ঘটনাটি ঘটেছিল স্কটল্যান্ডের এডিনবরা চিড়িয়াখানায়। সেখানে ২০০৮ সালে কোনো সামরিক ব্যক্তিকে কিংবা কোনো সামরিক দপ্তরকে নয়, নরওয়ের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে নাইটহুডে ভূষিত করা হয় একটি পেঙ্গুইনকে! পেঙ্গুইনটির নাম তৃতীয় নিলস ওলাভ। নাইট উপাধি পাওয়ার ফলে তাকেও স্যার ডাকার নিয়ম। সে হিসেবে বলতে হয়, স্যার নিলস ওলাভ নরওয়েজীয় সামরিক বাহিনীর সম্মানসূচক সদস্য। ঘটনা স্কটল্যান্ডে, কিন্তু নরওয়ের সামরিক বাহিনী কেন নাইট উপাধি দিল? প্রশ্নের উত্তরে আমরা পরে আসছি। তার আগে বলে ফেলা ভালো যে পেঙ্গুইনকে নরওয়ের সামরিক বাহিনীর সম্মানসূচক সদস্য এবং মাসকট করার অভূতপূর্ব রীতিটি শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে।
নরওয়েজীয় সামরিক বাহিনীর তরুণ লেফটেন্যান্ট নিলস এগলিয়েন ছিলেন পেঙ্গুইনপ্রেমী। সেই ভালোবাসা থেকেই ১৯৭২ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা চিড়িয়াখানার কিং পেঙ্গুইনদের এই সম্মানে ভূষিত করার রেওয়াজ চালু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় নিলস পায় ‘স্যার’ উপাধি। নিলস এগলিয়েনের ‘নিলস’ এবং রাজা পঞ্চম ওভালের নামের ‘ওভাল’ অংশ দিয়ে পেঙ্গুইনটির নামকরণ করা হয়। যাহোক, নাইটহুড উপাধি পাওয়ার সময় নিলসের পদবি ছিল ‘কর্নেল–ইন–চিফ’! তার বয়স হয়েছিল ৬ বছর। উচ্চতা ২ ফুট ৮ ইঞ্চি। সেদিক থেকে তৃতীয় নিলস বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির ‘নাইট’।
পেঙ্গুইন বলে যে এই সম্মাননায় কোনো ত্রুটি ছিল, তা কিন্তু নয়। সব ধরনের রাজকীয় ও সামরিক নিয়মনীতি মেনে, ঘটা করে নিলস ওলাভকে এই সম্মাননা দেন ব্রিটিশ মেজর জেনারেল ইউয়েন লাউডেন।
অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছিলেন নরওয়ের রাজা পঞ্চম হ্যারল্ড। পেঙ্গুইনের কাঁধে তলোয়ার ছোঁয়ানোর রেওয়াজ, কুচকাওয়াজ, সংগীত পরিবেশন, আপ্যায়ন ইত্যাদি সব আয়োজনই ছিল। অনুষ্ঠানের দিন উপস্থিত ছিলেন নরওয়েজীয় গার্ডের ৩০ সদস্য। শুধু তা–ই নয়, নিলসকে ওই দিন পেট পুরে মাছও খেতে দেওয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালে তৃতীয় নিলস ‘ব্রিগেডিয়ার’ হিসেবে পদোন্নতি পায়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজপ্রতিরক্ষা বাহিনীর ৫০ সদস্য। তখন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ‘স্যার তৃতীয় নিলস ওলাভ নরওয়েজীয় গার্ডদের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত এবং তাঁর “অসামান্য সেবা ও ভালো আচরণের” জন্য তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।’
তবে তৃতীয় নিলস ওলাভ একমাত্র পেঙ্গুইন নয়, যে এই বিরল সম্মাননা পায়। ১৯৮৭ সালে প্রথম নিলস ওলাভ পেঙ্গুইন ‘সার্জেন্ট’ পদে উন্নীত হয়। আশির দশকে তার মৃত্যু হলে সে জায়গায় আসে দ্বিতীয় নিলস ওলাভ। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় নিলস ‘রেজিমেন্টাল সার্জেন্ট মেজর’ এবং ২০০১ সালে ‘অনারেবল রেজিমেন্টাল সার্জেন্ট মেজর’ হিসেবে পদোন্নতি পায়।
২০০৫ সালে তাকে একই রেজিমেন্টের ‘কর্নেল–ইন–চিফ’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে এই পেঙ্গুইনের সম্মানে এডিনবরা চিড়িয়াখানায় একটি ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যও তৈরি করা হয়। আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় নরওয়ের অসলো শহরে। আর তৃতীয় নিলস ওলাভ এই পদোন্নতিগুলো পায় ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, এনবিসি নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান ও এবিসি ডটনেট