সুবিধা যথেষ্ট, অভাব রোগীর

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর প্রায় দুই বছর পার হলেও রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর ভিড় নেই। সাধারণ মানুষের একটি অংশের ধারণা, হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর, এখানে তাদের চিকিৎসা হবে না। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করে, রিকশার সুবিধা নেই বলে নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগী এখানে আসে না।
গত শনিবার সকাল নয়টায় বিমানবন্দর সড়কে হোটেল র‌্যাডিসনের উল্টো দিকের এই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে আটটি গাড়ি, দুটো স্কুটার ও দুটো রিকশা। রোগী বা রোগীর সঙ্গে আসা মানুষের ভিড় কম। যারা এসেছে, তারা খুশি। কারণ, এত নিরিবিলি পরিবেশ, এত শৃঙ্খলা তারা সরকারি হাসপাতালে দেখতে পায় না।
হাসপাতালে ঢুকতেই ‘এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে নিজে আসুন এবং অন্যকে আসতে উৎসাহিত করুন’ লেখা পোস্টার চোখে পড়ে। নিচতলায় চারটি টেবিলের সামনে সেবা নিতে আসা শ খানেক মানুষের সারি। ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বহির্বিভাগের চিকিৎসকের কাছে চলে যাচ্ছে তারা।
নিচতলায় টিকিট কাউন্টারের সামনে বসে থাকা মোহাম্মদ নাসির সরদার জানালেন তিনি কচুক্ষেত থেকে এসেছেন। বললেন, ‘একটাই সুবিধা যে এখানে রোগীর চাপ কম। টিকিট কিনতে, ডাক্তার দেখাতে হুড়াহুড়ি, ঠেলাঠেলি নেই।’
উত্তর কাফরুল থেকে মফিজুর রহমান ছেলে মোক্তার হোসেনকে চিকিৎসা করানোর জন্য এনেছেন। মফিজুর জানালেন, গত দেড় বছরে তিনি দুবার এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। ‘পরিবেশটি খুবই সুন্দর’ মন্তব্য করে এই প্রবীণ বলেন, ‘এটা যে সরকারি হাসপাতাল, সাধারণ মানুষের হাসপাতাল—এ কথা দেশের সব মানুষকে জানানো দরকার।’
২০১২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ শয্যার এই সরকারি হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। তার আগে এখানে চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুরে দেখা গেছে, দশতলা এই হাসপাতালের পাঁচতলা পর্যন্ত ব্যবহার হচ্ছে। ষষ্ট থেকে দশম তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজসহ নানা কাজ বাকি।
বহির্বিভাগে স্ত্রীরোগের জন্য নির্ধারিত চারটি কক্ষের একটির সামনেই শুধু রোগীর সারি দেখা যায়। যক্ষ্মা সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি জানান, দিনে চার-পাঁচজন থুতু পরীক্ষার জন্য আসেন। শুধু বহির্বিভাগ নয়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েও দেখা যায় শয্যা ফাঁকা।
তবে রোগী দিন দিন বাড়ছে দাবি করলেন হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন। এটা যে সেনাবাহিনীর হাসপাতাল নয়, আর পাঁচটি সরকারি হাসপাতালের মতো সাধারণ মানুষ তা ধীরে ধীরে জানতে পারছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পরিচালকসহ হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তার ধারণা, চাহিদামতো সেবা দিতে না পারার কারণেও অনেকে চিকিৎসা নিতে আসছে না।
পরিচালক জানান, অস্ত্রোপচারের জন্য অবেদনবিদ খুবই জরুরি। হাসপাতালে অবেদনবিদ আছেন দুজন। তাঁরা সপ্তাহে এক দিন এক বিভাগে কাজ করতে পারেন। সপ্তারের বাকি দিনগুলো ওই বিভাগে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচার সেবা দিতে না পারলে অন্তর্বিভাগে ভর্তি বাড়বে না।’
প্রধানমন্ত্রী ৫০০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন করলেও জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩০০ শয্যার। তবে হাসপাতালে চালু আছে ২০০ শয্যা। শনিবারে রোগী ভর্তি ছিল ১২৯ জন (পুরুষ ৪২ ও নারী ৮৭)।
হাসপাতালে আসার মূল সড়কটিতে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তবে হাসপাতালের পেছন দিক দিয়ে রিকশায় আসার একটি পথের ব্যবস্থা করেছেন বলে পরিচালক জানান। তবে সাধারণ মানুষ এ পথের ব্যাপারে জানে না। বাস স্টপেজ হাসপাতাল থেকে একটু দূরে। হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা বাস স্টপেজ হাসপাতালের আরও কাছে এবং বিমানবন্দর সড়কের বিভাজক হাসপাতালের মূল ফটকের কাছে উন্মুক্ত করার কথা বলেছেন।