মানুষের চোখ আছে ঠিকই...

বীরবল কোনো কল্পিত নয়, ঐতিহাসিক চরিত্র। সম্রাট আকবর ও বীরবল ছিলেন হরিহর আত্মা। আবার কোনো কোনো বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে যে কখনো মনোমালিন্য হয়নি, এমন নয়। হয়েছে। কিন্তু সে শুধু সাময়িকসময়ের জন্য। কারণ, রাজকাজ পরিচালনায় সম্রাট আকবরের কাছে বীরবল ছিলেন এক অনিবার্য মন্ত্রণাদাতা।

বাদশাহ আকবর কথা প্রসঙ্গে একদিন বীরবলকে জিজ্ঞেস করলেন, পৃথিবীর মানুষজনের চোখের দৃষ্টি আছে কি না।

বাদশাহর ধারণা পৃথিবীর মানুষ চক্ষুষ্মান, কিন্তু বীরবলের ধারণা বিপরীত।

তাঁর মতে, মানুষ চক্ষুহীন। যুক্তি দিয়ে বীরবলকে তাঁর মত প্রমাণ করতে বললেন বাদশাহ।

বীরবল এক টুকরো কাপড় নিলেন। সেটি মাথায় জড়িয়ে বাদশাহকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কী?’

‘এটা একটা পাগড়ি,’ বাদশাহ বেশ নির্লিপ্তভাবেই তাঁর মত জানালেন।

বীরবল এরপর মাথা থেকে কাপড়ের সেই টুকরোটি সরালেন। তারপর গলার চারদিকে সেটাকে জড়ালেন। এবার তিনি বাদশাহ আকবরকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কী?’

‘এটা গলাবন্ধ,’ নিঃসংশয়ে বললেন বাদশাহ আকবর।

বীরবল এরপর কাপড়ের টুকরোটি খুলে-মেলে ঠিকঠাক করলেন। তারপর সেটাকে গুছিয়ে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এবার এটাকে কী বলবেন, বাদশাহ?’

‘চাদর,’ আকবরের স্পষ্ট জবাব।

বীরবল অবশেষে বললেন, ‘জাহাঁপনা, মানুষের চোখ আছে ঠিকই, কিন্তু আসল জিনিসটি তারা দেখতে পায় না।’

তিনি কাপড়ের টুকরোটি তুলে ধরে বললেন, ‘এটি একটি কাপড়ের টুকরো হলেও এটিকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। লোকে তাই এর বিভিন্ন নাম দিয়েছে। তারা বস্তুর স্বরূপ জানে না। সে কারণেই আমি তাদের অন্ধ বলি।’

বীরবলের যুক্তি অনুভব করলেন বাদশাহ এবং কোনো উত্তর দিতে না পেরে চুপ করে থাকলেন।

(সূত্র: আখতার হুসেনের সংকলন ও সম্পাদনায় প্রথমা প্রকাশনের রসের রাজা বীরবলের সেরা গল্প বই থেকে)