দুঃখ-ভালোবাসায় ভরা ম্যান্ডেলার চিঠিগুলো

নেলসন ম্যান্ডেলা ও উইনি ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলা ও উইনি ম্যান্ডেলা

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা নির্জন দ্বীপের কারাগারে কাটিয়েছেন ২৭ বছর। দিনের হিসাবে ১০ হাজার ৫২ দিন। এ সময় পরিবারের কাছে লিখেছেন অনেক চিঠি। কোনোটি হয়তো স্বজনের হাতে পৌঁছেছে, কোনোটি আটকে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাই বেশির ভাগ চিঠির খসড়া রেখে দিতেন নিজের কাছে। এমন ২৫৫টি চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দ্য প্রিজন লেটারস অব নেলসন ম্যান্ডেলা বইটি। এসব চিঠির বেশির ভাগ আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি।

১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলা যখন কারাগারে যান, তখন বয়স ৪০ পার করেছেন। ১৯৬৯ সালে ম্যান্ডেলা তাঁর স্ত্রী উইনিকে লেখা চিঠিতে ‘গ্রামের সাধারণ মেয়ে’ বলে সম্বোধন করেছেন। পরে অবশ্য সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা উইনিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি।   ১৯৭০ সালে উইনিকে নিয়ে দেখা স্বপ্নের কথা লিখে রাখেন ম্যান্ডেলা। লিখেছেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম, তুমি হাওয়াই নাচ নাচছিলে।’ ১৯৮১ সালে লিখেছেন, ‘ছোট্ট উপত্যকায় তোমাকে হারিয়ে ফেলি। তবে কটেজে ফিরে তোমাকে পেলাম। সেটা আমার সহকর্মীতে ভরপুর। কিছুতেই আর একান্ত সময় কাটাতে পারলাম না তোমার সঙ্গে!’

কারাবন্দী থাকার সময় ম্যান্ডেলার মা মারা যান। তবে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। নির্জন কারাগারে বসে মায়ের কথা মনে করে তিনি লেখেন, ‘তোমাকে আর কোনো দিন দেখতে পাব না! ভাবতেই পারছি না।’ এই শোক কাটাতে না কাটাতেই ম্যান্ডেলা টেলিগ্রাম পান, তাঁর ২৪ বছরের ছেলে থেম্বি (প্রথম স্ত্রী ইভলিনের সন্তান) গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ১৯৬২ সালে তিনি লিখেন, ‘মৃত্যুর সময় আমার একটি প্যান্ট পরে ছিল সে। সেটা তার বড়ই হওয়ার কথা। তার যথেষ্ট কাপড়চোপড় ছিল। আমার কাপড় পরার কোনো কারণ ছিল না। তবু সে পরেছিল। এই যে আবেগ, এটা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে আমার অনুপস্থিতি, আমার কারাগারে থাকা, সন্তানদের ওপর কী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল; তা আমার মনকে উত্তাল করে দিল।’