চলছে গাড়ি হাওয়ার বেগে

চীন থেকে আনা ডেমু ট্রেন চলাচল করছে নগরের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে। ছুটির দিনে অনেকেই পরিবার নিয়ে ডেমুতে চড়ে নগরে ঘোরার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না, সৌরভ দাশ
চীন থেকে আনা ডেমু ট্রেন চলাচল করছে নগরের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে। ছুটির দিনে অনেকেই পরিবার নিয়ে ডেমুতে চড়ে নগরে ঘোরার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না, সৌরভ দাশ

পুরোনো রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি ঝকঝকে একটি ট্রেন। সামনে দাঁড়ানো কৌতূহলী লোকজন। যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। ট্রেনের এ পাশ-ও পাশ, চালকের কামরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। মুঠোফোনে ট্রেনের ভিডিওচিত্র ধারণও করছিলেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রামে চালু হওয়া ডেমু (ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের কৌতূহলের শেষ নেই। চট্টগ্রাম নগর এবং চট্টগ্রাম-লাকসাম রুটে চালু হয়েছে ডেমু ট্রেনের কমিউটার সার্ভিস।

শুক্রবার ছুটির দিন। তাই বিকেল বেলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ডেমুতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি অনেকেই। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফৌজদারহাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। তখনো হাতে আছে মিনিট দশেক সময়। কয়েকজন যাত্রী উঠছেন মালামাল নিয়ে। দেখে দূরের যাত্রীই মনে হলো। কিছুক্ষণ পর চালকের কামরা থেকে লাউড স্পিকারে ঘোষণা এল, ‘লাকসামের কোনো যাত্রী থাকলে অনুগ্রহ করে নেমে পড়ুন।’ তখন ওই যাত্রীরা নেমে পড়লেন। অর্থাৎ, তাঁরা ছিলেন লাকসামের যাত্রী। ভুল করেই নগর রুটের ট্রেনে উঠেছেন।

যাত্রীদের মধ্যে বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজ। আগ্রাবাদ থেকে আসা আমীর পারভেজ ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছিলেন। বললেন, ‘ডেমু ট্রেনের কথা শুনেছি। কিন্তু দেখা হয়নি। আজ নিজের চোখেই দেখতে এসেছি। পরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসব, তাই ভিডিও করে নিচ্ছি ওদের দেখানোর জন্য।’

ট্রেনের ভেতরে সামনাসামনি আসন পাতা। কোনো শ্রেণীবিন্যাস নেই। মাঝখানে হাঁটাচলার পথ। আবার দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে হাতল। বেশ খোলামেলা। পাখা চলছে। তবু গরমের দাপট ছিল।

ট্রেনের ভেতরে চলছিল যাত্রীদের নানা গুঞ্জন। ব্যবসায়ী তাসনিম শাহরিয়ার বললেন, ‘শহরের মধ্যে অন্তত ছুটির দিনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেশ ভালো। ভাড়াও কম।’ কিন্তু অন্য যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছুটির দিন ছাড়া ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা এখনো কম। এভাবে বেশি দিন ট্রেনটি টিকিয়ে রাখাও রেলওয়ের জন্য কঠিন হবে।

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে চারটা ছুঁয়েছে আর অমনি নড়েচড়ে উঠল কমিউটার ট্রেনটি। বাতাসের বেগে চলতে শুরু করল সাঁই সাঁই করে। সামান্য সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি করল কয়েকটি স্টেশনে। পাহাড়তলী স্টেশনে যাত্রীর চাপ থাকায় একটু বেশি দাঁড়াতে হয়েছে। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছিল। এর মধ্যে বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে ট্রেন। বিকেল সোয়া পাঁচটা নাগাদ পৌঁছে যায় ফৌজদারহাট। কেউ নেমেছেন, কেউ বসেছিলেন একই গাড়িতে ফেরার আশায়। আবার ফিরতি পথ ধরল গাড়ি।

চট্টগ্রাম-ফৌজদারহাট রুটের ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। স্টেশনে টিকিট কাটার প্রয়োজন পড়ে না। ট্রেনের ভেতরেই টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে ফৌজদারহাট রুটে দুবার চলাচল করে এই ট্রেন। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সকাল আটটা ১০ মিনিটে এবং বিকেল চারটা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-লাকসাম রুটে প্রতিদিন এক জোড়া ট্রেন চলাচল করে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছাড়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এবং লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ভোর পাঁচটা ৫০ মিনিটে। এ রুটের জনপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা।

গত ২৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামে চালু হয়েছে ডেমু। চীন থেকে আমদানি করা এসব ট্রেন সার্কুলার ও কমিউটার ট্রেন হিসেবে চলাচল করছে। চট্টগ্রাম-ফৌজদারহাট রুটে চলাচলকারী ট্রেনটি চিটাগাং সার্কুলার ট্রেন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর অপরটির নাম দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-লাকসাম কমিউটার ট্রেন। প্রতিটি ডেমু ট্রেনে তিনটি করে কোচ রয়েছে। একসঙ্গে ৩০০ জন যাত্রী বহন করতে পারে। গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।