মালয়েশিয়া সৌদি অর্থায়নে চলা সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্র বন্ধ করে দিল

কেএসসিআইপির লোগো
কেএসসিআইপির লোগো

উদ্বোধনের ১৩ মাস যেতে না যেতে মালয়েশিয়ার সরকার দেশটিতে থাকা সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। কী কারণে তা করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। শুধু সেন্টারই বন্ধ নয়, সৌদিতে থাকা মালয়েশিয়ার সেনাদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু।

২০১৭ সালের মার্চে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ কুয়ালালামপুরে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এটি দ্য কিং সালমান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস (কেএসসিআইপি) বলে পরিচিত। কুয়ালালামপুরে অস্থায়ী অফিস থেকে এর কর্মকাণ্ড চলছিল। রাজধানী পুত্রজায়াতে এর স্থায়ী ভবনের যাওয়ার কথা ছিল।

আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, নির্দেশ পাওয়ার পর সেন্টারের কাজ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু গত সোমবার জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্রের ওপর নজরদারি করবে মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি।

সেন্টারটি বন্ধের কোনো কারণ সাবু না বললেও উদ্বোধনের সময়কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন বলেছিলেন, আইএসসহ সশস্ত্র বাহিনীর ছড়িয়ে দেওয়া ‘সহিস চরমপন্থা’ রুখতে এই সেন্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সৌদি আরব থেকে সেনা প্রত্যাহার
সাবু পার্লামেন্টকে বলেন, সৌদি আরব থেকে মালয়েশিয়ার বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। গত জুনে সৌদি আরবে থাকা মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এক পর্যালোচনায় সাবু বলেছিলেন, এর মাধ্যমে ‘পরোক্ষভাবে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে ঢুকে যাচ্ছে’।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (বাঁয়ে) ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ছবি কেএসসিআইপির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (বাঁয়ে) ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ছবি কেএসসিআইপির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

২০১৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সৌদিতে থাকা মালয়েশিয়ান নাগরিকদের ইয়েমেনে যেতে সহায়তা করতে সেখানে বাহিনী পাঠিয়েছিল।

মালয়েশিয়ার কত সেনা সৌদিতে আছে, তা নিশ্চিত নয়। সাবু বলেন, সৌদি ও আমিরাতের জোট যেখানে ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে, সেখানে মালয়েশিয়ার সেনারা কখনো ইয়েমেনের ওপর কোনো হামলায় অংশ নেয়নি।

নাজিব রাজাকের সময় মালয়েশিয়ার প্রতি সৌদি আরবের সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বিষয়টিতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।

এরই মধ্যে সৌদি আরব মালয়েশিয়ায় কয়েকটি স্কুল ও মসজিদ নির্মাণ করেছে। এমনকি সৌদি আরবে পড়তে আগ্রহী মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ঘোষণা করেছে।

গত মে মাসের জাতীয় নির্বাচনে নাজিবের দল ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে ধরাশায়ী হয়। এরপর থেকে নতুন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা, বিশেষ করে ওয়ানএমডিবি দুর্নীতি নিয়ে জোরেশোরে তদন্ত শুরু হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (এমএসিসি) তদন্তকারীরা বেশ কয়েক দফায় নাজিবের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ, অলংকারসহ ২৭ কোটির বেশি মার্কিন ডলার মূল্যমানের সম্পদ জব্দ করেছে। এ ছাড়া নাজিব, তাঁর স্ত্রী রোসমাহ মনসুর এবং নাজিবের সৎছেলে রিজা আজিজকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সর্বশেষ ওয়ানএমডিবি দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে ৪০৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে কর্তৃপক্ষ।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ জুলাই নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।