ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছাকাছি অংশ প্রায় সূর্যের মতোই গরম। গড় হিসাবে বলা হয়, মাটির নিচে প্রতি ৬০ ফুটের জন্য এক ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বাড়ে। তাহলে পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছাকাছি অংশের তাপমাত্রা দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট।
তবে বেশির ভাগ ভূতত্ত্ববিদের মতে, ওই তাপমাত্রা অন্তত নয় হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট। সৌভাগ্যবশত পৃথিবীর ওপরের অংশের মাটি ঠান্ডা বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়েছে, তাই আমরা বাসযোগ্য পৃথিবী পেয়েছি। কিন্তু ভেতরের অংশের পটাশিয়াম-৪০, ইউরেনিয়াম-২৩৮, থোরিয়াম-২৩২ প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ এখনো ক্রমাগত তাপ বিকিরণ করে চলেছে।
এসব তেজস্ক্রিয় মৌলের হাফলাইফ যথাক্রমে ১২৫ কোটি, ৪০০ কোটি ও ১৪০০ কোটি বছর। প্রতি এক হাজার পটাশিয়াম মৌলের মধ্যে একটি তেজস্ক্রিয় বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং আরও বহু বছর ধরে পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ তপ্ত থাকবে।
ওপরের শক্ত মাটির আবরণের জন্য ভেতরের তাপ বেরোতে পারে না। আগ্নেয়গিরি ও উষ্ণ ঝরনাধরায় কিছু তাপ বের হয়। অনেক বৈজ্ঞানিক এই তেজস্ক্রিয় তাপ বিকিরণ-তত্ত্ব মেনে নিয়েও বলেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ ঠান্ডা হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় এখনো পার হয়নি।
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর। এই সময়কালের মধ্যে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে বিশেষভাবে লোহার মতো ভারী মৌলিক পদার্থ পৃথিবীর কেন্দ্রে ঘনীভূত হয়ে অনেক আগেই ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কথা। সে রকম না হওয়ার একটি কারণ এই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
যেখানে পৃথিবীর ভেতরেই এত উত্তাপ, তাহলে আমরা বায়ুমণ্ডলের কয়েক ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়া নিয়ে এত উদ্বিগ্ন কেন? আসলে পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ খুব কমই ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আসতে পারে। যতটুকু আসে, তা দ্রুতই বাতাসে মিশে শূন্যে মিলিয়ে যায়।