটি ব্যায়ামাগার এবং চারপাশটা দেখার মতো জানালা আছে। সেখানে থাকা ও কাজের জায়গা ছয় শয়নকক্ষের বাড়ির চেয়েও বড়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে পর্যটকদের মহাকাশ স্টেশন ভ্রমণে যেতে দেবে নাসা। তবে সেখানে প্রতি রাত থাকার জন্য গুণতে হবে ৩৫ হাজার ডলার।

ব্যয় ১২ হাজার কোটি ডলার

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা ও জাপানসহ ১৬টি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরিতে অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কৃত্রিম উপগ্রহ এটি, সবচেয়ে ব্যয়বহুলও। আইএসএস তৈরিতে ১২ হাজার কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রথম অভিযানের প্রস্তুতির এক ফাঁকে ছবির জন্য হাত মেলান তিন নভোচারী। (বাঁ থেকে) উইলিয়াম শেফার্ড, ইউরি গিদজেঙ্কো এবং সের্গেই ক্রিকালেভ। ২০ অক্টোবর, ২০০০
নাসা

মহাকাশে টানা ৩৪০ দিন

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে টানা ৩৪০ দিন থেকে রেকর্ড গড়েছেন মার্কিন নভোচারী স্কট কেলি। আর বিভিন্ন অভিযানে সবচেয়ে বেশি দিন কাটান পেগি হুইটসন। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬৬৫ দিন মহাকাশ স্টেশনে কাটিয়েছেন নাসার এই নভোচারী।

চার ঘণ্টায় মহাকাশ স্টেশনে

মহাকাশ স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিশাল বিশাল সোলার প্যানেল আছে। সব মিলিয়ে ৮ মাইল দীর্ঘ তার ব্যবহার করে সব যন্ত্রাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। মহাকাশ স্টেশনটিতে একসঙ্গে সর্বোচ্চ আটটি নভোযান যুক্ত হতে পারে। আর পৃথিবী থেকে উড্ডয়নের পর কোনো নভোযান মাত্র চার ঘণ্টায় মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছতে পারে, অবশ্য বেশিও লাগতে পারে।

যার বোঝা তাঁকেই বহন করতে হবে। অবশ্য দিন কয়েক বাদে এই বোঝা গায়ে চাপিয়ে মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে পৃথিবী ছেড়েছেন তাঁরা। কাজাখস্তানের বাইকনুর কসমোড্রোমে এক্সপেডিশন ৩৩-এর তিন সদস্য। ১০ অক্টোবর, ২০১২
নাসা

মহাকাশেও কম্পিউটার ভাইরাস

মহাকাশ স্টেশন ও নভোচারীদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে প্রায় সাড়ে তিন লাখ সেন্সরের তথ্য সফটওয়্যারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। ৫০টির বেশি কম্পিউটার মহাকাশ স্টেশনের সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। এই কম্পিউটারগুলোও একাধিকবার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

যোগাযোগ থেমে নেই

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করেন। চাইলে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সরাসরি টিভি দেখার ব্যবস্থাও আছে।

১৯৯৮ সালের নভেম্বরে চালু করা হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন
নাসা

আকারে ফুটবল মাঠের সমান

মহাকাশ স্টেশনের মূল যন্ত্রাংশগুলো পৌঁছে দিতে ৪২ বার পৃথিবী ছেড়েছে রকেট। দৈর্ঘ্যে এটি ৩৫৭ ফুট। আমেরিকান ফুটবল মাঠের চেয়ে কেবল এক গজ ছোট।

২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয়

সেকেন্ডে পাঁচ মাইল বেগে ছুটছে মহাকাশ স্টেশন। বলতে পারেন, বুলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে। প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময়ে ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন নভোচারীরা।