ফোনের ব্যাটারিতে যেবার চার্জ ছিল না

ছবি: প্রথম আলো

সৈকত-ঝুমকা দম্পতি গেছেন রেস্তোরাঁয়। সৈকত ভীষণ প্রযুক্তিপাগল। মুঠোফোন, ট্যাব, স্মার্ট ওয়াচ ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করা তার পক্ষে বড় কঠিন। দুনিয়াটা তিনি চোখ দিয়ে নয়, মুঠোফোনের স্ক্রিন দিয়ে দেখায় বিশ্বাসী। প্রথম প্রথম বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ঝুমকা। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তো খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। খাবার চলে এল একসময়। সৈকত খাবারের ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে আপ করলেন। লাইকও পড়ছে টপাটপ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে মুঠোফোনটা গেল অফ হয়ে। চার্জ শেষ!

সৈকত: কেমনটা লাগে! আজকে পাওয়ার ব্যাংকও আনিনি! তোমার কাছে পাওয়ার ব্যাংক হবে?

ঝুমকা: না। আমার পাওয়ার ব্যাংক লাগে না।

মুঠোফোন থেকেও নেই, তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালেন সৈকত এবং হঠাৎ খেয়াল করলেন, স্ত্রীর চেহারায় বিশেষ একটা পরিবর্তন এসেছে।

সৈকত: তুমি কি চুল কেটেছ? দেখতে কেমন অচেনা লাগছে!

ঝুমকা: চুল তো কেটেছি তা-ও তিন মাস হলো।

সৈকত: ও, তাই তো বলি, অচেনা...মানে চেঞ্জ এসেছে লুকে। ভালোই লাগছে দেখতে।

ঝুমকা: থ্যাংক ইউ।

সৈকত: আচ্ছা, তোমার ওই বস...কী যেন নাম...মোতালেব না মতলুব...

ঝুমকা: মোদাচ্ছের। হ্যাঁ, কী হয়েছে?

সৈকত: হ্যাঁ, মোদাচ্ছের…লোকটা কি এখনো তোমাকে বেশি জ্বালাতন করে?

ঝুমকা: জ্বালাতন করবে কীভাবে! তিনি বছর দুয়েক আগেই মারা গেছেন। তোমার ইনস্টাগ্রামে দেখো, হাসপাতালে থাকতে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম আমরা। তুমি ছবিও আপলোড করেছিলে।

সৈকত: ওহ্ হো! সরি সরি! কিন্তু চার্জ তো নেই, দেখব কীভাবে...

ঠিক সেই মুহূর্তে টেবিলের সামনে ঝড়ের বেগে ছুটে এল একটা তিন বছর বয়সী ছেলে। ছেলেটার নাম টুকু। সে এসেই ঝুমকার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল—

টুকু: মা মা, দারুণ একটা জিনিস দেখেছি! চলো চলো, তোমাকেও দেখাই!

ঝুমকা: আচ্ছা বাবা সোনা, খাওয়াটা শেষ করে যাই?

টুকু বেশ লক্ষ্মী ছেলে। মায়ের বাধ্য। সে মায়ের কথামতো আবার খেলতে চলে গেল কিডস জোনে। সৈকত তখন মুখে একটা খাবার পুরেছিলেন। টুকুকে দেখে আর মা-ছেলের কথাবার্তা শুনে তিনি হতবাক! কোনোরকমে সামলে উঠে ঝুমকাকে জিজ্ঞেস করলেন—

সৈকত: ও কি আমাদের...মানে আমাদের ছেলে?

ঝুমকা: হ্যাঁ, আমাদের ছেলে।

সৈকত: কবে...মানে কবে হলো!

ঝুমকা: শেষ যেবার তোমার মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়েছিল, সেবার!