মিয়ানমারের সেনাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার চায় অ্যামনেস্টি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গাদের গ্রামের স্যাটেলাইট দৃশ্য (বাঁয়ে)। ধ্বংসস্তূপ ও ছাইভস্মের চিহ্নও এবার বুলডোজার দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। ছবি: এইচআরডব্লিউ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গাদের গ্রামের স্যাটেলাইট দৃশ্য (বাঁয়ে)। ধ্বংসস্তূপ ও ছাইভস্মের চিহ্নও এবার বুলডোজার দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। ছবি: এইচআরডব্লিউ

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত’ হামলার নেতৃত্ব দেওয়ায় দেশটির সেনাপ্রধান ও শীর্ষস্থানীয় অন্য কর্মকর্তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এ অভিযোগ এনে তাঁদের বিচারের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান।

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবাধিকার সংস্থাটির জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ অভিযোগ আনা হয় বলে এএফপির খবরে জানানো হয়।

রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও সহিংসতার কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ভয়াবহ ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

১৮৬ পাতার এ প্রতিবেদনে অপরাধের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে অভিযোগের বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হলেও তাঁরা দেননি। এএফপিও এ ব্যাপারে মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চাইলে কোনো উত্তর আসেনি।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪০০ জনের নেওয়া সাক্ষাৎকার ও স্যাটেলাইট ইমেজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা মুসলিম জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। এরা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়।

পুড়িয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের গ্রাম। এএফপি ফাইল ছবি
পুড়িয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের গ্রাম। এএফপি ফাইল ছবি

অ্যামনেস্টির এই নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং ও ১২ জন জ্যেষ্ঠ সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা ও দমন অভিযানে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে এ দমন অভিযান পরিচালনা করা হয়। সে সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আইনবহির্ভূতভাবে শিশুসহ কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে।’

এই প্রথম কোন কোন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নৃশংসতায় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যৌন নির্যাতন, সহিংসতা, জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ রোহিঙ্গাদের বাজার ও ফসলি জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের অনাহারে থাকতে হয়েছে এবং তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

প্রতিবেদনে ‘এই অপরাধগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।’

কিছু কিছু সেনা আইন ভেঙে এমনটা করতে পারে বলে সামরিক বাহিনী এত দিন ধরে যে দাবি করে আসছিল, তা এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘এই অপরাধগুলো কোনো দুর্বৃত্তের বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া সেনারা করেছে এমনটা নয়।’