বিদায় পিতিবি: ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প
এএফপি

ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে গেলেন হোয়াইট হাউস ছেড়ে। উত্তরসূরি জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি থাকতে চান না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। হয়তো রাগে–ক্ষোভে–দুঃখে। তা বলুন তো দেখি, ‘চুরি করা’ ভোটে জেতা প্রতিযোগীর অভিষেক অনুষ্ঠানে কি হাসি হাসিমুখে ছবি তোলা যায়? আপনি কি পারবেন বুকের দুঃখ হাঁটুতে চেপে মুখে হাসি ফোটাতে?

এত সহজ নয়, বাপু। আর সে কারণেই অভিমানী চেহারা নিয়ে, বাক্স–পেটরা গুছিয়ে ফ্লোরিডার পাম বিচে চলে গেছেন ‘সাবেক’ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাওয়ার আগে হয়তো অনুচ্চারে যা বলেছেন, তার বাংলা দাঁড়ায়, ‘বিদায় পিতিবি!’

বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়ে আমরা অনেক বারই ক্রন্দনরত সর্বংসহা নায়িকাদের মুখে শুনতে পেয়েছি, ঘরসংসারই তার পৃথিবী। হোয়াইট হাউসে তো সংসারই পেতেছিলেন ট্রাম্প, তা যত নম্বরই হোক। সেই পৃথিবীরূপী সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ট্রাম্প যদি মনের দুঃখে ‘পিতিবি’–কে ‘বিদায়’ জানিয়েই দেন, তবে কি ভুল কিছু হবে?

আপনারা হয়তো ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করবেন, ট্রাম্প কীভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানানোর বাংলা পরিভাষা জানতে পেরেছেন? আহা, তিনি তো বঙ্গদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে অন্তত কানেমুখে শোনা যায়। কানকথায় আপনারা পাত্তা না–ই দিতে পারেন। তবে চিল যদি আপনাদের কান না নিয়ে থাকে, তবে কানকে বিভিন্ন মুখের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। নিলেই অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

আর চিলে কান ফেরত না দিতে চাইলে ট্রাম্পকে একটা পোস্টকার্ড পাঠিয়ে দিতে পারেন। চিল, কান, জোর, মুল্লুক, মগের মুল্লুক—এসব ট্রাম্পের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তর। সুতরাং তিনি আপনাকে কতিপয় শর্তে কান ফিরিয়ে দিতে পারেন। তবে সেই অনুরোধ জানানোর জন্য এখন থেকে পাম বিচের ঠিকানায় যেতে হবে। বিচে যেতে গিয়ে আবার ভুল করে সাগরে ডুবে হাবুডুবু খাবেন না যেন! ট্রাম্প বললেও না।

অত্যন্ত ‘গুপন’ সূত্রে জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়েই তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষার সূতিকাগারের সংশ্লিষ্টদের ফোন দিয়েছিলেন। এসব সূতিকাগার আজকালের দুনিয়ায় কোচিং সেন্টার নামে বেশি পরিচিত। সংশ্লিষ্ট সেই কোচিং সেন্টারের একজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের টংয়ের দোকানে চা খাওয়ার সম্পর্ক ছিল। চায়ের সঙ্গে ‘বাটার বন’ খাওয়ানোর নিমন্ত্রণ দেওয়ার পর তিনি কিছু তথ্য দিতে রাজি হন। তবে শর্ত দিয়েছেন যে ‘বাটার বন’ আজকের বানানো হতে হবে এবং একটি নয়, দুটো ‘বাটার বন’ খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই আগের দিনের বাসি ‘বাটার বনে’ তিনি দাঁত বসাবেন না। বাটারও বেশি পরিমাণে থাকতে হবে। আবার চা হতে হবে গরুর দুধের। সফটওয়্যার ইনস্টল দেওয়ার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেভাবে আমরা না পড়েই কোম্পানির বিভিন্ন শর্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে ‘অ্যাগ্রি’ বাটনে ক্লিক করি, ঠিক সেভাবে তাঁর কথায় রাজি হওয়া গেল।

