হ্যারি-মেগানের সাতকাহন

মেগান মার্কলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে প্রিন্স হ্যারি। ছবি: টেলিগ্রাফ
মেগান মার্কলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে প্রিন্স হ্যারি। ছবি: টেলিগ্রাফ

বাগদানের খবর প্রকাশের পর বিবিসির মুখোমুখি হলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের পঞ্চম উত্তরসূরি প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কল। আগামী বসন্তে তাঁদের বিয়ে। ২০১৬ সাল থেকে দুজনের মন দেওয়া-নেওয়া চলছে। চলতি মাসের শুরুতে গোপনে তাঁদের বাগদান হয়।

কেমন তাঁদের মধুর সম্পর্ক? তা নিয়ে জানা যাক সাতকাহন।

খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে ছিলাম

এই প্রেমিক যুগল দুবার দেখা করার পর একসঙ্গে ছুটিতে যান। প্রথম দেখা হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রিন্স হ্যারি বতসোয়ানায় তাঁর সঙ্গে সফরে যেতে মেগানকে রাজি করান। হ্যারি বলেন, ‘রাতের খোলা আকাশের নিচে আমরা তাঁবুতে ছিলাম। তখন আকাশে তারারা জ্বলজ্বল করছিল। এরপর মেগান সেখানে পাঁচ দিন ছিল। পুরো সময়টা ছিল সত্যি অসাধারণ। চিরাচরিত রাজপরিবারের চাপ থেকে অনেক দূরে থাকায় দুজনের সঙ্গটা ছিল খুব উপভোগ্য।

বাগদানের আংটির নকশাকার হ্যারি

প্রিন্স হ্যারি চেয়েছেন তাঁর প্রিয়তমার আংটিটি যেন শুধু নিজেদের থাকে। তাই নিজেই নকশা করেছেন আংটিটির। মেগানের পছন্দ অনুযায়ী সোনার আংটি বানানো হয়। মাঝখানে ছিল বতসোয়ানা থেকে আনা হীরা, যেখানে তাঁরা প্রথমবারের মতো মধুর এক সময় কাটিয়েছেন। হীরার দুই পাশে দুটি পাথর বসানো রয়েছে। এগুলো হ্যারি তাঁর মা ডায়নার কাছ থেকে পেয়েছেন। বাগদানে প্রিন্সেস ডায়ানাকে জুড়ে রাখা তাঁদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল—এই যুগল সাক্ষাৎকারে সে কথা বলেছেন।

মেগান বলেন, ‘তাঁর (হ্যারি) মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনিও যে এই বাগদানে আমাদের সঙ্গে আছেন, এটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রিন্স হ্যারি বলেন, ‘মা যদি থাকত, তবে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হতো। মায়ের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হতো মেগানের। সেই রাতে মাকে খুব মনে পড়ছিল।’

যখন দেখা হলো, কেউ কিছু জানতেন না

মেগান মার্কল বলেন, যেহেতু তিনি মার্কিন নাগরিক, তাই যুক্তরাজ্যে ট্যাবলয়েডগুলো তাঁকে তেমন টানত না। এর ফলে প্রিন্স হ্যারির সম্পর্কে কিছু জানতেন না তিনি। তাই হ্যারির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে তাঁর সম্পর্কটি গড়ে ওঠে। অন্যদিকে প্রিন্স হ্যারি মেগানের অভিনীত টিভি সিরিজ ‘সুটস’ কখনো দেখেননি। ওই নাটকে জেন চরিত্র দিয়েই মেগান পেয়েছেন খ্যাতি। এমনকি তিনি কখনো মেগানের নামও শোনেননি। হ্যারি বলেন, ‘অচেনা দুটি মানুষ আমরা যখন প্রথম অভিসারে গেলাম, তখন দুজন দুজনকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। আমি যখন একটি ঘরে ঢুকে তাকে দেখলাম, মনের মধ্যে খুব সুন্দর অনুভূতি হয়েছিল। আর ভাবলাম, আমাকেও তার যোগ্য হতে হবে।’

