মার্কিন নির্বাচনের কিছু আকর্ষণীয় তথ্য

আগামী ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচন—হাতি–গাধার মুখোমুখি যুদ্ধ। অবশ্য এবার নতুন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগাম ভোট দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। এরপরও মূল লড়াইটা হবে নভেম্বরের ৩ তারিখেই। এর আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কিছু আকর্ষণীয় তথ্য...

১.

জানেন হয়তো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মঙ্গলবারেই হয়। নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পরবর্তী মঙ্গলবার ভোট নেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল ১৮৪৫ সালে। সেটি হয়েছিল দেশের কৃষকদের কথা ভেবে। সরকারি কর্তারা হিসাব করে দেখেছিলেন, ভোট দেওয়ার জন্য কৃষকদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে এক দিন সময় লেগে যায়। আবার রোববার ছিল গির্জায় প্রার্থনা করার দিন। এসব ভেবেই সোমবার বাদ দিয়ে মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের আনুষ্ঠানিক দিন ধার্য করা হয়।

২.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেকটোরাল ভোটে। ভোটারদের দেওয়া ভোট (পপুলার ভোট) সেখানে কখনো কখনো মূল্যহীন হয়ে যায়। দেখা গেছে, কোনো প্রার্থী হয়তো পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন, কিন্তু ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া হয়নি। ইতিহাসে এমন ঘটনা নেহাত কম ঘটেনি—মোট পাঁচবার। ২০১৬ সালের নির্বাচনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হারতে হয়েছিল হিলারি ক্লিনটনকে। এর আগে ২০০০ সালে একইভাবে আল গোর হেরেছিলেন জর্জ বুশের কাছে। এ ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটেছিল ১৮২৪ সালে। সেবার অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পপুলার ভোট বেশি পেলেও, ইলেকটোরালে জিতে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জন কুইন্সি অ্যাডামস। এ ছাড়া ১৮৭৬ সালে স্যামুয়েল টিলডেন ও ১৮৮৮ সালে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডেরও একই পরিণতি হয়েছিল। পপুলার ভোট বেশি পেয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি তাঁরা।

৩.

মাত্র ১৩ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দুই মেয়াদেই পূর্ণ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি চার মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অবশ্য এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনী আনার আগের ঘটনা। ওই সংশোধনীর পর এ পথ বন্ধ হয়ে যায়।

৪.

জো বাইডেন যদি ভোটযুদ্ধে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েই যান, তবে তিনি হবেন দেশটির সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। বাইডেনের বয়স এখন ৭৭ বছর। ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও এ ধরনের একটি রেকর্ড দখলে আছে। ২০১৬ সালে ৭০ বছর বয়সে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই সময় বয়সের হিসাবে সেটিই ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঘটনা। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ডটি আছে জন এফ কেনেডির দখলে। মোটে ৪৩ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

৫.

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ অপরিহার্য। এগুলো হলো—১. কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হবে, ২. কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে এবং ৩. জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক হতে হবে।

৬.

গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ছিলেন প্রথম নারী, যাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ভিক্টোরিয়া উডহাল। সেটি ছিল ১৮৭২ সালের ঘটনা। মজার বিষয় হলো, ওই সময় নারীদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকারই ছিল না। ১৯২০ সালে মার্কিন নারীরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পান।

৭.

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য মার্কিন রাজনীতিবিদেরা কত কাঠখড় পোড়ান! অথচ নির্বাচনের ঝক্কি কাঁধে না নিয়েই একজন দিব্যি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি হলেন জেরাল্ড ফোর্ড। কর্মরত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করায় ওই পদে বসেছিলেন ফোর্ড। ঠিক একইভাবে রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করায় ওই দায়িত্ব নিতে হয়েছিল ফোর্ডকে। এভাবেই নির্বাচিত না হয়েও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জেরাল্ড ফোর্ড।

৮.

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্ট হলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। তাঁর উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। আর সবচেয়ে খাটো প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেমস ম্যাডিসন। তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।

৯.

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্যাচেলর’ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন একজনই। তিনি হলেন জেমস বুকানন। ‘ডিভোর্সড’ প্রেসিডেন্টও কিন্তু আছেন। এই তালিকায় আছেন দুজন: রোনাল্ড রিগ্যান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এখন বিবাহিত হলেও, এর আগে দুবার তাঁর সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল।

১০.

যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ‘লাল’ ও ‘নীল’ প্রভেদ আছে। যেসব রাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক বেশি, সেটিকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’। আর যেসব রাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক বেশি, সেগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’।

১১.

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৮ প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয়েই। এর মধ্যে ৪ জন নিহত হন আততায়ীর হাতে। বাকি চারজনের মৃত্যু হয় অসুস্থতায়।

১২.

উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদানের হার অনেক কম। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেক নিচে। উন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট পড়ার হার ৬০ শতাংশের আশপাশে।

১৩.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মহাকাশ থেকেও ভোট আসে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কর্মরত মার্কিন মহাকাশচারীরাও নির্বাচনে ভোট দেন। তাঁদের কাছে ব্যালট পেপার পৌঁছে যায় ই-মেইলে। ১৯৯৭ সালে প্রথম চালু হয়েছিল ‘স্পেস ভোটিং’, যা এখনো চলছে।

তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ, মেন্টাল ফ্লস, হিস্ট্রি ডট কম, বিজনেস টুডে ডট ইন ও দ্য ইকোনমিক টাইমস