বাইডেনকে মাফ করতে পারবেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ক্ষমাশীল মানুষ। গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে তিনি ক্ষমা করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন। তবে এবার ক্ষমা করার কঠিন পরীক্ষায় পড়েছেন ট্রাম্প নিজেই। প্রশ্ন হলো, নতুন প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া জো বাইডেনকে কি মাফ করতে পারবেন ট্রাম্প?

নিজে উপস্থিত থেকে কি বাইডেনকে শপথ পড়াবেন ট্রাম্প?
এএফপি

জো বাইডেনকে মাফ করার প্রসঙ্গ কেন উঠল, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন হামলার মুখেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যয়ন পেয়ে গেছেন জো বাইডেন। ২০ জানুয়ারি নিয়মানুযায়ী তাঁর শপথ নেওয়ার কথা। কিন্তু নিজে উপস্থিত থেকে কি বাইডেনকে শপথ পড়াবেন ট্রাম্প? ঐতিহ্যগত রীতিনীতির কথা ধরলে এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। তবে মানুষটা ডোনাল্ড ট্রাম্প কিনা তাই সংশয়, সন্দেহ, আচমকা বিনা মেঘে বজ্রপাত—এসব শব্দ আমাদের মাথায় রাখতে হয়। সেদিক থেকে হিসাব করলে ঠিক নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না যে ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানে সভ্য আচরণ করবেন কি না। তবে আশায় বাঁচে চাষা। সুতরাং আমরাও ভালো কিছুর আশা করতেই পারি।

আর ভালো কিছুর আশা করতে গিয়েই আসছে ট্রাম্প চরিত্রের ‘মহানুভব’ ও ‘ক্ষমাশীল’ দিকগুলো। ট্রাম্প কতটা ক্ষমাশীল, তা স্পষ্ট হয় গত কিছুদিনের কর্মকাণ্ডে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে চেনা-পরিচিতদের ক্ষমা করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। নভেম্বরের ৩ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত পরিচিত এবং নিজের অনুগত অন্তত ৭ জনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছেন অনুগত পল ম্যানাফোর্ট, দীর্ঘদিনের বন্ধু রজার জে স্টোন জুনিয়র, বড় মেয়ের শ্বশুর চার্লস কুশনার প্রমুখ। আর যদি গেল ডিসেম্বরের শেষ ভাগের হিসাব ধরা যায়, তবে দেখা যায় ট্রাম্প মাত্র দুদিনে ৪১ জনকে ক্ষমা করেছেন। মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আর এই সময়ে আরও আটজনের নির্ধারিত দণ্ড কমিয়ে দিয়েছেন।

এরপরও কি বলবেন ট্রাম্প মানুষটা খারাপ? বললে তা ন্যায্য হবে না। অন্তত সংখ্যার দিক থেকে তো নয়ই। তবে সব গুণেরই একটি সর্বোচ্চ মানদণ্ড থাকে। যেটি অতিক্রম করলে একজন মানব মহামানবের পর্যায়ে চলে যান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমনিতেই অনেক ‘প্রথম’-এর জন্ম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলুন তো, কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে অন্য রাষ্ট্রনায়কের বডি শেমিং (শারীরিক গঠন সম্পর্কে বাজে মন্তব্য) করেছেন? জ্ঞাতার্থে তথ্য: শিকার ছিলেন কিম জং–উন। আবার, এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজ দেশের পার্লামেন্ট ভবনে সমর্থকদের হামলা চালানোর বিষয়ে উসকানিও দেননি। ‘বুনো’ আচরণ করার বিষয়ে উৎসাহও দেননি কেউ। যাক এসব কথা। এগুলো বলতে শুরু করলে মূল প্রসঙ্গে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে।

ট্রাম্পের সামনে এখন মহামানব হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ
রয়টার্স

আমরা ছিলাম একটি মানবীয় গুণের সর্বোচ্চ সীমার বিষয়ে। মানব ট্রাম্পের এখন মহামানব হওয়ার সুযোগ এসে গেছে। এর জন্য ছোট্ট একটি কাজ করতে হবে তাঁকে। ২০২০ সালকে সত্যিকার অর্থেই ট্রাম্পের জন্য ‘বিষ বিষ’ করে দিয়েছেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের ভাষায়, ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বাইডেন। অর্থাৎ কিছু অপরাধ তো আছেই। এই ব্যক্তিকে এখন ক্ষমা করে দেওয়া উচিত ট্রাম্পের। তবেই ক্ষমাশীলতার শীর্ষে পৌঁছে যাবেন তিনি। হয়তো তারপর থেকে গুগলে ইংরেজিতে ‘পারডন’ শব্দটি লিখলেই চলে আসবে ট্রাম্পের নাম। ক্ষমার সমার্থক হয়ে যেতে পারেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ক্ষমার আরেক বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে মাফ। আমরা অবশ্য অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতেও কখনো কখনো বলে থাকি, ‘মাফ করে দেওয়া যায় না?’ জো বাইডেন এখন হয়তো তেমন কিছুই ভাবছেন। ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য ট্রাম্প যা করলেন, তাতে বাইডেন মাফ চাইলে আশ্চর্যের কিছু হবে না। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায় বলুন? বাইডেনের বয়সও তো কম হলো না। বয়সে বছর চারেকের ছোট ট্রাম্প যে তাণ্ডব চালাচ্ছেন, তাতে শপথ অনুষ্ঠানে হুট করে যদি ‘বেঁকে’ বসেন, তবে বয়সে বড় ভাইয়ের কী হবে?

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ট্রাম্পের সামনে এখন মহামানব হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। যদি তিনি বাইডেনকে দয়া করে মাফ করেই দেন, তবে তাঁর ভাবমূর্তির ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যাবে আশা করি। ঝকমক করবে একেবারে। বাইডেনকে মাফ করতে গিয়ে ট্রাম্প কী বলতে পারেন, কোনো ধারণা আছে? আসুন একটু কল্পনা করা যাক!

ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো বলবেন, ‘বাইডেন মাফ চেয়েছেন, আমি করেছি। আমি যতটা ক্ষমাশীল, আর কেউ তেমন নয়। ক্ষমা শব্দটির সঙ্গে আমার চেয়ে ভালো পরিচয় কারও নেই। যদিও এই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে, চুরি হয়েছে ভোট। আমার মন বলছে, আমি হারিনি। এর জন্য কোনো প্রমাণ দরকার নেই। তবে সমর্থকদের বলতে চাই, আমি হয়তো বাইডেনকে মাফ করেছি, কিন্তু আপনারা করবেন না। খেলা হবে...।’

ট্রাম্প এমন কিছু বলেন কি না, তা–ই এখন দেখার বিষয়। মিলে কিন্তু যেতেও পারে। মনে রাখবেন, ব্যক্তিটির নাম কিন্তু ‘ট্রাম্প’!