যে মাস্কের দাম ১৫ লাখ ডলার

সোনা ও হীরা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফেস মাস্ক
ইভেল

করোনাকাল আজীবন থাকবে না। তবে সোনা ও হীরার তৈরি এই ফেস মাস্ক হয়তো রয়ে যাবে।

মাস্কটি তৈরির ফরমাশ জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চীনা ব্যবসায়ী। দাম পড়ছে ১৫ লাখ ডলার। এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে দামি ফেস মাস্ক বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৮ ক্যারেট সোনার মাস্কটি তৈরি করেছে ইসরায়েলি জহুরি অর্না এবং আইজ্যাক লেভির অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠান ইভেল। তাতে যুক্ত করা হচ্ছে মোট ২১০ ক্যারেটের ৩ হাজার ৬০৮ টুকরা হীরা।

আর কারিগরি দিকের কথা যদি বলা হয়, তবে সেটি এন-৯৯ ঘরানার। অর্থাৎ বায়ুবাহিত কণার অন্তত ৯৯ শতাংশ আটকে দেয় মাস্কটির ফিল্টার। এসব অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ক্রেতারই আবদার। তিনি বলেছিলেন, মাস্কটি সবচেয়ে দামি হতে হবে, আর জীবাণু দূরে রাখার বেলায় সবচেয়ে কার্যকরী হতে হবে। তৃতীয় আরেকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মাস্কটি এ বছরের মধ্যেই পৌঁছে দিতে হবে তাঁকে।

মাস্কের তিন অংশ। বাঁয়ে মাস্কের বাইরের হিরকখচিত আবরণ, মাঝে সোনার তৈরি কাঠামো আর ডানে পরিবর্তনযোগ্য এন-৯৯ ফিল্টার
ইভেল

মাস্ক তৈরির পরিকল্পনা ও নকশা করতেই মাসখানেক কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন আইজ্যাক লেভি। নিউজ পোর্টাল নোক্যামেলকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রথমেই নিশ্চিত করতে হয়েছে, ব্যবহারকারীর মুখে মাস্কটি যেন ঠিকঠাক লাগে এবং এন-৯৯ মাস্কের সব শর্ত পূরণ করে। প্রাথমিক মডেল তৈরি হয়ে গেলে শুরু হবে নকশার কাজ। আর সে কাজটিই আমাদের সবচেয়ে পছন্দের।

সব মিলিয়ে ২৫ জন জহুরি পালাক্রমে মাস্কটি তৈরিতে অংশ নেবেন বলে ইভেলের পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল। এরই মধ্যে বেশ সময় ব্যয় করেছেন তাঁরা। ডিসেম্বরে সরাসরি গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছা তাঁদের।

মাস্কটি ইসরায়েলে ইভেলের কারখানায় তৈরি হচ্ছে
ইভেল

মাস্কটির ক্রেতা ইভেলের দীর্ঘদিনের গ্রাহক। তাঁর এই ফরমাশ জানানোর একটি কারণ, দুঃসময়ে অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানটির পাশে দাঁড়ানো, তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া। মার্চের শুরুতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন দেড় শ কর্মী। আইজ্যাক লেভি বলেন, ‘তিনি ফরমাশ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করতে, ইভেলের কর্মীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। এটা সদিচ্ছার প্রকাশ। আমরা এখানে অত্যন্ত ধনী একজনের কথা বলছি, যিনি কেবল প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মীদের সমর্থন জানাতেই মাস্কটি তৈরির ফরমাশ দিয়েছেন।’

১৯৮৬ সালে অলংকার নকশা করা শুরু করে ইভেল। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লেখা আছে, যেখানে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান অলংকার তৈরি করে, তাতে হীরা বা মুক্তা বসানোর পরিকল্পনা করে, ইভেল সেখানে শুরুতেই হীরা বা মুক্তা নির্বাচন করে সে অনুযায়ী অলংকার তৈরি করে থাকে।

তৈরি হয়ে গেলে মাস্কটি দেখাবে এমন
ইভেল

বিশ্বের অনেক দেশেই বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এখন তো অনেক ক্ষেত্রেই মাস্ক ফ্যাশনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব দ্রুত যে আমরা মাস্ক থেকে রেহাই পাচ্ছি, সে সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ইভেলের মাস্কটি ভাইরাস ঠেকাতে অন্য মাস্কগুলোর তুলনায় ভালো কাজ করার কথা। তবে ২৭০ গ্রাম ওজনের মাস্ক মুখে লাগিয়ে রাস্তায় কেউ ঘুরে বেড়াবে বলে মনে হয় না। তার চেয়ে সেটি ধনকুবেরের সংগ্রহশালায় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।