সরকারি অফিসের পিয়ন

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

এক সরকারি অফিসে পিয়নের কাজ করে নিকিফরোভ। তাকে বলা হয়:

‘ফাইলটা নিয়ে যাও।’

সে নিয়ে যায়।

বলা হয়:

‘নিয়ে এসো।’

সে নিয়ে আসে।

একদিন তাকে ধমক দিয়ে বলা হলো:

‘এত দেরি হয় কেন?’

‘বদমাইশ!’ মনে মনে ভাবল সে। মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। ‘একদিন আমি তোমাদের মজা দেখাব, তখন ঠ্যালা বুঝবে!’

একদিন কয়েকটি ফাইল অন্য ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সময় একটা ফাইল সে ফেলে দিল ডাস্টবিনে।

সে রাতে প্রায় ঘুমাতেই পারল না নিকিফরোভ। জেগে জেগে মিষ্টি স্বপ্ন দেখল, কল্পনা করল, ফাইল হারানোর খবর ফাঁস হয়ে গেলে কী মজার কাণ্ডটাই না হবে!

কিন্তু পুরো একটা সপ্তাহ পার হয়ে গেল। কেউ মনেও করল না ফাইলটার কথা!

‘বোধ হয় একটি নয়, আরও কয়েকটি ফেলা দরকার ছিল’, ভাবল নিকিফরোভ।

এবং সুযোগ বুঝে গোটা দশেক ফাইল ডাস্টবিনে ফেলে দিল একবারে।

‘ঠ্যালা এবারে নিশ্চয়ই বুঝবে!’ আশ্বস্ত করল সে নিজেকে।

প্রতীক্ষার দিন বাড়তেই থাকল একের পর এক। প্রতিদিন সকালে সে একবার করে ঢুঁ মারে সেক্রেটারি ল্যুদার ঘরে।

‘কেমন আছেন?’ জিজ্ঞেস করে সে। ‘নতুন কোনো খবর আছে?’

‘কেন, কোনো খবর হওয়ার কথা আছে?’ অবাক স্বরে জানতে চায় ল্যুদা।

‘না, এমনিই জিজ্ঞাস করলাম,’ নিকিফরোভ উত্তর দেয়।

দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হয়ে আসতে আসতে রীতিমতো শুকিয়ে গেল সে; মলিন হলো চেহারা। তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে আর সহ্য হলো না তার। সুযোগ বুঝে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া সব কটি ফাইল ফেলে দিল ডাস্টবিনে।

‘এবার এমন ঠ্যালা খাবে বাছাধনেরা!’ নিশ্চিত ধারণা হলো তার।

তারপর পেরিয়ে গেল তিন-তিনটি বছর। তার সঙ্গে প্রভাতকালে প্রাত্যহিক সাক্ষাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ল্যুদা।

এই দীর্ঘ সময়ে নিকিফরোভ হাল ছেড়ে দিয়েছে খানিকটা। চুল কমে এসেছে মাথায়, ভাঁজ পড়েছে মুখের চামড়ায়। শুধু চোখে রয়ে গেছে আহত অহংকারের ঝিলিক।

‘ঠ্যালা একদিন বুঝবে! বুঝতেই হবে!’ অফিসের ফাইল নিয়মিত ডাস্টবিনে ফেলতে ফেলতে আশা তবু ছাড়ে না সে।

অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