যুবকটি যেভাবে রাগ করে রাজকন্যা ও রাজত্ব হাতছাড়া করল

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

এক ছিল রাজা, তার ছিল একটাই মাত্র মেয়ে। রাজকন্যা এক কথায় অনন্যা। তাঁকে বিয়ে করার জন্য দশ রাজ্যের পাত্র এক পায়ে খাড়া বলা চলে। রাজকন্যার যখন বিয়ের বয়স হলো, রাজা তাকে বললেন, ‘এখন তো তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলো, তোমার কাকে পছন্দ। যাকে পছন্দ তার সঙ্গেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব।’

রাজকন্যা নিজের পছন্দের কথা জানাল না। বলল, ‘আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ, সবাই বলে তারা আমাকে ভালোবাসে। আমার জন্য প্রয়োজনে জান দিয়ে দেবে।’

রাজা চিন্তায় পড়ে গেলেন। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি বেরিয়ে এল। মেয়ের সঙ্গে আলাপ করে রাজা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, ‘প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতায় যে প্রথম হবে, আমার মেয়ে তাকেই বিয়ে করবে।’

প্রতিযোগিতার দিন দেখা গেল, শতাধিক যুবক সুন্দর পোশাকে পরিপাটি হয়ে রাজার বাড়িতে এসে উপস্থিত। রাজা সবাইকে বাড়ির বড় দীঘিতে নিয়ে গেলেন। দীঘির পাশে সবাইকে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘দেখো, প্রতিযোগিতা খুব সহজ। সাঁতার প্রতিযোগিতা হবে। সাঁতারে যে প্রথম হবে তার সঙ্গেই আমার মেয়ের বিয়ে দেব। তবে সুইমিংপুলে ঝাঁপ দেওয়ার আগে ভালো করে খেয়াল করো। পানির নিচে বহু কুমির অপেক্ষা করছে। আর এই কুমিরগুলোকে এক মাস ধরে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।’

এদিকে যুবকের রাগ তখনো কমেনি। উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছে। এক ঝটকায় রাজকন্যাকে দূরে ঠেলে দিয়ে যুবক চিৎকার করে উঠল...

রাজার কথা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল, এক যুবক পানিতে পড়ে চোখ বন্ধ করে হাত-পা নাড়ছে। কুমিরগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই যুবক ভাগ্যক্রমে কিছুক্ষণের মধ্যেই দীঘির ওপারে গিয়ে উঠেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই রাজকন্যা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল যুবককে। বিস্ময়াবিষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘তোমার মতো বীরকেই আমি চাইছিলাম। তুমিই আমার স্বামী হওয়ার উপযুক্ত।’

এদিকে যুবকের রাগ তখনো কমেনি। উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছে। এক ঝটকায় রাজকন্যাকে দূরে ঠেলে দিয়ে যুবক চিৎকার করে উঠল, ‘কোন বদমাশ আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিল, তাকে আগে দেখে নিই।’

রাজকন্যা ও রাজার সম্পদ ওই যুবকের হাতের মুঠোর চলে এসেছিল। ধাক্কা যে-ই দিক, সে দীঘি অতিক্রম করে সবার চোখে বিজয়ী বীর বলে গণ্য হয়েছিল, কিন্তু শুধু রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সৌভাগ্য এসেও তা হাতের নাগালের বাইরে চলে গেল। অথচ রাগ দমন করতে পারলে, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সে অনায়াসে মুচকি হেসে বলতে পারত, ‘পুরুষ তো আমি একাই, ওরা আবার পুরুষ নাকি!’

বি. দ্র.: খুঁজলে আপনিও হয়তো দেখতে পাবেন অনেক সুযোগ নষ্টের পেছনে আছে আপনার রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান। তাই সব সময় মনে রাখুন ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’।