ট্রাম্পের আমেরিকায় বুধবারের সকাল

নিউইয়র্কের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। শুরু হয়েছে আজ বুধবারের একেবারে অন্য রকম দিন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সকাল অনেকটাই ফাঁকা। শেষ রাত পর্যন্ত উত্তেজনা নিয়ে জেগে থাকা মার্কিনরা কাজে বের হচ্ছেন। জয়-পরাজয়ের আলোচনা চলছে সবখানে। বিলাপটা প্রকাশ্যে। উল্লাসটা চাপা।

নিউইয়র্ক থেকে এক শ মাইল মহাসড়কে গাড়ি চালিয়ে দেখা গেল অনেকই অবাক বিস্ময়ে দেখছেন ট্রাম্পের আমেরিকা।
হিলারি বিজয়ের প্রত্যাশায় শেষ ঘোষণা পর্যন্ত জেগেছিলেন মার্কিন বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি আকবর। পেশায় দোকান কর্মচারী এ অভিবাসীর চোখে-মুখে বেদনার ছাপ। তিনি বললেন, যে দেশ কৃষ্ণাঙ্গ ওবামাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল, সে দেশের প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প তাঁর বিজয়ী ভাষণে বলেছেন, তিনি গোটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁর এ কথায় সংশয় যায়নি নিউজার্সির ইয়াসমিন হকের। এই স্কুলশিক্ষিকা বললেন, নিজের ১২ বছর বয়সী মেয়েকে হিলারির জন্য কাঁদতে দেখেছেন। স্কুলে নামিয়ে দেওয়ার সময় বলেছেন, ‘মা, আমি হয়তো দেখে যেতে পারব না। তুমি হয়তো একদিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট দেখে যেতে পারবে। এই আমার প্রত‌্যাশা।’
নিউজার্সির দক্ষিণের শহর টামস রিভারে গরম কফি নিয়ে স্বাগত জানালেন শ্বেতাঙ্গ বার্ট ভেলন্টানি। উষ্ণ করমর্দনের পর জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আবার প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা দল কানা নন। ডেমোক্রেটিক পার্টি বা রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে ভোট দেননি, ভোট দিয়েছেন নিজের ইচ্ছায়। তাঁর মতে, এতে করে মানুষের ইচ্ছার জয় হয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। তিনি বলেন, আব্রাহাম লিংকের যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য দেখে বিশ্ববাসী মুগ্ধ। আশা করি, ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সৌন্দর্য ধরে রাখতে শেষ সম্বলটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন। আমেরিকা যখন একটি গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তখন ট্রাম্পেরই দরকার ছিল বলেই মার্কিনরা তাঁকে নির্বাচিত করেছেন।
বুধবার সকালে জেগে ওঠা সন্তানদের কীভাবে বলা হবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন—হিলারি সমর্থকদের এ নিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলাতে। বলা হচ্ছে, রাজনীতিটা অন্য যেকোনো খেলার জয়-পরাজয়ের মতো, এ কথাগুলো সন্তানদের বোঝাতে হবে। তাদের বলতে হবে, আদর্শ এবং লড়াইয়ের সংগ্রামের জন্য তারা একা নয়, নিজেদের অধিকার এবং আদর্শের জন্য চলমান লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়।
হিলারি সমর্থক অনেককেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্কুলে যেতে দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশি এলাকাগুলোতে দেখা গেছে হতাশার চাপ। এর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার মানুষের মতো নানা আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন তাঁরা এবং বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে দেখা গেছে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মতো আজ সকাল সাতটায় ৩২ পৃষ্ঠার একটি বুলেটিন বের করা হয়েছে। বুলেটিনটির নাম ‘মুক্তিবার্তা ২৪ ডটকম’। এর সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগরকে প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিবার্তা ২৪ ডটকম একটি অনলাইন ভার্সন। প্রথমবারের মতো নির্বাচনী উত্তেজনায় শামিল হতে এটিকে মুদ্রিত আকার বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির ঐতিহাসিক এই দিনে বাংলা ভাষার সংবাদ বুলেটিন বের করার অর্থ সবাইকে জানান দেওয়া, বাংলাদেশিরাও আছে, বাংলা ভাষাও আছে এ দেশের সব নাগরিকের পাশে।