বাঙ্গির পক্ষ–বিপক্ষ দলের সংঘর্ষে শতাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উধাও

একটু থামুন

গতকাল রোববার সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত ফল বাঙ্গির পক্ষ–বিপক্ষ দলের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক ‘ফেক’ সূত্র জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি রিপোর্টের কারণে শতাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এখন ‘গুম’ হওয়ার পথে। আর যেসব অ্যাকাউন্ট টিকে আছে, সেসবও এখন হুমকির মুখে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ না জানালেও আমরা শুনেছি, এ বিষয়ে তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেবে। বাঙ্গির পক্ষ–বিপক্ষ দুটি দল অবশ্য এখনো মারমুখী অবস্থানে অটল।

ছবি: বাবাবিস
ছবি: বাবাজস
আমাদের সবার বাঙ্গির বীজ সংরক্ষণ করা উচিত, যেন বাঙ্গির বীজ মাটিতে না পড়ে।
জনৈক সদস্য, বাংলাদেশ বাঙ্গি বিলুপ্তকরণ সমিতি

ঘটনার সূত্রপাত বাজারে বাঙ্গির আমদানি শুরুর পরপরই। ঘরে ঘরে বাঙ্গি পৌঁছাতে শুরু করার পরই ফেসবুকে দুটি গ্রুপ ক্রিয়েট করা হয়। একটি হলো ‘বাংলাদেশ বাঙ্গি জনপ্রিয়করণ সমিতি (বাবাজস)’, আরেকটির নাম ‘বাংলাদেশ বাঙ্গি বিলুপ্তকরণ সমিতি (বাবাবিস)’। ক্রিয়েট করার পর দুটি গ্রুপেই হাজারো ফেসবুক ব্যবহারকারী বাঙ্গি খেয়ে না খেয়ে মেম্বার হন। কেবল মেম্বার হয়েই বসে থাকেন না, প্রতি মিনিটে বাঙ্গির পক্ষে ও বিপক্ষে লেখা, ছবি, ভিডিও, মিমসহ নানান জিনিস শেয়ার করতে থাকেন। এরই মধ্যে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘আমাদের সবার বাঙ্গির বীজ সংরক্ষণ করা উচিত, যেন বাঙ্গির বীজ মাটিতে না পড়ে।’

মূলত এই পোস্ট কেন্দ্র করেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বাবাজস গ্রুপে লেখা হয়, ‘এই যে এসব বলে বলে সোশ্যালি আরেকজনের ওপর নেগেটিভ ইনফ্লুয়েন্স ফেলতেছেন, বিশ্বাস করেন, আপনার ট্রলের দ্বারা কিছু লোক যদি হীনম্মন্যতা নিয়ে বাজারে বাঙ্গি কিনতে গিয়ে ফিরে আসে, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে রোদে পুড়ে কষ্ট করে বাঙ্গি চাষ করা সেই কৃষকের।’

আপনার ট্রলের দ্বারা কিছু লোক যদি হীনম্মন্যতা নিয়ে বাজারে বাঙ্গি কিনতে গিয়ে ফিরে আসে, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে রোদে পুড়ে কষ্ট করে বাঙ্গি চাষ করা সেই কৃষকের।
জনৈক সদস্য, বাংলাদেশ বাঙ্গি জনপ্রিয়করণ সমিতি

বাঙ্গিচাষিদের প্রতি সমবেদনামূলক এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনুভূতি জেগে ওঠে। অধিকাংশ মানুষ সহমত পোষণ করে বলেন, ‘কথা তো সত্য। সত্য কথা দিনের মধ্যে ১৪ বার বলা যায়।’

একটু থামুন

তবে কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বাঙ্গির মুণ্ডুপাতও করেন। যেমন এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, ‘যাঁরা আজ “বাঙ্গি খাওয়া যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে ট্রল করার কিছু নেই” বলে সুশীলতার বাণী দিচ্ছেন, আমি তাঁদের উদ্দেশে প্রশ্ন করতে চাই, কোথায় ছিল আপনাদের এই সুশীলতা, যখন বছরের পর বছর আমাদের মেন্টালি, ফিজিক্যালি টর্চার করে মুখে দুর্গন্ধওয়ালা বাঙ্গি পুরে দেওয়া হয়েছিল?’

ছবি: বাবাবিস

তিনি আরও বলেন, ‘আজ বাঙ্গি এক জাতীয় সমস্যা। ও আর ব্যক্তিগত নেই। আগামীর পৃথিবীকে আরেকটু উন্নত করতে, ছোটবেলায় আমাদের মুখে বাঙ্গি ঠেসে দেওয়ার যে ট্রমা, সে ট্রমার সম্মুখীন যেন আর কোনো শিশুকে হতে না হয়, সেই শুভ ইচ্ছা মনে রেখে বাঙ্গিকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিলুপ্ত করে জাদুঘরে পাঠিয়েই তরমুজ মুখে নেব...।’

ছবি: সায়েন্স বি

এর প্রতিবাদে বাবাজসের পক্ষ থেকে পোস্ট করা হয় বাঙ্গির উপকারিতাসংবলিত একটি ছবি। সেখানে দেখা যায়, বাঙ্গির উপকারিতার বিভিন্ন তথ্য। তবে এতেও বাবাবিসের মেম্বারদের মন গলে না। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি রিপোর্ট করার যুদ্ধ। দুই গ্রুপের মেম্বাররা একে অপরের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বার্তা পাঠায় ফেসবুকে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এতে হিমশিম খেয়ে ‘কী করি আজ ভেবে না পাই’ নীতি অবলম্বন করে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ডিঅ্যাকটিভ করে পপকর্ন নিয়ে বসেছে। করোনাকালে জমে ওঠা এই বাঙ্গিযুদ্ধ তাদের কাছে ধরা দিয়েছে বিনোদনের বড় উৎস হিসেবে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় তারা বার্তা না পাঠালেও আমরা জেনেছি, এভাবে চলতে থাকলে ফেসবুকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে।

সামান্য বাঙ্গি নিয়ে আমরা যেভাবে দ্বিধাবিভক্ত, এভাবে চললে জাতির ভবিষ্যৎ কী? মুঠোফোনে প্রশ্নটি করার পর ঢাকাস্থ ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুচকি হেসে বলেন, ‘এটা আমরা জানি, কিন্তু বলব না।’