হোয়াট ইজ লাভ?

হোয়াট ইজ লাভ?
হোয়াট ইজ লাভ?

অনন্ত জলিলকে আমি একটা কারণে শ্রদ্ধা করি, কে কী বলে, তা তিনি কানেও নেন না। ছবির শুরুতে পর্দায় নাম ভাসতে লাগল। ভেসে উঠল অনন্তর নিজের নাম। নামের শুরুতে যথারীতি সুপারস্টার অনন্ত জলিল বসাতে ভুল করেননি, ব্রাকেটে ‘এজে’ লেখাটাও ছিল। তার পরই ভেসে উঠল ‘গ্ল্যামারাস বর্ষা’ নামটাও। বর্ষার প্রতি অনন্তর ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ শাহজাহানকেও ছাড়িয়েছে।

ছবিতে বর্ষা খুব গরিব ঘরের মেয়ে। বর্ষার জন্য তাঁর বাবা ‘শাকপাতা’ আনতেন রাঁধতে। বর্ষার মা সুচরিতা প্রতিদিন শাকপাতা খেতে অস্বীকৃতি জানান এবং এতে সংসারে ভাঙনের সূত্রপাত হয়। ত্রাতা হিসেবে ছোট বর্ষা এসে বলে, ‘বাবা, আমি শাকই খাব, তবু মাকে তুমি মেরো না।’ সেবারের মতো সংসার বেঁচে যায়। শাকপাতা খেয়ে জীবন যাপন করেন তাঁরা।

আবির্ভাব ঘটে দাদু রাজ্জাকের। নৈতিক আদর্শে গড়ে তোলেন বর্ষাকে। এদিকে মডেল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বর্ষা। অনন্ত জলিল তখন বিশাল স্টার। অনন্তর ছবি নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খান বর্ষা, দুষ্টু বর্ষা। এমন সময় অনন্ত জলিল ‘ডাকাইয়া স্মার্ট বয়’-সংক্রান্ত একটি তাত্ত্ব্বিক গানের অবতারণা করেন। গান শেষে বর্ষা পান অনন্তর ফোন নম্বর।

ফোন নম্বর পাওয়ার ১০ থেকে ২০ সেকেন্ডের ভেতর একটা ছ্যাড়াব্যাড়া লেগে যায়। প্রথমে অনন্তর অফিসে গিয়ে বর্ষা বলেন, ‘ওয়াও, এত্ত বড় অফিস!’ অনন্ত একটি হাসি দেন। তারপর বর্ষাকে দেন একটি গাড়ির চাবি, তাঁর চলাফেরার জন্য। বর্ষার সঙ্গে মডেল হতেও রাজি হন অনন্ত। বর্ষাকে একটা ফ্ল্যাটও দিয়ে দেন। দুপুরের খাবার আয়োজন করেন বর্ষা। একপর্যায়ে অনন্তকে মুখে তুলে খাইয়েও দেন। আবার নিজের আঁচল দিয়ে মুখও মুছিয়ে দেন। বলা বাহুল্য, তাঁদের ভেতর তখনো কোনো ‘সম্পর্ক’ তৈরি হয়নি। দর্শক ভ্যাবাচ্যাকা খায়। অনেক দর্শক চিপস খায়। অনেকে কোক।

তবে খানিক বাদেই একটি গানের মাধ্যমে বর্ষার সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় অনন্ত জলিলের। এর পরের পর্বগুলো বর্ষার ভুল আর অনন্তর মাফবিষয়ক কাহিনিতে ভরপুর। বর্ষা মডেল হতে গিয়ে ‘কিঞ্চিৎ পানাহার’ করে ছ্যাড়াব্যাড়া। সেই সময় তাঁকে বাঁচান অনন্ত। বর্ষা অনন্তকে ‘ছ্যাঁকা’ দিয়ে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। আবারও মাফ করে দেন অনন্ত। বর্ষা সবার শেষে মিশা সওদাগরের জালে বন্দী হন। ঠিক ওই সময় অনন্ত একতলা একটা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। যখন লাফ দেবেন, তখন তাঁর আইফোন বেজে ওঠে। ছবিতে অনন্তর কাছে কমপক্ষে ৫০০ বার ফোন আসে।

ক্লাইম্যাক্স সিন, মারামারি শেষ। প্রচণ্ড আহত অনন্ত। তারপর হয় একটা প্রচণ্ড মিরাকল, অনন্ত জলিল খাবলা মেরে নিজের হূৎপিণ্ড টান দিয়ে বের করেন! হাতে হূৎপিণ্ড নিয়ে অনন্ত আবেগাক্রান্ত ডায়লগ দিচ্ছেন। একটু লক্ষ করে দেখলাম, হূৎপিণ্ডে অনন্তের ছবি। আমি এই ক্ষেত্রে দেশের কার্ডিয়াক সার্জনদের মুভিটি দেখার অনুরোধ করব। জীবনে শেখার কোনো শেষ নেই।

হঠাৎ মিশা গুলি করেন বর্ষাকে লক্ষ্য করে। ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন জলিল। গুলি খেয়ে চালের পানি ঝরানোর ঝাঁজর হয়ে যান অনন্ত। বাট রিমেমবার, জলিল নেভার ডাই, আর মরলেও ডাই এনাদার ডে। এরপর কয়েকটা শট—রাস্তায় গাড়ি চলা বন্ধ, পোশাক কারখানা বন্ধ, বন্ধ দোকানপাট। মোট কথা পুরো দেশই স্তব্ধ! দেশবাসী হাত তুলে দোয়া করে অনন্তর জন্য। একসময় দোয়া কবুল হয়, অনন্ত বেঁচে যান। ডাক্তার বের হয়ে বলেন, ‘জীবনে বহুত মিরাকল দেখেছি, কিন্তু এমন মিরাকল দেখিনি।’

সিনেমা শেষ, অনন্ত তার পরও ভালোবেসে যান বর্ষাকে।

একেই বলে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা: হোয়াট ইজ লাভ।