ট্রাম্পের দেয়ালে ব্যয় ২১৬০ কোটি ডলার, সময় সাড়ে ৩ বছর

ক্যালিফোর্নিয়ার জাকুম্বা শহরের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বেড়া। ছবিটি গত বছরের ১৪ নভেম্বর তোলা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ক্যালিফোর্নিয়ার জাকুম্বা শহরের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বেড়া। ছবিটি গত বছরের ১৪ নভেম্বর তোলা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নির্বাচনের আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে তিনি দেয়াল নির্মাণ করবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচিত হলে তিনি ওই দেয়াল নির্মাণ করবেনই। ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিন পরই বলেছেন, ওই দেয়াল নির্মাণের ব্যয় মেক্সিকোকেই দিতে হবে। এখন ওই কাঁটাতারের বেড়া ও দেয়াল নির্মাণে কত দিন সময় লাগবে এবং এই বিশাল কর্মযজ্ঞে কত অর্থ ব্যয় হবে তার হিসাব দিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জুলিয়া এডওয়ার্ড অ্যাইনসলের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত ‘দেয়াল’ নির্মিত হবে কাঁটাতারের বেড়া ও দেয়ালের সমন্বয়ে। আর এতে খরচ হবে ২ হাজার ১৬০ কোটি ডলার। এই দেয়াল নির্মাণে সময় লাগতে পারে সাড়ে তিন বছরের মতো। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার এমন অনুমান করা হয়েছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ওই অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে দেয়াল নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ট্রাম্পের দাবির চেয়ে অনেক বেশি। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। হাউস স্পিকার পল রায়ান ও সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছিলেন, এতে ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে। খুব শিগগিরই এই প্রতিবেদনটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান জন কেলিকে দেওয়া হবে। তবে এ প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ীই যে দেয়াল নির্মিত হতে হবে, তা কিন্তু নয়।

ওই পরিকল্পনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ হাজার ২৫০ মাইলের (২০০০ কিলোমিটার) এই দেয়াল পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে নির্মাণ করে সীমান্ত সিল করা হবে। এই পুরো নির্মাণকাজ শেষ করতে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত লেগে যাবে।
মেক্সিকো সীমান্তে ৬৫৪ মাইল (১০৪৬ কিলোমিটার মি) ইতিমধ্যে শক্তিশালী বেড়া-দেয়াল আছে। নতুন এই দেয়াল নির্মিত হলো পুরো সীমান্ত সিল করা যাবে।

তবে এ ব্যাপারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, যেহেতু প্রতিবেদনটি এখনো প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছায়নি, তাই এ ব্যাপারে এখন মন্তব্য করার কোনো সময় আসেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে দেয়ালটি ছোট হবে। ২৬ মাইল বা ৪২ কিলোমিটারের ওই দেয়াল ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো থেকে টেক্সাসের এল পাসো হয়ে টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ড ভ্যালি পর্যন্ত তৈরি করা হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ইসাইড্রোতে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর তিজুআনা সীমান্তকে বিভক্ত করে এই বেড়া দেওয়া হয়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রয়টার্স
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ইসাইড্রোতে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর তিজুআনা সীমান্তকে বিভক্ত করে এই বেড়া দেওয়া হয়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রয়টার্স

প্রতিবেদনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অনুমান করেছে, আগামী এপ্রিল বা মে মাসে কংগ্রেস থেকে তহবিল পেতে পারে। এরপরই ঠিকাদার নিয়োগ করে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, দেয়াল নির্মাণে কংগ্রেসের অনুমোদন দেওয়া উচিত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে মেক্সিকোকে। তবে মেক্সিকো বলে দিয়েছে, তারা এর জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করবে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

সীমান্তে ১৮ ফুট উঁচু ইস্পাতের বেড়া রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যকার সীমান্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ মাইল। যার মধ্যে অনেক এলাকা খালি, ধুলোময় মরুভূমি, ঘন সবুজ ঝোপঝাড়, রিও গ্রেনেড নদীকে ঘিরে উঁচু-নিচু পথ। তবে দীর্ঘ এই সীমান্তের মধ্যে এখন প্রায় ৬৫০ মাইল জায়গায় ছাড়া ছাড়া অবস্থায় বেড়া দেওয়া আছে। কোথাও কোথাও আবার কংক্রিটের স্ল্যাব ও অন্যান্য অবকাঠামো দিয়ে ঘেরা। ট্রাম্প বলেছেন, এক হাজার মাইলজুড়ে হবে এ দেয়াল। আর বাকিটা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিরাপদ থাকবে।

নিউইয়র্কভিত্তিক স্ট্রাকচারাল প্রকৌশলী আলী এফ রুজখান ন্যাশনাল মেমো নামের একটি আর্টিকেলে লিখেছেন, দেয়াল হিসেবে অবশ্যই কংক্রিট বেশি জুতসই। ট্রাম্পের মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১ হাজার ৯০০ মাইল দেয়াল করতে হলে প্রায় ৩৩৯ মিলিয়ন কিউবিক ফুট কংক্রিট লাগবে, যা হোভার বাঁধ তৈরির সময় লাগা কংক্রিটের তিন গুণ।

রুজখান এই হিসাব করেছেন দেয়ালটিকে মাটির নিচে ৫ ফুট আর ওপরে ২০ ফুট হিসাব করে। কিন্তু ট্রাম্পের হিসাবে দেয়ালের উচ্চতা ৩০ ফুট থেকে ৫৫ ফুট হতে পারে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। আর এটি যদি হয়, তাহলে কংক্রিটের পরিমাণ আরও ব্যাপক হারে বাড়বে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পরিবহন খরচ, নির্মাণকর্মীদের খরচসহ নানা ধরনের ব্যয়।