আব্দুল মান্নান খানের পরাজয় নানা কারণে

আব্দুল মান্নান খান
আব্দুল মান্নান খান

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) আসনে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানের পরাজয় অনেককেই বিস্মিত করেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের কাছে তাঁর পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, হিসাব-নিকাশ।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে দলীয় প্রার্থী আব্দুল মান্নান খানের দূরত্ব সৃষ্টি, সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের লোভ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থকদের তৎপরতা, জাপার প্রার্থীর প্রতি স্থানীয় বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের ও শিল্পপতিদের সমর্থন এই ফলাফলের কারণ বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ ছাড়া বিজয়ী প্রার্থীর নিজ এলাকার (চুড়াইন) ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়াকেও অস্বাভাবিক বলেছেন অনেকে। পরাজিত প্রার্থীও এই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক জাল ভোট পড়ার অভিযোগ করেছেন।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মান্নান খান তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবদুল মান্নানকে ৩৪ হাজার ৪৪৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। এবার তিনি সালমা ইসলামের কাছে পাঁচ হাজার ৭০৫ ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
দলীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিপরীত অবস্থান: আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী মান্নান খানের বিপরীতে অবস্থান নেন। ওই নেতা-কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে ও প্রতিদ্বন্দ্বী সালমা ইসলামের (লাঙ্গল প্রতীক) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, দলের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেন মিয়া, ঢাকা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, নবাবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, আওয়ামী লীগপন্থী ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাবেক সাংসদ (১৯৭৩) খন্দকার হারুনুর রশিদ অনেকটা প্রকাশ্যেই লাঙ্গলের পক্ষ নেন।
দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদার, সহসভাপতি আলাউদ্দিন মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, দোহার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনারকলিসহ আরও কয়েকজন নেতা ও কর্মী মান্নান খানের পক্ষে কাজ করেননি। গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে দোহারের বিলাশপুরে আলাউদ্দিন মোল্লার বাড়িতে তাঁরা লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে বৈঠক করেন। দলের নেতা-কর্মীদের এমন অবস্থান দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
বিএনপি ও ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের অসমর্থন: সূত্র জানায়, নবাবগঞ্জের বাসিন্দা শীর্ষ একজন ব্যবসায়ী ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে নবাবগঞ্জের ১৪ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে সভা করেন। ওই সভায় লাঙ্গল প্রতীককে সমর্থন দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। নয়নশ্রী ইউপির চেয়ারম্যান ও নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পলাশ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচনের দিন নবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। বিশেষ করে কামারখোলা, মরিচপট্টি, গোবিন্দপুর, মুন্সিনগর ও চুড়াইন কেন্দ্রে।
সূত্র আরও জানায়, ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ও স্থানীয় সাবেক সাংসদ নাজমুল হুদা দোহারের শাইনপুকুরে নিজ বাড়িতে তাঁর অনুসারী বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন। দোহারে বাড়ি এমন একজন শিল্পপতিও সালমা ইসলামের পক্ষে কাজ করেন।
সালমা ইসলামের কাছের লোকজন নির্বাচনের আগে ও ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেছেন।
মান্নান খানের প্রতিক্রিয়া: পরাজয় নিয়ে আব্দুল মান্নান খানের প্রতিক্রিয়া জানতে গতকাল সোমবার যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে কালোটাকার ছড়াছড়িই তাঁর পরাজয়ের প্রধান কারণ। দলের কিছু অসৎ নেতা কালোটাকার প্রলোভনে মাঠে নেমেছিলেন। তিনি বলেন, বিলাসপুরের আলম বাজারে নির্বাচনের আগের দিনও ভোটার ধরে ধরে কালোটাকা বিতরণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী তা প্রতিহত করতে প্রশাসনকে নালিশ করেও ফল পায়নি। নবাবগঞ্জের অনেক এলাকায় নির্বাচনের আগের রাতেও অচেনা নম্বরের বড় বড় গাড়ি দেখা যায়, যেগুলো থেকে টাকা বিতরণ হয়েছে। তিনি চুড়াইনসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জাল ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ করেন।