সাফল্য
নোবেলজয়ী ছয় দম্পতি
একসঙ্গে একজীবন কাটিয়ে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কে জানত, সেই একই জীবনে তাঁরা নোবেলও জিতে নেবেন। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ছয় দম্পতির খোঁজ পাওয়া যায়, যাঁরা দুজনই নোবেল জিতেছেন। তাঁদের মধ্যে কেবল এক দম্পতি একসঙ্গে নোবেল জেতেননি।
জার্টি এবং কার্ল কোরি
জার্টি এবং কার্ল কোরি চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরু করেন একসঙ্গে। শেষও একসঙ্গেই করেন। এরপর বিয়ে করে ভিয়েনা থেকে পাড়ি জমালেন যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো শহরে। শুরু হলো তাঁদের হরমোন ও এনজাইমের কাজের ধরন নিয়ে গবেষণা। ৩০ বছর গবেষণার পর ১৯৪৭ সালে তাঁদের দুজনকে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। গ্লাইকোজেন ও গ্লুকোজের রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁরা পুরস্কারটি পান।
ম্যারি ও পিয়েরে কুরি
ম্যারি ও পিয়েরে কুরি বিয়ে করেন ১৮৯৫ সালে। সে বছরেই ফরাসি পদার্থবিদ আঁতোয়া অঁরি বেকেরেল আবিষ্কার করলেন, খনিজে ইউরেনিয়াম থাকলে তা থেকে তীব্র তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। ইউরেনিয়ামের এই তেজস্ক্রিয়তায় আগ্রহী হয়ে হন ম্যারি। গবেষণায় পুরোপুরি নতুন ধরনের উপাদানের ধারণা দেন। এরপর পিয়েরে তাঁর নিজস্ব গবেষণা ছেড়ে ম্যারির প্রকল্পে যুক্ত হন। ১৮৯৮ সালে পোলনিয়াম ও রেডিয়াম নামের নতুন দুটি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন তাঁরা। ১৯০৩ সালে তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
আইরিন ফ্রেদেরিক জোলিও–কুরি
ম্যারি ও পিয়েরে কুরির বড় কন্যা আইরিন কুরি বাবা–মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। পরবর্তী সময়ে কুরি পরিবারের রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে কাজ শুরু করেন। এদিকে ম্যারি কুরির সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য ১৯২৪ সালে সে ইনস্টিটিউটে আসেন ফ্রেদেরিক জোলিও। আইরিন তাঁকে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার নানা পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। আর বিয়ে করেন ১৯২৬ সালে। তাঁরা একসঙ্গে গবেষণা তো করেছেনই, আবার নিজ নিজ গবেষণাও চালিয়ে গেছেন। তাঁদের গবেষণা পরে নিউট্রন ও পজিট্রন আবিষ্কারে সাহায্য করে। আইরিন ও ফ্রেদেরিকের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা। সে আবিষ্কারের জন্যই ১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পান এই দম্পতি।
আলভা ও গুনার মিরদাল
ঊনবিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকের সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে আলভা ও গুনার মিরদাল ছিলেন অগ্রগণ্য। পারিবারিক রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল তাঁদের। নোবেলজয়ী দম্পতিদের মধ্যে কেবল তাঁরা দুজনই দুটি ভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার জেতেন। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যোগাযোগ খুঁজতে গিয়ে ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল জেতেন গুনার। আর আলভা জেতেন শান্তিতে, ১৯৮২ সালে।
মে-ব্রিট এবং এডভার্ড মোজার
২০১৪ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পান মে-ব্রিট এবং এডভার্ড মোজার। মানবশরীরে ‘অভ্যন্তরীণ জিপিএস’ আবিষ্কারের জন্য তাঁরা নোবেল পুরস্কার পান। আমরা কোথায় আছি, কোথায় যাচ্ছি কিংবা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার পথ নির্ধারণ করি মস্তিষ্কের বিশেষ কোষের মাধ্যমে। ২০১৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের সময় তাঁরা জানিয়েছিলেন একসঙ্গে কাজ করে যাবেন।
এস্থার দুফলো আর অভিজিৎ ব্যানার্জি
এস্থার দুফলো আর অভিজিৎ ব্যানার্জি অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেন ২০১৯ সালে। মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে তাঁরা বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূর করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁরা দেখান, কীভাবে দারিদ্র্যের সমস্যাকে ছোট ছোট কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রশ্নে ভাগ করে নিলে সমাধান সহজ হয়ে যায়।
সূত্র: নোবেলপ্রাইজ ডটওআরজি