অভিনয় ছেড়ে দেবেন মেগান

বিয়ের পর আর অভিনয় করবেন না মেগান। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি না। এটাকে আমি একটি পরিবর্তন ও নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখতে চাই।’
কথা বলতে বলতে প্রিন্স হ্যারির দিকে ঘুরে বসে মেগান বলেন, ‘দুজনে মিলে একটি দলের মতো কাজ করার সময় এখন।’ তাঁরা দম্পতি হিসেবে নিজেদের নতুন দায়িত্বের, বিশেষ করে মানবিক দিকের ওপর জোর দেন। কারণ, জনহিতকর কাজের মধ্য দিয়ে তাঁদের বন্ধন তৈরি হয়েছিল। প্রিন্স হ্যারি বলেন, ‘মেগান খুব সহজেই রাজপরিবারের সদস্য হয়ে উঠবে এবং তারা একটি “চমৎকার দল” হবে।’

হাঁটু গেড়ে প্রস্তাব
এক নির্জন রাতে দুজনে মিলে বাড়িতে মুরগি রোস্ট করছিলেন। আচমকা মেগানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন হ্যারি। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মেগান বলেন, ‘সেই রাতটি ছিল খুব সুখের...একটি মুরগি রোস্ট করার চেষ্টা করছিলাম...এমন সময় এই বিস্ময়।’
মেগান বলেন, ‘বিষয়টি ছিল খুব হৃদয়গ্রাহী ও বেশ আবেগপ্রবণ। সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁকে হ্যাঁ বলে সম্মতি জানাই। আমি তাকে বলি, হয়েছে, এবার থামো। এরপরই বলি, আমি কি তোমাকে এখন হ্যাঁ বলতে পারি?’

মেগানকে পছন্দ করেছে রানির কুকুর

মেগানের দুটি কুকুর রয়েছে। এদের একটি এখন তার সঙ্গে লন্ডনে আছে। প্রিন্স হ্যারি বলেন, যখন দাদি রানি এলিজাবেথের সঙ্গে মেগানের দেখা হয়, তখন রানির কুকুরগুলো সরাসরি তাঁর কাছে চলে আসে। হ্যারির ভাষ্য, ৩৩ বছর ধরে কুকুরগুলো তাকে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করেছে। অথচ মেগানকে দেখে সুড় সুড় করে তাঁর কাছে চলে আসে এবং লেজ নাড়তে থাকে।
মেগান বলেন, ‘যখন চা খাচ্ছিলাম, তখন করগিস আমার পায়ের কাছে শুয়ে পড়ে। খুব মিষ্টি লাগছিল তখন।’

এখনই সন্তানের কথা ভাবছেন না হ্যারি

হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটন তৃতীয় সন্তানের অপেক্ষায় আছেন। এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে হ্যারি বলে বসেন, ‘ঠিক এখনই আমাদের সন্তান নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এ সময় হাসছিলেন মেগান।’ প্রিন্স বলেন, ‘এখন আমরা একটি ধাপে রয়েছি, আশা করছি, শিগগিরই আমরা সংসারজীবন শুরু করব।’

৩৩ বছর বয়সী রাজকুমার হ্যারির চেয়ে তিন বছরের বড় মেগান মার্কল। দুজন দুজনকে প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে আলোচনার জন্ম দেন। ৬ মে ইংল্যান্ডের এসকটে দাতব্য কাজের তহবিল গঠনের জন্য পোলো ম্যাচের আয়োজন করা হয়। নাম অডি পোলো চ্যালেঞ্জ। সেটা দেখতে কোওয়ার্থ পার্ক পোলো ক্লাবের মাঠে যান হ্যারি ও মেগান। খেলা চলাকালে দুজনকে খুব উৎফুল্ল দেখা যায়। তাঁরা বেশ আনন্দ করছিলেন। পছন্দের দলকে উজ্জীবিত করতে তাঁদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। খেলা শেষে প্রিন্স হ্যারি প্রকাশ্যে চুমু খান মেগানকে। ক্যামেরায় ধরা পড়া দুজনের এই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছবিগুলো ভাইরাল হয়।