পোলাওটাও খেতে পারো না তুমি

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার জন্ম তুরস্কে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। নানা চরিত্রে ও পেশায় তাঁকে তাঁর কয়েক শ গল্পে হাজির হতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হোজ্জা এখন আর তুরস্কের নন, সারা বিশ্বের। ইউনেসকো তাঁর গল্পগুলোকে বিশ্বসাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। হোজ্জা অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক নামে অভিহিত। যেমন উজবেকিস্তান ও চীনে তিনি আফেন্দি বা এফেন্দি। তাঁর গল্প কখনো নির্মল হাস্যকৌতুকে, কখনো বুদ্ধির ঝলকে, কখনো বা নৈতিক শিক্ষার দ্যুতিতে উজ্জ্বল। কখনো নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করেছেন।

অলংকরণ: তুলি

তেষ্টা মেটানোর শরবত

একদিন এক ধনী সওদাগরের বাড়িতে মোল্লার দাওয়াত ছিল। দাওয়াতের টেবিলে নানা রকম আহার্যের শেষ নেই। যিনি নিমন্ত্রণকর্তা তিনি মোল্লাকে পরিবেশন করা খাবারের সদ্ব্যবহার করতে বললেন। মোল্লা সঙ্গে সঙ্গে খেতে বসে গেলেন। মোল্লার পাশে বসেছেন এক লোভী সওদাগর। তিনি শুধু খাবার গোগ্রাসে গিলছেনই না, ভালো খাবার যা আছে, তার প্রায় সবই পকেটে ভরছেন। তাই দেখে মোল্লা গম্ভীরভাবে শরবতের পাত্রটা হাতে তুলে নিলেন। তারপর সওদাগরের পকেটের মধ্যে শরবত ঢালতে শুরু করলেন। মোল্লার এই ব্যবহারে সেই সওদাগর লোকটি ভয়ানক রেগে গিয়ে বললেন, ‘ওহে, এটা কী হচ্ছে? তোমার মাথাটা কি একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে? পরের বাড়িতে ভোজ খেতে এসে এ ধরনের ইয়ার্কি করা আমি মোটেই বরদাশত করব না।’

তিরস্কারের কথাগুলো গায়ে না মেখে মোল্লা সবিনয়ে বললেন, ‘কই আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। একটু আগে দেখলাম পকেটের খিদে মেটাতে আপনি ওদের অনেক কিছু খেতে দিচ্ছেন। সেই সব কাবাব আর মেঠাই খেয়ে বেচারা পকেটের নিশ্চয়ই খুব তেষ্টা পেয়েছে। তাই আমি আপনার হয়ে তাদের সেই তেষ্টা মেটাতে শরবত দিয়েছি মাত্র।’

পোলাওটাও খেতে পারো না তুমি

মোল্লা নাসিরুদ্দিন আর তাঁর এক বন্ধু একদিন ঠিক করলেন তাঁরা একটা বাগানে গিয়ে পোলাও রান্না করে খাবেন। হাঁড়িকুঁড়ি, মাল-মসলা নিয়ে বাগানে গেলেন তাঁরা। বন্ধু বললেন, ‘ভাই নাসিরুদ্দিন, আমি তো কিছুই পারি না। উনান ধরাতে পারি না, হাঁড়ি চড়াতে জানি না। গাজর কাটতেও পারি না। আমি বরং একটু ঘুমিয়ে নিই। রান্না হলে আমাকে ডেকে তুলো। গরম গরম পোলাও খাওয়া যাবে।’

নাসিরুদ্দিন উনান ধরালেন, গাজর কাটলেন, হাঁড়ি চড়ালেন। রান্নাও করলেন একাই। তারপর পেট ভরে পোলাও খেয়ে আচ্ছা করে ঢেকুর তুলতে তুলতে বাসন মাজতে লাগলেন। এমন সময় ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে বন্ধুটি বললেন, ‘নাসিরুদ্দিন, আমাকে না ডেকে গোগ্রাসে একলাই পোলাও গিললে তুমি! অসভ্য, বর্বর, লোভী কোথাকার!’

নাসিরুদ্দিন বললেন, ‘কী করব বন্ধু, তুমি তো কিছুই পারো না, কিছুই জানো না। তাই মনে হলো পোলাওটাও খেতে জানো না তুমি। তাই একাই খেলাম রান্না করা পোলাও।’

প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ১০০ গল্প বই থেকে