যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় লাদেনের ছেলে হামজা

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের ছেলে ও উত্তরাধিকারী হামজা বিন লাদেনকে সন্ত্রাসীদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকায় হামজা বিন লাদেনকে ‘বিশেষ বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ বলা হয়েছে। এর আগে হামজার সৎভাই সাদকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, কুড়ি বছরের বেশি বয়সী হামজা বিন লাদেন ২০১৫ সালে আল-কায়েদার সদস্য হন। তাঁকে তার বাবার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে ধরা হয়। সদস্য হওয়ার পর থেকেই তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর রাজধানীতে হামলা চালানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে আসছেন। এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ‘হামজা বিন লাদেন সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবাদে জড়িত।’

সন্ত্রাসীদের কালো তালিকায় থাকার অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক হামজার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আওতার মধ্যে থাকা হামজার সব সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা যাবে।

ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে গোপন আস্তানায় মার্কিন নৌবাহিনীর এক কমান্ডো অভিযানে নিহত হন। ওই আস্তানা থেকে উদ্ধার করা কিছু নথি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন ২০১৫ সালে প্রকাশ করে। ওই নথিতে বলা হয়, হামজা ৯ / ১১ হামলার আগে আফগানিস্তানে তাঁর বাবার পক্ষে লড়াই করেছিলেন। এরপর আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসন যখন লাদেনসহ অনেক জ্যেষ্ঠ আল-কায়েদা নেতাকে পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দেয়, তখন হামজা বাবার সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যান। সেখান থেকে ইরানে যাওয়ার পর সেখানে তিনি গৃহবন্দী হন। ২০১০ সালে গৃহবন্দী থেকে মুক্ত হয়ে তিনি আত্মগোপন করেন।
আল-কায়েদার বর্তমান প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি ২০১৫ সালে এক অডিও বার্তায় বিশ্বব্যাপী জঙ্গিদের অনুপ্রাণিত করার জন্য হামজাকে তরুণ নেতৃত্ব বলে পরিচয় করিয়ে দেন।

‘হামজা আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন, জনপ্রিয়’
হামজা সাবেক আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন এবং খাইরিয়া সাবেরের সন্তান। ২০১১ সালে অ্যাবোটাবাদে কমান্ডো অভিযানে লাদেন নিহত হওয়ার দিনে তার এক স্ত্রীকে আটক করা হয়। ওই দিন হামজা পাকিস্তানের ওই আস্তানায় ছিলেন না। লাদেন নিহত হওয়ার পরই আল-কায়েদার নেতৃত্ব পান আয়মান আল জাওয়াহিরি।
গত বছরের আগস্টে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফায়াজ জর্জেজ বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেন, হামজা ‘আল-কায়েদার নতুন মুখ, তিনি সহজাত ও আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন। তিনি আল-কায়েদা সদস্যদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।’ ফায়াজ জর্জেজ আরও বলেন, ‘হামজা ছিলেন তার বাবার প্রিয় পুত্র। হামজা তার বাবার উত্তরাধিকার হবেন—গত ১০ বছর ধরে এ কথাই বলা হচ্ছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হামজা বিন লাদেনকে ‘বিশেষ বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ নেতা হিসাবে ঘোষণা দিলেও তাঁর সর্বশেষ অবস্থান বা কোনো ছবি প্রকাশ করেনি।