২৪ কোটি ডলার কি তিনি ফিরে পাবেন?

পাসওয়ার্ড মনে করার জন্য আর কেবল দুবার সুযোগ পাবেন স্টেফান থমাস। ভুল করলে খোয়াবেন ২৪ কোটি ডলার। সে পাসওয়ার্ডের সাহায্যে একটি ইউএসবি ড্রাইভ আনলক করবেন তিনি। যার ভেতরে রাখা আছে ডিজিটাল ওয়ালেটের গোপন চাবি। আর স্টেফানের ওই ডিজিটাল ওয়ালেটে আছে ২৪ কোটি ডলার মূল্যের সাত হাজারের বেশি বিটকয়েন।

বিটকয়েনের মূল্য হুট করে বেড়ে এখন কিছুটা পড়তির দিকে। তবু গতকাল রোববার বিকেলে প্রতি বিটকয়েনের বিনিময় মূল্য ছিল ৩৪ হাজার ৭৫৮ ডলার। সুতরাং স্টেফান থমাসের ৭ হাজার ২ বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার। টাকায় ২ হাজার ৭০ কোটি টাকার বেশি। স্টেফানের কেন দুশ্চিন্তা হবে না বলুন?

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার স্টেফান থমাসের জন্ম জার্মানিতে হলেও এখন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে। ২০১১ সালে ওই হাজার সাতেক বিটকয়েন তিনি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। ওই বছরই প্রথম প্রতিটি ৩০ মার্কিন সেন্ট করে বিটকয়েন বিক্রি শুরু হয়।

বিটকয়েন কী, তা নিয়ে লেখার অনেক কিছু আছে। সংক্ষেপে বলে রাখি, বিটকয়েন হলো ডিজিটাল মুদ্রা। গোপন কোড দিয়ে সুরক্ষিত থাকে বলে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ও বলা হয়। নগদ অর্থ আমরা যেমন ওয়ালেট বা মানিব্যাগে রাখি, ডিজিটাল অর্থ রাখার জন্য আছে ডিজিটাল ওয়ালেট। সে ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেট খুলতে হয় গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। আর লেনদেনের সময় এক ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি আরেক ডিজিটাল ওয়ালেটে স্থানান্তর করা হয়।

স্টেফান থমাস

হারিয়ে ফেলেন পাসওয়ার্ড লেখা কাগজ

স্টেফান থমাস তাঁর বিটকয়েনগুলো যে ডিজিটাল ওয়ালেটে রেখেছিলেন, সেটির গোপন পাসওয়ার্ড রেখেছিলেন ‘আয়রন-কি’ নামের এনক্রিপ্টেড ইউএসবি ডিভাইসে। আর আয়রন-কির পাসওয়ার্ড লিখে রেখেছিলেন এক টুকরো কাগজে। কাগজটি পরে তিনি হারিয়ে ফেলেন।

আয়রন-কি ড্রাইভ খুলতে গিয়ে দশবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে সেটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভেতরের কনটেন্ট ব্যবহারের সুযোগ আর থাকে না। যে ধরনের পাসওয়ার্ড সচরাচর স্টেফান ব্যবহার করেন, এখন পর্যন্ত সেগুলো আটবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ আর দুবার চেষ্টা করার সুযোগ পাবেন তিনি।

স্টেফান একা নন

বিদ্যমান ১ কোটি ৮৫ লাখ বিটকয়েনের প্রায় ২০ শতাংশ হয় হারিয়ে গেছে, নয়তো ব্যবহারকারীর ডিজিটাল ওয়ালেটে আটকা পড়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান চেইনালাইসিসের তথ্য অনুযায়ী, এই ২০ শতাংশ বিটকয়েনের মূল্য ১৪ হাজার কোটি ডলারের আশপাশে।

এখন চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ‘হারিয়ে যাওয়া’ বিটকয়েনের মালিকদের প্রায়ই হতাশার কথা বলতে শোনা যায়। যে সময় তাঁরা বিটকয়েন কিনেছিলেন কিংবা উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন, তখন কেউ ভাবেননি দামে এমন ঊর্ধ্বগতি দেখা যাবে একদিন। হয়তো সে কারণেই পাসওয়ার্ড মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি কিংবা নিজের স্মৃতিশক্তির ওপর বড় বেশি ভরসা করেছিলেন।

বিটকয়েনের অদ্ভুত প্রযুক্তি

অদ্ভুত প্রযুক্তিতে চলে বিটকয়েনের কারবার। চেক বইয়ের সই ভুলে গেলে ব্যাংকে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। পেপালের মতো ডিজিটাল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও হারিয়ে যাওয়া পাসওয়ার্ড ফিরে পাওয়ার অনেক ব্যবস্থা আছে। তবে বিটকয়েনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে নেই। ফলে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার দায়িত্বেও কেউ নেই।

সাতোশি নাকামোতো নামের কেউ বিটকয়েনের উদ্ভাবক। তিনি একবার জানিয়েছিলেন, বিটকয়েন তৈরির মূল কারণ ছিল বিশ্বের সবার হাতে এমন ব্যাংকিং ব্যবস্থা তুলে দেওয়া, যেটা কোনো দেশের সরকার যেন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সে কারণে অবশ্য দুর্বৃত্তদের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিটকয়েন। কারণ, নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই লেনদেন করা যায় ক্রিপ্টোকারেন্সিতে।

দুঃখ করে কী হবে

মজার ব্যাপার হলো, ‘বিটকয়েন কী’বিষয়ক ভিডিও বানানোর জন্যই ২০১১ সালে স্টেফান থমাসকে উপহার হিসেবে ৭ হাজার ২ বিটকয়েন দিয়েছিলেন শুরুর দিকের এক বিটকয়েন-ভক্ত। সে ভিডিও দেখে অনেকেই বিটকয়েন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলেন।

অবশ্য দুঃখে চুল টানাটানির মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি স্টেফানের। কারণ, এখনো দুবার পাসওয়ার্ড প্রবেশের সুযোগ আছে তাঁর। তা ছাড়া, সে বিটকয়েন হারিয়ে গেলেও এক জীবন পার করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট বিটকয়েন তাঁর সংগ্রহে আছে বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসকে।

সেই আয়রন-কি ড্রাইভ স্টেফান থমাস গোপন ও নিরাপদ কোথাও রেখেছেন। ক্রিপ্টোগ্রাফাররা কোনো দিন যদি জটিল পাসওয়ার্ড ভাঙার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন, তো সেটি আবারও বের করবেন বলে জানিয়েছেন। তা ছাড়া, দূরে কোথাও রাখার আরেকটি কারণ হলো, ও নিয়ে এখন আর ভেবে মাথার চুল ছিঁড়তে চান না তিনি।