মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের প্রতীক কিশোরী আহেদ

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আহেদকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার এক স্বজন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আহেদকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার এক স্বজন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি দুই সেনার গালে চড় মেরে ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠা কিশোরী আহেদ তামিমি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আট মাস পর আজ রোববার কারাগার থেকে একসঙ্গে মুক্তি পান আহেদ ও তাঁর মা। এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

১৭ বছরের আহেদ ও তাঁর মাকে সকালে ইসরায়েলের শ্যারন কারাগার থেকে গাড়িতে করে পশ্চিম তীরের সীমান্তবর্তী তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আহেদের বাড়ি পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে।

কারাগারের মুখপাত্র আসাফ লিবরাতি বলেন, তাদের ইসরায়েলি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তাদের স্বাগত জানাতে পরিবারের সদস্য ও সমর্থকেরা তল্লাশিচৌকিতে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বহনকারী সেনাবাহিনীর গাড়িটি সেখানে না দাঁড়িয়ে পশ্চিম তীরের দিকে চলে যায়।

আহেদের বাবা এক হাতে মেয়েকে, অন্য হাতে স্ত্রীকে ধরে রেখেছেন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
আহেদের বাবা এক হাতে মেয়েকে, অন্য হাতে স্ত্রীকে ধরে রেখেছেন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

সেনাদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাস্তার পাশে জড়ো হওয়া হাজারো জনতা ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে আহেদ বলেন সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। সেখানেই কথা হবে।

আহেদের বাবা বাসেম এক হাত দিয়ে মেয়েকে অন্য হাতে স্ত্রীকে ধরে রাখেন। তারা যখন পথে ধরে হাঁটছিলেন তখন চারপাশ থেকে ‘আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই’ স্লোগান ওঠে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেছে। এমনকি এই মা-মেয়েকে কোন তল্লাশি চৌকি দিয়ে আনা হবে- তা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে।

প্রথমে বলা হয়েছিল আহেদ ও তার মাকে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর তুল্করাম শহরের কাছের একটি তল্লাশি চৌকি দিয়ে আনা হবে। কিন্তু তাদের কোন তল্লাশি চৌকি দিয়ে আনা হবে তা তিন তিনবার পরিবর্তন করা হয়।

আহেদকে স্বাগত জানাতে রানতিস তল্লাশি চৌকির কাছে অপেক্ষায় ফিলিস্তিনের লোকজন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
আহেদকে স্বাগত জানাতে রানতিস তল্লাশি চৌকির কাছে অপেক্ষায় ফিলিস্তিনের লোকজন। পশ্চিম তীর, ২৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

গত বছরের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনি মানুষ। কারণ, পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে চায় তারাও। এ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ, সেই প্রতিবাদ থামাতে ইসরায়েলের দমন-পীড়ন-সব মিলিয়ে সংঘাতের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত আর দশটা ফিলিস্তিনির মতো মেনে নিতে পারেনি কিশোরী আহেদ তামিমিও। পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে নিজেদের বাড়ির সামনে ইসরায়েলের সেনাদের দেখে নিজেকে আর সংযত করতে পারেনি সে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথমে মেয়েটি ইসরায়েলি সেনাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলে। চিৎকার করতে থাকে। সেনারা তাকে সরে যেতে বলে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। একপর্যায়ে এক ইসরায়েলি সেনার গালে চড় মারে কিশোরী আহেদ।

তারই বান্ধবী মোবাইলে দৃশ্যটি ভিডিও করে। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে দুই শিবিরে দুই রকম আগুন ধরায়। ফিলিস্তিনিদের দেয় সাহস আর ইসরায়েলিদের করে বিভ্রান্ত, অপমানিত, ক্রুদ্ধ ও লজ্জিত। স্বয়ং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই কিশোরীর সাহসের প্রশংসা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সমর্থকেরা তার প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয়।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অংশে একটি দেয়ালে আহেদ তামিমির ছবি আঁকছেন এক বিদেশি চিত্রশিল্পী। বেথলেহেম, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অংশে একটি দেয়ালে আহেদ তামিমির ছবি আঁকছেন এক বিদেশি চিত্রশিল্পী। বেথলেহেম, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

বর্ণবাদীরা ১৬ বছরের এক ফিলিস্তিনি বালিকার স্পর্ধা দেখে ক্ষুব্ধ হয়। কেন তিন ইসরায়েলি সেনা চড় খেয়েও গুলি না করে ফিরে এল, তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়। পরদিন ওই তিন সেনাকে দুর্বলতা দেখানোয় প্রত্যাহার করা হয় আর রাতে আহেদ তামিমি ও তার এক চাচাতো ভাইকে তুলে এনে বন্দী করা হয় কারাগারে। পরের দিন বাড়িতে হানা দিয়ে তছনছ করে সব। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পুলিশ স্টেশনে গেলে মা নারিমান আল তামিমিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনকে পাঠানো হয় কারাগারে। গত মার্চে মুক্তি পায় আহেদের চাচাতো ভাই।

পশ্চিম তীরের সঙ্গে সীমান্তবর্তী দেয়ালে আহেদের ছবি আঁকার কারণে গতকাল শনিবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দুই ইতালিয়ান ও এক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করে।