ট্রাম্প ফোনে কোচিং সেন্টারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এক ক্লাসে তাঁকে শেখানো হয়েছিল কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাম মুখে আনা থেকে বিরত থাকা যায়। আর সে বিদ্যা কাজে লাগিয়েই তিনি বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া বক্তব্যে একবারও জো বাইডেনের নাম উচ্চারণ করেননি।

সেই হুইসেলব্লোয়ার বা বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া ব্যক্তি জানালেন, ট্রাম্পের মন একটু ভারাক্রান্ত। তবে তিনি বলেছেন, তাঁর বাংলাদেশে কোচিং করার খবর যে–ই ফাঁস করে থাকুন না কেন, তাঁকে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ কর্মদিবসে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়েছেন। করবেন নাই–বা কেন? হোয়াইট হাউসে নিজের শেষ সময়ে প্রায় ১৪০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প। তাহলে অনানুষ্ঠানিকভাবে কতজনকে ক্ষমা করেছেন, একবার কল্পনা করুন। এমন ক্ষমাশীল ব্যক্তির পক্ষে একটি কোচিং সেন্টারের কতিপয় সূত্রকে ক্ষমা করা তো নগণ্য বিষয়।

ট্রাম্প ফোনে কোচিং সেন্টারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এক ক্লাসে তাঁকে শেখানো হয়েছিল কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাম মুখে আনা থেকে বিরত থাকা যায়। আর সে বিদ্যা কাজে লাগিয়েই তিনি বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া বক্তব্যে একবারও জো বাইডেনের নাম উচ্চারণ করেননি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আচ্ছামতো অপমান করার প্রশিক্ষণও তিনি পেয়েছিলেন বলে স্মরণ করেন। এমন যুগোপযুগী শিক্ষার তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।

আপসহীন রাজনৈতিক মানসিকতা শেখানোর জন্যও ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেছেন, ‘কোনোভাবেই সত্য স্বীকার না করা এবং প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও বারবার ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলা কঠিন ছিল। কিন্তু যখনই এ নিয়ে মনে দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে, আমি দ্বিধাহীন চিত্তে কোচিং ম্যানুয়ালের শরণাপন্ন হয়েছি। মনে শান্তি পেয়েছি, শক্তি পেয়েছি। এবং বলতে পেরেছি, এটা ভোট জালিয়াতির নির্বাচন।’

অবশ্য ভোট উল্টে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এক গভর্নরকে ফোনে ‘আদেশ’ দিতে গিয়ে ধরা খাওয়া ট্রাম্পকে সে কাজের জন্য কোচিং সেন্টারের তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ‘গুপন’ সূত্রের তথ্য মোতাবেক, কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আমরা কি এই শিখিয়েছিলাম? আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল, “মাইর হবে, শব্দ হবে না”। ওখানে যে যে নির্দেশনা আছে, সেগুলো মানলেই আর কোনো ঝামেলা থাকত না।’

উত্তরে মাফ চেয়ে ট্রাম্প বলেছেন, শিগগিরই ‘মাইর হবে, শব্দ হবে না’ শীর্ষক অধ্যায়টি তিনি রিভিশন দেবেন। এটি ভবিষ্যতে তাঁর কাজে দেবে বলেও তিনি আশাবাদী।

ফোনালাপের শেষে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আপাতত কিছুদিন তিনি ‘গুডবাই’ শব্দটি আর ব্যবহার করছেন না। এর বদলে ‘বিদায় পিতিবি’ তাঁর মনে ধরেছে। পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহার চলছে। নতুন কোনো ইস্যুতে ফের ভোট জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে কথা বলা শুরু করতে পারলেই ‘বিদায় পিতিবি’কে বিদায় জানিয়ে দেবেন।

সুপ্রিয় পাঠক, আরও কিছু কথা ট্রাম্প বলেছেন। তবে ‘গুপন’ সূত্রটি জানিয়েছে, দুটি ‘বাটার বন’ ও এক কাপ চা খাওয়ানোর আগে তিনি তা জানাবেন না। অতএব অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে তাই বলতেই হচ্ছে, ‘বিদায় পিতিবি’।