মৃত্যুর পর বেড়েছে যাঁর দাম

দেয়ালে ঝোলানো হচ্ছে ‘স্ট্রিট সিন ইন মোমাখত্’
রয়টার্স

এ বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের একটি চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হয়েছে। ‘স্ট্রিট সিন ইন মোমাখত্’ শিরোনামের ছবিটি ভ্যান গঘ এঁকেছিলেন ১৮৮৭ সালে, প্যারিসে পাড়ি জমানোর এক বছর পর। সেই প্যারিসেই ছবিটি বিক্রি হয় ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

স্ট্রিট সিন ইন মোমাখত্
ভ্যান গঘ মিউজিয়াম

ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স বলছে, প্যারিসের কোনো চিত্রশিল্পীর জন্য এটি একটি রেকর্ড। ২০১৭ সালেও এই ওলন্দাজ শিল্পীর একটি চিত্রকর্ম নিউইয়র্কে বিক্রি হয়েছিল ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

‘দ্য রেড ভাইনইয়ার্ড’ বিক্রি করে ভ্যান গঘ পেয়েছিলেন সামান্য কিছু টাকা
ভ্যান গঘ মিউজিয়াম

আলোচনা কিন্তু ভ্যান গঘের ছবির দামদর নিয়ে নয়, তাঁর দুর্ভাগ্য নিয়ে। মৃত্যুর পর তাঁর মূল্যায়নের কমতি নেই, কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে তাঁর শিল্পকর্ম। কিন্তু জীবদ্দশায় কেউ তাঁর খোঁজ রাখেনি। বেঁচে থাকতে মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন তিনি। ১৮৮৮ সালে আঁকা ছবিটির শিরোনাম ছিল ‘দ্য রেড ভাইনইয়ার্ড’। ঊনবিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ছবিটি বিক্রি করে ভ্যান গঘ পেয়েছিলেন মাত্র ৪০০ বেলজিয়ান ফ্রাঙ্ক। সেটিও বিক্রি হয়েছিল ভ্যান গঘের ভাই থিও ভ্যান গঘের চেষ্টায়।

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
সংগৃহীত

তবে প্রায় ৬০ বছর আগে শিল্পকলার ইতিহাসবিদ মার্ক এদো থারবু দাবি করেন, একটি নয়, ভ্যান গঘের জীবদ্দশায় কমপক্ষে দুটি ছবি বিক্রি হয়েছিল। এই দাবির সপক্ষে তিনি থিও ভ্যান গঘের একটি চিঠির কথাও উল্লেখ করেন; যেখানে ভ্যান গঘের দুটি চিত্রকর্ম বিক্রি করতে পারায় একটি শিল্পকর্ম বিক্রির প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

একটি বা দুটি—যা হোক, তা ভ্যান গঘের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজে আসেনি। তাঁর জন্ম ১৮৫৩ সালে নেদারল্যান্ডসে। ছোটবেলা থেকেই নামেন জীবনসংগ্রামে। ২৫ বছর বয়সে যাজক হন। তার দুবছর পর সিদ্ধান্ত নেন, চিত্রশিল্পী হবেন। তার আগেই যাজক হিসেবে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে চার্চ। ভ্যান গঘ মিউজিয়ামের সাবেক সংগ্রহপ্রধান শরার ফন হেউখটেন মনে করেন, ঘটনাটি ছিল ভ্যান গঘের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’।

মৃত্যুর পর ভ্যান গঘ আরও চর্চিত, আরও ‘দামি’
ভ্যান গঘ মিউজিয়াম

১৮৭২ সালে ভ্যান গঘ লন্ডনে যান। ১৮৭৪ সালে প্রথমবারের মতো যান প্যারিসে। ১৮৮৩ সাল থেকে পুরোদমে ছবি আঁকতে শুরু করেন। ১৮৮৬ সালে আবারও প্যারিসে যান। ১৮৮৮ সালে বাস করতে শুরু করেন ফ্রান্সের আল শহরে। গবেষকেরা মনে করেন, চিত্রশিল্পী হওয়ার পরও গঘের জীবনে স্বস্তি ছিল না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভাই থিওর পাঠানো অল্প কিছু অর্থের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে তাঁকে। এবং এ কারণে নাকি অপরাধবোধেও ভুগতেন ভীষণভাবে। আর আমৃত্যু ভুগেছেন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায়। অবশেষে বিষণ্নতায় ভুগে ১৮৯০ সালে নিজেই নিজের বুকে গুলি চালান। এর দুদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ত্যাগ করেন শেষনিশ্বাস।

সেই ভ্যান গঘকেই এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ইম্প্রেশনিস্ট-উত্তর চিত্রশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়। রং ব্যবহারে তাঁর বোধ এবং তুলির শক্তিশালী আঁচড় তাঁর ছবিগুলোকে করেছে চিরকালীন। তাঁর নামে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর।

তথ্যসূত্র: দ্য বাল্টিমোর সান, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, অ্যাসোসিয়েট প্রেস ও দ্য ন্যাশনাল গ্যালারি (ইউকে)