ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্য উত্তাপ আরও বেড়েছে

ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাজ্য, ১৩ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাজ্য, ১৩ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর ঘিরে এমনিতেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল লন্ডন। তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে হট্টগোল আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার লন্ডনে পৌঁছেই রাতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভোজসভায় অংশ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিজাত ওই ভোজসভার আনন্দঘন পরিবেশে অতিথিরা যখন মশগুল, তখনই খবর বের হয়-ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাঁর কথা শোনেননি। থেরেসার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘনিষ্ঠতার সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে।

যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার আগে দেশটির ‘দ্য সান’ পত্রিকাকে ব্রাসেলসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাতেই ট্রাম্পের ওই সাক্ষাৎকার অনলাইনে প্রকাশ করে দ্য সান।

সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের সদ্য পদত্যাগী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে বেশ পছন্দ করেন। বরিস প্রধানমন্ত্রী হলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কাজটি ভালো করতে পারতেন।

কাকতালীয়ভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনের দিনই ইইউর সঙ্গে ব্রেক্সিট-উত্তর সম্পর্কের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাকে ঘিরে দেশটির সরকারে চরম অস্থিরতা চলছে। ব্রেক্সিট-বিষয়কমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনসহ পাঁচজন পদত্যাগ করেন। এমন উত্তাপের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই সব মন্তব্য তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকদের অনেকেই ট্রাম্প সীমা লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ব্রেক্সিটপন্থী কয়েকজন এমপি ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। আর কোনো ধরনের মন্তব্য থেকে নীরব থেকেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।

সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও লন্ডন মেয়র সাদিক খানকে অযাচিত ও বিদ্বেষমূলক আক্রমণ করেছেন। লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা এবং অপরাধ সংগঠনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মেয়র সাদিক খান বেশ ‘বাজে কাজ’ করছেন।

ট্রাম্প এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রে বসেই সাদিক খানের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি সেসবে খুব একটা পাত্তা দেননি। শুক্রবার সাদিক খান ট্রাম্পের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের উচিত তাঁর পেছনে কেন লাগলেন সেটি ব্যাখ্যা করা। কারণ বিশ্বের আরও অনেক শহরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ট্রাম্প সেসব নিয়ে অন্য কোনো মেয়র বা নেতাকে এককভাবে দায়ী করেননি, যেটি সাদিক খানের বেলায় বারবার করছেন।

লেবার দলের আরেক এমপি ডেভিড লামি ট্রাম্পকে সরাসরি একজন ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ট্রাম্প সাদিক খানের পিছে লেগে থাকার কারণ হলো-‘লন্ডনবাসী একজন মুসলিমকে মেয়র নির্বাচিত করেছে, এটি ট্রাম্প মেনে নিতে পারছেন না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা। যুক্তরাজ্য, ১৩ জুলাই। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা। যুক্তরাজ্য, ১৩ জুলাই। ছবি: এএফপি

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমন ঘিরে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া বিক্ষোভের আকার শুক্রবার আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। ট্রাম্পের প্রতিকৃতি সদৃশ বিশাল ‘শিশু বেলুন’টি (বেবি ব্লিম) এদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চত্বরে ওড়ানো হয়। ওয়েস্টমিনস্টার, ট্রাফালগার স্কয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে শামিল হয়। তাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী ও মানবতাবিরোধী আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। যুক্তরাজ্য সফরে আসা কোনো বিদেশি নেতার বিরুদ্ধে এমন তীব্র বিক্ষোভের ঘটনা বিরল।

ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নেওয়া দ্য সানের সাংবাদিক টম নউটন ডুন বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাজ্যের মানুষ তাঁকে নিয়ে যা ভাবছেন সে সম্পর্কে অবগত আছেন ট্রাম্প। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে বলে মনে হয়েছে তাঁর।

এতসব হট্টগোলের মধ্যে শুক্রবার দুপুরে থেরেসা মে বাকিংহামশায়ারে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কান্ট্রি হাউস চেকারসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক করেন। ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য। সে কারণে ট্রাম্পের এই বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে থেরেসা মে’র সরকার। বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্কের’ প্রশংসা করেছেন। কিন্তু মানুষ ট্রাম্পের কোন বক্তব্য সঠিক বলে ধরে, সেটাই বড় বিপাকের।