বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হোক

নির্বাচনের পর ৩৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। আমরা আশা করব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে অধিকারের প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান সুবিদিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তারা বিষয়টি স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের গত পাঁচ বছরের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ছিল, এমন দাবি করা যাবে না।
এটা অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, অধিকার প্রধানত গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান দাবি করেছে। সে ক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘটনার ধরন। একটি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দুই ধরনের আচরণ দেখাতে পারে না। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বিমুখী আচরণ করেছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। লক্ষ করা যাচ্ছে, তাদের তরফ থেকে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও পুলিশ প্রশাসন নীরব রয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে যে সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, অতীতের চেয়ে তারা যদি ভালো কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তাদের বৈধতার প্রশ্ন জনগণের চিন্তাচেতনায় অপেক্ষাকৃত লঘু অভিঘাত সৃষ্টি করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও মনে রাখা দরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই দেশ ও আইনের প্রতি অঙ্গীকার থাকা উচিত। রাজনীতিতে যা কিছুই ঘটুক না কেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে তাঁরা প্রত্যেকেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে এবং বিশেষ করে আইন অনুযায়ী কর্তব্য পালন করতে বাধ্য। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যত দূর সম্ভব আইনের শাসনের নীতি সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবেন। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কিংবা সংসদ থেকে কোনো ধরনের চাপ বা জবাবদিহির তোড়জোড় না থাকা আর গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া এক কথা নয়।
অধিকারের প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৯ জনের মধ্যে ১১ জন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৫ জন জামায়াত-শিবিরের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই রাজনৈতিক কর্মী। অবশিষ্টরা সাধারণ কথিত অপরাধী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্বাচনোত্তর হামলা সম্পর্কেও অধিকারের প্রতিবেদনে অতীতে এ ধরনের হামলার ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়া এবং সেই ঘটনাগুলোর রাজনৈতিকীকরণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সার্বিকভাবে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে; যা কাম্য নয়। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়াই আইনের শাসনের পূর্বশর্ত।